Skip to content
Home » ইহুদি জাতির ইতিহাস PDF Download | আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ

ইহুদি জাতির ইতিহাস PDF Download | আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ

ইহুদি জাতির ইতিহাস pdf download আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ ihudi jatir itihas

যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

লেখক : আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ
প্রকাশনায় : ছায়াবীথি
বিষয় : ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্য
সম্পাদক : মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক
পৃষ্ঠা সংখ্যা: 328, কভার : হার্ড কভার
রিভিউ লেখকঃ Zakaria Minhaz

গুগল বলছে ২০২৩ সালের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুয়ায়ী পৃথিবীতে ইহুদী ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১৬ মিলিয়ন তথা ১ কোটি ৬০ লাখ। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২%। এদিকে আমরা যদি বিভিন্ন শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য নোবেল বিজয়ীদের তালিকার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই সেখানের প্রায় ২০% বিজয়ী ইহুদী। এমন অল্প সংখ্যক জাতি বা ধর্মের মানুষদের মধ্যে এতো প্রতিভাবান মানুষ কেনো? এই প্রশ্নটা করেছিলাম আমার এক আত্মীয়কে, যিনি একজন মাওলান। উনিজবাব দিয়েছিলেন, কারন তারা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বেহেশতের খাবার খেয়েছে! এরপর মাথায় আরো কিছু প্রশ্ন জন্ম নেয় ইহুদীদেরকে নিয়ে। কেনো এই জাতিটাকেই আমাদের পবিত্র কোরআনে মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে ঘোষনা করার পর তাদেরকে আবার অভিশপ্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে? কেনো হিটলারের মতো বিশ্বের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে শুধুমাত্র এই একটা জাতির উপর সবাই আঘাত করতে চেয়েছে? ফিলিস্তিন নিয়েই বা এতো কাড়াকাড়ি কেনো? আর এই সবকিছুর উত্তর বাংলায় জানার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের এই বইটার বিকল্প চোখে পড়েনি আমার।

শুরুতেই বলে নেই বেশ লম্বা পোস্ট হতে যাচ্ছে। যাদের ইতিহাস, বিশেষ করে ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ নেই তারা এড়িয়ে যাবেন দয়া করে। এই ধরণের বইয়ের আসলে রিভিউ হয় না। আমি শুধুমাত্র পুরো বইয়ের বিভিন্ন কন্টেন্টের গল্পগুলো সম্পর্কে একদম মূল কাহিনীর কিছু অংশ জানিয়ে যাবো। এর বাইরেও বইয়ে আরো অনেক কিছু আছে, যেগুলো বিস্তারিত জানতে চাইলে বইটা পড়ার বিকল্প নেই। আর লেখক এই বইটা লেখার ক্ষেত্রে ৩টি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন, বাইবেল এবং তাওরাতের পাশাপাশি বিভিন্ন তাফসির, মিদ্রাশ, লোককাহিনীর আশ্রয় নিয়েছেন রেফারেন্স হিসাবে। যেগুলো প্রতিটা কাহিনীর সাথে সাথেই জানিয়েও দিয়েছেন কোন অংশটুকু কোন জায়গা থেকে লিখেছেন। এমনকি যেসব ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত সত্যের ইতিহাস পেয়েছেন, সেগুলাও উল্লেখ করেছেন।

Download Now

দুই খন্ডে প্রকাশিত এই সিরিজটার নাম “পবিত্র ভূমির ইতিহাস“। এই রিভিউর বই তথা প্রথম খন্ডে আলোচনা করা হয়েছে যীশু খ্রিস্টের জন্মের আগ পর্যন্ত ইহুদি জাতির ইতিহাস নিয়ে।

বইয়ের শুরুতে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় ‘ইহুদী’ শব্দের সাথে। কিভাবে ইহুদী থেকে ইংরেজিতে Jew শব্দ এলো তা হিব্রু, আরবী এবং গ্রীক শব্দের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। ইহুদী বলতে আমরা ধর্মীয় পরিচয় বুঝলেও এটা আসলে একটি জাতিগত পরিচয়৷ ইহুদীদের মাঝে কেউ নাস্তিক হলেও তাই তাকে ‘ইহুদী’ হিসাবেই সম্বোধন করা হবে।

একেশ্বরবাদের প্রচারক ইব্রাহিম (আঃ) এর দুই পুত্র ছিলেন ইসমাইল (আঃ) এবং আইজ্যাক তথা ইসহাক (আঃ)। ধর্মীয় ইতিহাস অল্প বিস্তর পড়ে যা বুঝলাম, এই দুই পুত্রের বংশধরদের থেকেই মূলত ইহুদী এবং মুসলিম নামের দুই ধর্মের উৎপত্তি ঘটেছে। ইসমাইল (আঃ) হয়ে আমাদের নবীজী (সাঃ) এর জন্ম অনেক অনেক পরে হয়েছে। এই বইটায় অপর পুত্র ইসহাক (আঃ) এর বংশ থেকে শুরু হওয়া ইহুদী জাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইসহাক (আঃ) এর ছিলো দুই পুত্র ঈস এবং ইয়াকুব তথা জ্যাকব।

Download Now

তাওরাতে বর্ণিত এক ঘটনা থেকে জানা যায়, কিছু কারনে পিতা ইসহাক (আঃ) পুত্র ইয়াকুব (আঃ) এর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এতে করে সেই পুত্র তৎকালীন ‘বীরশেবা‘ অঞ্চল থেকে বের হয়ে ‘হারান‘ নামের অঞ্চলের দিকে রওনা করেন। পথিমধ্যে এক সন্ধ্যায় তিনি ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখেন যে পৃথিবী থেকে একটা সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে, যেটা দিয়ে আল্লাহর ফেরেশতারা উঠানামা করছে। এই স্বপ্নে আল্লাহ তাঁকে জানান যেখানে তিনি শুয়ে আছেন সেই ভূমি তিনি তাঁকে এবং তার বংশধরদেরকে দিবেন। আর এই স্বপ্ন এবং আল্লাহর দেয়া কথা অনুসারেই হাজার হাজার বছর পরের আজকের এই পৃথিবীতেও ইহুদীরা ফিলিস্তিনকে নিজেদের কব্জায় নেয়ার জন্য রক্তপাত চালিয়ে যাচ্ছে। কারন তাদের মতে এটা তাদের “প্রমিজড ল্যান্ড”। আর কথাগুলো কোরআনেও রয়েছে। প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি আসলেই ফিলিস্তিনদের সেখানে মার খাওয়াটা যৌক্তিক? এই স্বপ্নের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে হাজার হাজার বছর, আর সেই সময়ে ঘটেছে আরো অনেক অনেক কাহিনী। মূলত বইতে হাজার বছরের এই ইতিহাসটাই তুলে এনেছেন লেখক। প্রশ্নের উত্তরের ভারটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন পাঠকের চিন্তাভাবনার উপর।

আরও পড়ুনঃ সিক্রেটস অব জায়োনিজম বই PDF রিভিউ Secrets of Zionism Bangla

যাইই হোক উপরের তথ্যগুলো আমি এই বই থেকেই জেনেছি। আরো জেনেছি কিভাবে ইয়াকুব (আঃ) এর নাম ইসরাইল (আঃ) দেয়া হয় আর সেখান থেকেই আজকের ইসরাইল রাজ্যের নামকরন। এই ফাঁকে বলে রাখি হিব্রু ভাষায় ইসরাইল শব্দের আক্ষরিক অর্থ “আল্লাহর জয় হয়“। ইন্টারেস্টিং না? আল্লাহর জয়ের জন্য আল্লাহর বান্দাদেরকেই এখন মারা হচ্ছে! পুরো পৃথিবীটা যে কিভাবে ধর্মের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে তা ভেবে আসলে অবাক লাগে।

পরবর্তী তথ্যে যাই, জ্যাকব তথা ইয়াকুব তথা ইসরাইল (আঃ) বিয়ের ঘটনা জানতে পারি আমরা। এটাও জানতে পারি উনার দুই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া ১২ পুত্র থেকে যে বংশধারা বের হয়েছে, তাদেরকেই একত্রে বনী ইসরাইল জাতি বলা হয়। পবিত্র কোরআনে যাদের কথা বারবার উঠে এসেছে।

Download Now

এরপর এই ১২ পুত্রের এক পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ) কিভাবে নিজের পরিবার থেকে হারিয়ে গেলেন আর দাস হিসাবে বিক্রি হয়ে গেলেন প্রাচীন মিশরের ফারাওয়ের কাছে, কিভাবে জন্ম নিলো জগদ্বিখ্যাত ইউসুফ জুলেখার প্রেম কাহিনী, কিভাবে তিনি রাজবন্দী থেকে মিশরের সবচেয়ে প্রভাবশালী উজির হলেন, কিভাবে উনার মাধ্যমে বনি ইসরাইলের সকল বংশধরেরা মিশরে গিয়ে ঠাঁই পায় তা উঠে এসেছে এই বইয়ে। যথারীতি আলাদা আলাদা ধর্মগ্রন্থ থেকে বিভিন্ন সূত্র মিলিয়ে দূর্দান্তভাবে সবগুলো ঘটনা সাজিয়েছেন লেখক। পাশাপাশি আশ্রয় নিয়েছেন কিছু তাফসির, লোককাহিনীরও।

একটা ব্যাপার অবশ্য আমার বেশ অদ্ভুত লেগেছে। প্রাচীন মিশরের এতো এতো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হয়েছে, অথচ কোথাও ইউসুফ (আঃ) এর নাম পাওয়া যায়নি। এটা অবশ্যই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার যে মিশরে উনার নাম পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু সেই পরিবর্তীত নামেও কোনোই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি৷ একমাত্র যে সূত্র জোড়া লাগানো যায় তা হলো একটা স্বপ্নের ব্যাখা হিসাবে ধর্মগ্রন্থে যা বলা হয়েছে, প্রায় কাছাকাছি ঘটনাবলীর প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বিখ্যাত উজির “ইমহোটেপ” এর নামে। এই ঘটনাবলী এবং নামের মিলের কারনে কেউ কেউ ধারণা করেন “ইমহোটেপ” ই আসলে “ইউসুফ (আঃ)“। যদিও সেক্ষেত্রে টাইমলাইনের একটা বিস্তর ফারাক দেখা যায়। যাইই হোক এই রহস্য হয়তো কালের গভীরেই হারিয়ে গিয়েছে, হয়তো এখনো প্রমাণ আবিষ্কারই হয়নি কিংবা হয়তো সকল প্রমাণ যত্নের সাথে আড়ালেই রাখা হয়েছে।

এরপরের চ্যাপ্টারে লেখক পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের মাউন্ট টেম্পল তথা বাইতুল মুকাদ্দাসের ইতিহাস বর্ণনা করেন। আমি রীতিমতো শকড হয়ে গিয়েছি যখন জানতে পেরেছি মিরাজের ঘটনার সময়ে যে মসজিদে নবীজী (সাঃ) নামাজ পড়েছিলেন বলে উল্লেখ আছে, সেই সময়ে সেই মসজিদের আসলে কোনো স্থাপনাই ছিলো না!! যদিও ম্যাপ সহ সেটার একটা চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখক। এই চ্যাপ্টারে ডোম অফ দ্য রক কিংবা ইহুদীদের পবিত্র সিন্দুক আর্ক অভ দ্য কভনেন্ট তথা তাবুতে সাকিনার ব্যাপারসহ অনেক কিছুই উঠে আসে। যদিও পরবর্তী চ্যাপ্টার গুলোতে টাইমলাইন অনুসারে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই ব্যাপারগুলো আরো বিস্তারিত জানতে পারি। তাই এই চ্যাপ্টারের কিছু অংশ পরে আবার রিপিটেট হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ জন্ম ও যোনির ইতিহাস PDF রিভিউ | জান্নাতুন নাঈম প্রীতি | নিষিদ্ধ বই

Download Now

চলে আসি পূর্বের টাইমলাইনের ঘটনায়। কালের পরিক্রমায় বনি ইসরাইল জাতি মিশরের ফারাওদের দাস জাতি হিসাবে নিযুক্ত হয়ে যায়। তখন এদেরকে ডাকা হতো হিব্রু জাতি, কারন তারা হিব্রু ভাষায় কথা বলতো। এই হিব্রু জাতির সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছিলো। এটার সমাধানের লক্ষ্যে, পাশাপাশি মিশররাজ তথা ফারাও এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে নির্দেশ দিলেন যে প্রতি এক বছর অন্তর অন্তর জন্ম নেয়া সকল হিব্রু ছেলে সন্তানদের মেরে ফেলার নির্দেশ দিলেন। নিজের শিশু সন্তানকে প্রাণে বাঁচানোর তাগিদে ঝুড়িতে করে নীলনদে ভাসিয়ে দিলেন এক দুঃখী মা। সেই ঝুড়ি কুড়িয়ে পেলেন সেই ফারাও এরই স্ত্রী। স্বামীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শিশুটিকে লালন পালন করতে শুরু করলেন তিনি৷ এই শিশুটিই বড় হয়ে দাস হিব্রু জাতিকে মিশরের রাজা থেকে মুক্ত করে। যে শিশুর জন্য এতো হত্যা করলেন ফারাও, সেই শিশু বেড়ে উঠলো তারই প্রাসাদে, তারই খাবার খেয়ে। শিশুটির নাম, মোজেস তথা মূসা (আঃ)। মূসা (আঃ) এর নবুওয়ত প্রাপ্তি সহ মোটামুটি অন্যান্য বিস্তৃত ইতিহাস জানা হয়ে যায় বইটির পরবর্তী কয়েক চ্যাপ্টারের মাধ্যমে।

অবশেষে টানা অনেকগুলো গজবের পর (বইয়ে বিস্তারিত সব আছে, আমি এখানে স্রেফ মূল ঘটনার আউটলাইন লিখে যাচ্ছি) হিব্রুদেরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন ফারাও। হিব্রুদের মুক্ত করেই মূসা (আঃ) প্রায় ৬ লাখ ইহুদীদের নিয়ে রওনা দেন প্রমিজড ল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। সেই ল্যান্ড যেখানে শুয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন ইয়াকুব (আঃ), এবং পরবর্তীতে যে জায়গাটা তিনি কিনে নিয়েছিলেন ১০০ ভেড়ার বিনিময়ে। বিশাল মরুভূমি পাড়ি দিতে গিয়ে খাবারের অভাবে কাতর হিব্রু জাতিরা অভিযোগ জানাতে শুরু করলো মূসা (আঃ) এর কাছে, যে এরচেয়ে তো তারা দাস হিসাবেই ভালো ছিলো। তাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য নিয়ম করে দুইবেলা বেহেশতী খাবার পাঠনোর ব্যবস্থা করে দেন। ভোরবেলায় আসতো শিশিরের কনার মতো এক জাতীয় খাবার যার নাম “মান্না” আর বিকেলবেলা আসতো “সালওয়া” নামের এক জাতীয় পাখি। ৪০ বছর ধরে তারা এই খাবার পেয়েছিলো। কিন্তু ইহুদীদের নফরমানি এবং অকৃতজ্ঞতার কারনে প্রমিজড ল্যান্ড পরবর্তী ৪০ বছরের পর্যন্ত তাদের জন্য হারাম ঘোষনা করেন আল্লাহ তা’আলা। এই সময়ে আসলে অনেক অনেক কিছুই ঘটে যার বিস্তারিত বইটা পড়লে জানতে পারবেন। The Good Samaritan কথাটা অনেকবার শুনেছি, এই কথাটার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা এই বই পড়েই জানলাম। মিশরের কোন ফারাওর আমলে মূসা (আঃ) লোহিত সাগর দ্বিখণ্ডিত করে বনী ইসরাইলকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, ধর্মীয় এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ফাইন্ডিংস এর মাধ্যমে সেটার একটা চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখক এখানে। এবং সেই ব্যাখ্যা অনুসারে সেটা কিন্তু ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস নন!

লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে তাদের প্রমিজড ল্যান্ডের কাছাকাছি পৌছে গেলো বনী ইসরাইল। এরপর কি হলো? লিখলে আসলে আরো অনেক কাহিনীই লিখে ফেলা যাবে বই থেকে। তাই আর সেদিকে যাচ্ছি না। শুধু বলি এরপর একে একে স্যামসনের আলৌকিক ক্ষমতা, নবী দাউদ (আঃ) তথা কিং ডেভিডের কাহিনী, David vs Goliath লড়াই, প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে কিং ডেভিডের ইতিহাসে থাকার প্রমাণ পাওয়া, দাউদ (আঃ) এর ছেলে মহা পরাক্রমশালী সুলাইমান (আঃ) বা কিং সলোমন এর বিভিন্ন ক্ষমতার কাহিনী, কিং সলোমনের সাথে সেবার রানীর পরিচয়ের গল্প, সোলাইমান (আ:) কর্তৃক ফার্স্ট টেম্পল নির্মাণ করা, আহাব ও জেজেবেলের কাহিনী, কিভাবে বনী ইসরাইল আস্তে আস্তে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে গেলো সেগুলোর বর্ণনা, পারস্যের সম্রাট নেবুকাদনেজারের জেরুজালেম ধ্বংস করে দেয়া এবং বনী ইসরাইলের পারস্যে নির্বাসন এগুলা উঠে আসে।

এই জায়গায় এসে ইহুদি এবং খ্রিস্টধর্মের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক নবীর কথা বলতে হয় যার নাম ছিলো ইশাইয়া (আঃ) যিনি মসীহ বা খ্রিস্ট আগমনের ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন। মুসলিম তাফসির অনুসারে তিনি ঈসা (আঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দুইজনের কথাই বলেছিলেন। এই ব্যাপারে খুব চমৎকার একটা ঘটনার উল্লেখ আছে বইয়ে। ইশাইয়া (আঃ) এর অস্তিত্ব প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২০১৮ সালে খুঁজে পেয়েছেন।

বইয়ের বাকী কিছু অংশ পারস্যের সম্রাট সাইরাসের রাজত্বকালে ইহুদীদের নিজ ভূমিতে পূনরায় ফিরে আসার কাহিনী, সেকেন্ড টেম্পল নির্মান, জেরুজালেম ধ্বংসের ভবিষ্যতবানী, দানিয়েল (আঃ) এর বিভিন্ন ঘটনা, রোমান শাসনামলে ইহুদীদের করুণ অবস্থা এগুলার বর্ণনা করা হয়েছে। এর মাঝে আমাদের সব নবীর প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন দানিয়েল (আঃ) এরকম একটা ঘটনা পড়ে বেশ অবাক হয়েছি। যাইই হোক ইহুদীদের যীশু আগমনের পূর্ব পর্যন্ত কাহিনীর এখানেই ইতি টানা হয় এই বইয়ে। শেষের দিকের কিছু পৃষ্টায় নবীজী (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে কিছু অংশ লিখেছেন লেখক। যেগুলোর সাথে ইহুদীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ সীরাত পড়া থাকার কারনে এই জায়গার বেশ কিছু ঘটনা আগেই জানা থাকলেও, কিছু অংশ একদমই নতুন ছিলো আমার জন্য। জানার আসলে শেষ নাই।

লেখকের লিখনশৈলী সাবলীল সুন্দর। আমি ২য় সংস্করণ পড়েছি তেমন কোনো ভুলভাল পাইনি৷ অল্প কিছু জায়গায় মনে হয়েছে বাক্যগুলো আরেকটু সুন্দরভাবে লিখা যেতো। অত্যন্ত তথ্যবহুল বই লেখকের ব্যাপক পড়াশোনার গন্ডি সম্পর্কে পাঠককে বেশ ভালোই আইডিয়া দিবে। বইয়ে অনেক ইতিহাস বা তথ্য থাকলেও বেশীরভাগ লেখা হয়েছে গল্পের আদলে। তাই বইটা পড়তে একটুও বিরক্ত লাগেনি। তবে বইটা আমি একটু থেমে থেমে পড়েছি এবং কিছু অংশ বারবার করে পড়েছি। কারন ঘটনাগুলোকে হজম করার জন্য ব্রেইনকে সময় দিতে হচ্ছিলো। বইয়ের প্রতিটা তথ্য আমার মতো ইতিহাস প্রেমীর জন্য প্রচন্ড উপাদেয় ছিলো। তবে আমার সব প্রশ্নের খোরাক এই পর্বে মিটেনি। আশা করি দ্বিতীয় খন্ড পড়ে আরো কিছু জানতে পারবো।

Download Now

আরও পড়ুনঃ Mujib: The Making of a Nation Review | মুজিব একটি জাতির রূপকার

আমি লেখককে আমার মনের গভীর থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এই বইটা আমাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। অনেক অনেক কিছু জেনেছি আমি বইটা পড়ে। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা রইলো।

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ১০/১০ (এটাই কি স্বাভাবিক না? আমি কালের গভীরে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই আর এই বইটা সেই চাওয়া পূরণ করতে পেরেছে পুরোপুরি। তাই আমার দিক থেকে এটা পারফেক্ট বই। এমনকি এই বইটাকে কেউ ইতিহাসের বই না ভেবে গল্পের বই হিসাবেও পড়ে যেতে পারবেন, এতোটাই সুখপাঠ্য বইটি)

প্রোডাকশনঃ বইয়ের প্রোডাকশন অসম্ভব অসম্ভব ভালো। বিশেষ করে বাঁধাইটা অনেক চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। পেইজ কোয়ালিটিও বেশ ভালো ছিলো। প্রচ্ছদে কি কি এলিমেন্ট আছে এবং সেগুলা কেনো দেয়া হয়েছে তা নিয়ে লেখকের একটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। তবুও আমার মনে হয়েছে প্রচ্ছদের কালার কম্বিনেশনটা আরেকটু বেটার হতে পারতো। বইটাতে অসংখ্য বাস্তব এবং শিল্পীর আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে বইয়ে উল্লেখিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তবে ছবিগুলা কিছুটা ঝাপসা বা অস্পষ্ট। সেই তুলনায় দেখলাম দ্বিতীয় খন্ডের ছবিগুলা অনেক পরিষ্কার। আমার একটা ব্যক্তিগত অনুরোধ থাকবে প্রকাশনীর প্রতি এই বইটার একটা কালেক্টর এডিশন বের করার জন্য যেখানে সব ছবি রঙিন থাকবে। দাম একটু বেশী হলেও আমার মতো কালেক্টেরদের জন্য সেটা বেশ জরুরী।

Download Now

পুনশ্চঃরিভিউর সাথে মাউন্ট টেম্পল তথা বাইতুল মোকাদ্দাস কমপ্লেক্সের একটি ছবি সংযুক্ত করা হলো। ছবিটা বইয়ে আছে। এই ছবি দেখলে ধর্মীয়ভাবে কেনো জেরুজালেম ইহুদী, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ তার একটা আইডিয়া পেতে পারেন।

Tags:
x
error: Content is protected !!