যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ কৃষ্ণকান্তের উইল
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ধরণঃ উপন্যাস
পার্সোনাল রেটিংঃ ★ ★ ★ ★
রিভিউ করেছেনঃ Dibyajoti Roy
“অদর্শনে কত বিষময় ফল ফলে।যাহাকে বিদায় দিবার সময়ে কত কাঁদিয়াছ, মনে করিয়াছ বুঝি তাহাকে ছাড়া দিন কাটিবে না,কয় বৎসর পরে তাহার সহিত আবার যখন দেখা হইয়াছে,তখন কেবল জিজ্ঞেস করিয়াছ- ভালো আছ তো?হয়তো সে কথাও হয় নাই,কথাই হয় নাই।আন্তরিক বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে।হয়তো রাগে,অভিমানে আর দেখাই হয় নাই।তত নাই হউক,একবার চক্ষের বাহির হইলেই,যা ছিলো তাহা আর হয়না।যা যায় তা আর আসে না।যা ভাঙ্গে তা আর গড়ে না।মুক্তবেণীর পর যুক্তবেণী কোথায় দেখিয়াছ?”
-কৃষ্ণকান্তের উইল (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস তেমন পড়া হয় না। শখের বশে এই বইটি কেনা। কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসটি ১৮৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটি দুই খন্ডে বিভক্ত। প্রথম খন্ডটি গঠিত একত্রিশটি পরিচ্ছদ নিয়ে আর অন্য খন্ডটিতে রয়েছে পনেরোটি পরিচ্ছেদ।
উপন্যাসটির নাম কৃষ্ণকান্তের উইল হলেও, তিনি এখানে মুখ্য চরিত্র না। আসলে এরকম উপন্যাসে বাহ্যিক বিচরণগুলো দেখিয়ে মূলটাকে লুকিয়ে রাখা হয়। এখানে, মুখ্যচরিত্র কে তা বলা মুশকিল। আসলে কেউই আলাদাভাবে এখানে মুখ্য নয়।
জমিদার কৃষ্ণকান্ত তাঁর সারাজীবনের জমানো অর্থ মরার আগে তাঁর পুত্র-কন্যার মধ্যে ভাগ করে দিতে চান। কিন্তু তাঁর বড়পুত্র হরলাল এই ভাগবাটোয়ারা বর্জন করে নতুন উইল করার ফন্দি আঁটে। – এই পর্যন্ত ঘটনার প্রারম্ভ।
বাকি ঘটনার অবতারনা হয় নতুন চরিত্রের দ্বারা। কৃষ্ণকান্তের ভ্রাতষ্পুত্র গোবিন্দলাল, তাঁর পত্নী কালো-কুৎসিত ভ্রমর, আর সুন্দরী রুপবতী বিধবা রোহিনী৷ কাহিনী বাকি ঘটনাগুলো তাঁদের প্রেম অভিমান ঘিরেই গড়ে উঠেছে৷
তবে, এতো বড় উপন্যাস পড়তে একটু সমস্যা হতে পারে৷ কারন, লেখক তাঁর শব্দচয়ন সাধুভাষায় করেছেন। এইপর্যন্ত দেখলে এটাকে সাধারন উপন্যাস বললেই চলে। কিন্তু, এর আসল রহস্য তো শেষের দিকে। এখানে, নায়ক আর খলনায়ক আলাদা নয় বরং একজনই। কে সে? আর, কার কাছেই বা গেলো কৃষ্ণকান্তের সম্পত্তি? কিভাবে উইলের ঘটনা থেকে প্রেম, আবার প্রেমের থেকে ত্যাগ হলো? জানতে হলে পড়ে ফেলুন বইটি।
আরও পড়ুনঃ সোনার তরী কাব্যের মূলভাব আলোচনা PDF | Sonar Tori Poem
কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসের চরিত্র
ভালোবাসা কি রূপের মুগ্ধতায় হয়? বাহ্যিক রূপের আকর্ষণ তো শুধুই মোহ। কিন্তু ভালোবাসা তো চির স্নিগ্ধ। অন্যদিকে মোহ, সে তো এক কানাগলি যা চিরকালের নয়।
এই উপন্যাসের গোবিন্দলাল যতক্ষণে বুঝতে পারলো এ তো গুন নয় রূপ, এ তো ভ্রমর নয় রোহিণী, এ তো ভালোবাসা নয় মোহ, ততক্ষণে তার চিত্তবিনোদন, দুঃখবিনাশন, ন’বছর সাথে থাকা সতেরো বছরের বালিকাবধূকে সে কয়েক যোজন দূরে হারিয়ে ফেলেছে।
আমাদের চারপাশে হরলালের মতো এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কাছে গুরুতর অন্যায়টাই ন্যায়। শঠতাই যাদের স্বভাব। স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মানুষ যে কতটা অধম হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হরলাল। আবার ব্রক্ষ্মানন্দের মতো কিছু আশ্রিত মানুষও আছে যারা ঠিক মুনিবভক্তি নয় বরঞ্চ নিজেদের বিপদের কথা ভেবেই মুনিবের বিরুদ্ধে যেতে পারেনা কিন্তু লোভ সংবরণ করাটাও তাদের পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে।
সময়ের কথা সময়ে বলে ফেলার মূল্য যে কতখানি তা বঙ্কিমচন্দ্র এই উপন্যাসের মাধ্যমে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গোবিন্দলাল যদি তার কালিন্দী ভ্রমরকে একবার সেই রাত্রে উদ্যানগৃহে ঘটে যাওয়া ঘটনা খুলে বলতো তাহলে হয়তো উপন্যাসের শেষটা এমন নাও হতে পারতো। আবার হয়তো সবকিছুর পরেও ভ্রমরের ভক্তি, ভালোবাসা রোহিণীর রূপের কাছে হার মানতো। কারন ওইযে, আমরা বেশিরভাগ সময়ই রূপের পূজারী।
অনেক সুন্দর একটি উপন্যাস। সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ কমলাকান্তের দপ্তর প্রবন্ধ পিডিএফ | Komola Kanter Doptor PDF