যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ কালিন্দী
লেখকঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
ধরণঃ উপন্যাস
কবি পরিচয়ঃ
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে ২৩ জুলাই, ১৮৯৮ খ্রীস্টাব্দে এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ৬৫ টি উপন্যাস, ৫৩-গল্প-বই, ১২ নাটক, ৪ প্রবন্ধ-বই, ৪ আত্মজীবনী, ২ ভ্রমণ গল্প লিখেছেন এবং বেশ কয়েকটি গান রচনা করেছেন। তিনি ১৯৫৯ সালে একটি বাংলা ফিচার চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। তিনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন কিন্তু তিনার স্থান বাঙালি উপন্যাস পাঠকের হৃদয়াসনে আজও নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে।
বাংলা সাহিত্যে যে তিন লেখককে ‘ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়’ নামে আখ্যায়িত করা হয় তন্মধ্যে একজন হলেন কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৯৮-১৯৭১) এবং অবশিষ্ট দুইজন হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬)।
বইটির প্রেক্ষাপটঃ
কালিন্দী উপন্যাসটি লেখকের সপ্তম পুস্তক। এটি ১৯৪০ খ্রীস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। উপন্যানটি ৩৫টি অংশ নিয়ে ২৩৫ পাতায় লিখিত। বর্তমানে উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষাতেও অনুবাদ হয়েছে। যেটি লীলা এল জাভিচ লিখেছেন।
এই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু গ্রাম্য অঞ্চলের মাটি ও মানুষ,রাজনৈতিক বন্ধনমুক্তি ও মানুষের সনাতন জীবন-মুক্তির সাধনা, সমাজের নিচুতলার মানুষের জীবনযাত্রা ও নানাপ্রকার অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, অর্থনৈতিক বৈষম্য। সুতরাং, এই উপন্যাসটি আদর্শবাদের চড়া সুরে বাঁধা।
আরও পড়ুনঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনচরিত | বাংলা সাহিত্যে অবদান | জীবনী
লেখার বৈশিষ্ট্য
ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, লেখক এই উপন্যাসের দ্বারা মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। তিনার এই উপন্যাসের মূল বিষয় সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র। সেখানে আরও আছে গ্রাম জীবনের ভাঙনের কথা, নগর জীবনের বিকাশের কথা। তিনার এই লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল , গ্রাম্য কবিয়াল ও নীচু সম্প্রদায়ের কথা।
অহীন্দের সংগ্রাম, নীচুজাতদের প্রতি দয়ামমতা, মহীন্দ্রের সৎ মার প্রতি ভালোবাসা, বিমলের স্বপ্ন, উমার ধৈর্য,ইন্দ্ররায় ও রামেশ্বরের প্রায়শ্চিত্ত, গ্রামীন মানুষের সরলতা, জটিলতা , মনের পাপ-পঙ্কিলতা সবকিছু যা কি না একটি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, লেখক এই প্রতিটি বিষয় এত আকর্ষণীয় এবং সাবলীল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন যা যে কোনো পাঠকের আগ্রহ শেষ অবধি ধরে রাখতে সক্ষম।
উপন্যাসের সংলাপ বর্ণনায় আঞ্চলিক সাঁওতালি ভাষার প্রয়োগ পুরো কাহিনী কে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে। এছাড়াও সংস্কৃতি, ইংরেজি ভাষায় কথোপোকথন এবং বাংলার বেশ কয়েকটি কবিতা তুলে ধরা হয়েছে যা পুস্তকটির সৌন্দর্যকে আরও বারিয়ে তুলেছে। আরবি ভাষা থেকে উৎপত্তি কয়েকটি বাংলা শব্দও উপন্যাসে প্রয়োগ হয়েছে। তাছাড়়া বাংলা বাগধারা এবং বিভিন্ন উদাহরণ দ্বারা ঘটনাটিকে বুছতে আরও সহজ ও সরল করে তুলা হয়েছে যা আমাকে বইটি সম্পূর্ণ পড়তে বাধ্য করে তুলেছিল।
নামকরণঃ
গল্প, কবিতা, উপন্যাস যাই হোক না কেন মূখ্য ভূমিকা পালন করে এর নাম।নামের মাধ্যমে যেমন উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু প্রকাশ পায় তেমনি পাঠকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু প্রতিষ্ঠিত হয়। নামটাই বলে দেয় ভিতরের কাহিনীর খন্ডভাগ। কিন্তু আমার মতে পুস্তকটির নাম সুশ্রাব্য ও আকর্ষনীয় হলেও কিন্তু অন্তরের কাহিনি তেমন ভাবে ফুটে ওঠেনি। যেহেতু মূল যে বস্তুটিকে ঘিরে এই উপন্যাসটি রচিত হয়েছে সেটি হল চর। অতএব আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় গ্রন্থটি যদি “কালিন্দীর চর” নামে আখ্যায়িত করা হত তবে বিষয়বস্তুটি অতিসহজেই ফুটে উঠত। এই ছিল আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের মত তবে এখন আপনারা এই উপন্যাসটি পড়ে বিবেচনা করতে পারেন। হয়ত আমার সাথে একমত হতে পারেন, অথবা দ্বিমতও হতে পারেন। তা গ্রন্থটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
এই পুস্তকটির প্রতিটি শব্দের মাঝে নিহিত গভীর জীবনবোধ পড়ার মূহুর্তে আমার মনে এতটাই ছুঁয়ে গিয়েছিল যে আমি এটি হ্যাফ-ইয়্যারলি পরীক্ষা চলাকালীনই সম্পূর্ণ পড়ে ফেলেছিলাম। লেখক যে এতটাই নিখুঁতভাবে প্রতিটি চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন যা সকল পাঠককেই বইটি সম্পূর্ণ পড়তে বাধ্য করবে। বইটি মানুষত্ব কী বা কাকে বলে তা আমাকে বেশ ভালো করেই বুঝিয়েছে। তাই আমি বইটি বিশেষকরে মায়েদের এবং ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই পড়া উচিৎ বলে মনে করি।
আরও পড়ুনঃ কবি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় PDF | Kobi Tarashankar Bandopadhyay
সারসংক্ষেপঃ
দীর্ঘকাল থেকেই রায় ও চক্রবর্তী পরিবারের মধ্যে অন্তর্কলহ রয়েছিল চিরদিনই তবে সেটি ইন্দ্র পরিবারের রাধারানীর সঙ্গে চক্রবর্তী বংশের রামেশ্বরের সহিত বিবাহের ফলে মিটে গেলেও রাধারানীর রহস্যময় মৃত্যুর হেতু পুনরায় শুরু হয় সেই ভয়ঙ্কর লড়াই কিন্তু আবার বেশ কয়েক বছর পর রামেশ্বরের চরিত্রবান দ্বিতীয় স্ত্রী সুনিতীর গর্ভের মহীন্দ্রের সৎ মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পুলিশের নিকট আত্মসমর্পন ও অহিন্দ্রের সহিত ইন্দ্র রায়ের মেয়ে উমার বিবাহ হওয়ায় পূনর্মিলন হয় এই দুই পরিবারের সদস্যদের।
কালি নদীর বুকে যখন চর ওঠে তখন সাঁওতালরা সেটিকে চাষবাস ও বাসস্থানের যোগ্য করে তুলে। সেই সময় ইন্দ্ররায় চরটিকে নিজের বলে দাবি করে এবং দুই পরিবারের মাঝে পূণরায় কলহ বেঁধে যায় তবে চরিত্রবান সুনিতীর আদর্শ শিক্ষা ও দিক্ষায় গড়ে ওঠা মহীন্দ্র সেই দন্দ্বকে মিটিয়ে দেয় এবং দুই পরিবারের পূণর্মিলন হয়। কিন্তু দুই পরিবারের চরকে নিয়ে দন্দ্ব মিটলেও এক নব্য কলহ বাঁধে বিমলের সহিত যে চরে চিনি কল করবে বলে এসেছিল। ইন্দ্ররায় তাকে কলের সম্মতি দিলেও পরিশেষে সে চরকে দখল করে বসে এবং সাঁওতালদের নিজের দাসত্বে পরিণত করে তাদের প্রতি দৌরাত্ম যালা নির্যাতন আরম্ভ করে। ফলপ্রসূ চরিত্রবান সুনিতীর আদর্শ শিক্ষা ও দিক্ষায় গড়ে ওঠা তাঁর দ্বিতীয় ও ছোটো ছেলে অহীন্দ্র সর্বদা সকলকে সম অধিকার দেয়ার নিমিত্তে মার্কসবাদকে বেছে নেয় এবং পরিশেষে সেও পুলিসের নিকট ধৃত হয়ে যান।
এছাড়াও এই সর্বনাশী চরের জন্য এতই দাঙ্গা ফাসাদ রটে যে পরিশেষে চক্রবর্তী পরিবার একেবারে বজ্রহত তালগাছের মত হয়ে পড়ে যেহেতু তালগাছের মাথায় যদি বজ্রাঘাত হয় তবে সঙ্গে সঙ্গেই সে জ্বলে ভস্মীভূত হয়ে যায় না।দিন কয়েকের মধ্যেই পাতাগুলি শুকায়ে যায়, তারপর শুষ্ক পাতাগুলি গোড়া হইতে ভাঙে ঝুলে পড়ে, ক্রমে সেগুলি খসে যায়, অক্ষত-বহিরঙ্গ সুদীর্ঘ কান্ডটা ছিন্নকন্ঠ হয়ে পুরাকীর্তির স্তম্ভের মত দাঁড়িয়ে থাকে। ইদৃশ সেই সর্বনাশী চর বজ্রের ন্যায় চক্রবর্তী পরিবারকে ধীরে ধীরে ভস্মীভূত করে দেয় এবং স্তম্ভের মত নিস্তব্ধ দাড়িয়ে রেখে দেয়।
তবে রাধারানীর মৃত্যুর সেই রহস্যময় ঘটনাটি কী? কিভাবে চক্রবর্তী পরিবারের এমন দুর্দশা হয়েছিল?, মহীন্দ্রের সৎমার অপমানের প্রতিশোধ নিতে এমন কী বা করেছিল যে ইন্দ্ররায়কে নিষ্ঠূর থেকে মানুষত্যে পরিণত হতে বাধ্য করেছিল? এই সকল প্রশ্নের উত্তর গ্রন্থটি পড়লেই আমরা অতি সহজেয় পেয়ে যাব। তো আর দেরি কেন? চলুন এক্ষনিই পড়ে ফেলা যাক কথাসাহিত্য তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের রচিত সেই কালিন্দী উপন্যাস।
রিভিউ করেছেনঃ SAHADAT ALAM