যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
‘গীতি-গুচ্ছে’ সুকান্তর একান্ত আপন অনুভূতি ‘সহজ ও সাবলীল গতিতে সঙ্গীতমুখর হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।’ এখানে আশা আছে, হতাশা আছে; আছে প্রেম- বিরহ এবং বিদ্রোহ। নানান জিনিস নানান ভাবে কবি হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে বলেই গীতি-গুচ্ছে আমরা অনেক নতুন স্বাদ-গন্ধ ও ছন্দের পরিচয় পাই ।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “কাব্যের একটা বিভাগ আছে যা গানের সহজাতীয়। সেখানে ভাষা কোন নির্দিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে না, একটা মায়া রচনা করে, যে মায়া ফাল্গুন মাসের দক্ষিণ হাওয়ায়, যে-মায়া শরৎ ঋতুতে সূর্যাস্ত কালের মেঘপুঞ্জে মনকে রাঙিয়ে তোলে; এমন কোন কথা বলে না যাকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।” সুকান্তেরই তার প্রমাণ মেলে। যেমন-
“এই নিবিড় বাদল দিনে,
কে নেবে আমায় চিনে, জানিনে তা।
এই নব ঘন ঘোরে,
কে ডেকে নেবে মোরে,
কে নেবে হৃদয় কিনে, উদাস চেতাঃ
উদাস সুর মনে মনে,
অদেখা বাঁধন বিনে ফিরে কী আসবে হেথা?”
গীতি-গুচ্ছে সুকান্তর নিজস্ব ভঙ্গির রোমান্টিকতা আছে। আছে অনেক প্রশ্ন এবং ভাবাবেগে আপ্লুত পঙক্তিমালা। যেমন-
“গানের সাগর পাড়ি দিলাম সুরের তরঙ্গে,
প্রাণছুটেছে নিরুদ্দেশে ভাবের তুরঙ্গে ।
…
তান তুলেছে অন্তবিহীন রসের মৃদঙ্গে।”
আরও পড়ুনঃ অভিযান PDF | সুকান্ত ভট্টাচার্য | বই রিভিউ | Abhijan by Sukanta
এখানে আবার বীণার ঝংকারে জীবন-সংকারে জয় করেছেন বলেও কবি দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন। আবার মরণকেও সহজভাবে বরণ করে নিয়েছেন গানে গানে। মৃত্যু যেন ‘নিরব চুমি’ তাঁকে হরণ করেন এ কামনাও তিনি করেছেন কবিতায় ও গানে । কবি যেন বুঝতে পেরেছিলেন—নেই, আর দেরী নেই। দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি! অসম্ভব শ্রম আর ক্লান্তিতে ক্ষয়ে যাওয়া দেহের আজ বিশ্রাম চাই। একটানা পথ চলতে চলতে পথিকের যে দশা হয়, সুকান্তরও হয়েছিল অনেকটা সেরকম অবস্থা। কবি কিট্স আর কবি সুকান্তর একটা মিল এখানে লক্ষণীয়। কিট্স বলেছেন,
My heart aches, and drowsy numbness pains,
My sense, as though of hemlock I had dunk,
(ode to a nightingale; J: Keats)
অর্থাৎ, আমার হৃদয়ে বেদনা লাগে এবং একটি নিদ্রাকারক জড়ত্ব আমার অনুভূতিকে বেদনা দেয়, কেমন যেন আমি হেমলক পান করেছি। সুকান্ত বলেছেন-
“ক্লান্ত আমি, ক্লান্ত আমি, কর ক্ষমা,
মুক্তি দাও হে এ-মরু তরুরে, প্রিয়তমা।”অন্যত্রও আমরা একই সুরের আভাস পাই-
“আজ মোর ঝরিবার পালা,
সব মধু হয়ে গেছে ঢালা;
আজ মোরে চলে যেও দলি।”
আরও পড়ুনঃ সুকান্ত সমগ্র | Sukanta Samagra PDF | সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা সমগ্র
“ফোটে ফুল আসে যৌবন সুরভী বিলায় দোঁহে।
বসন্তে জাগে ফুলবন অকারণে যায় বহে।”
-এটি একটি চমৎকার গান। ফুল ঝড়ে যাবার সাথে কবি যৌবনের চলে যাওয়াকে তুলনা করেছেন, বলেছেন ওরা বারবার ভালবাসার কথা বলে যায়। বাংলাদেশ সুকান্ত একাডেমী ১৯৭৪ সনে গানটির চমৎকার সুরারোপ করে রেডিও, টিভিতে পরিবেশন করেছিল ।
সুরকার এবং শিল্পীরা উদ্যোগ নিলে সুকান্তর সবকটা গানই সুরের মূর্ছনায় অপূর্ব হয়ে উঠতে পারে । ইতিমধ্যে ‘রানার’, একটি মোরগের কাহিনী ‘ঠিকানা’, ‘বোধন’, ‘হৈ মহাজীবন’, ‘দুর্মর’, প্রভৃতি কবিতাসমূহ উভয় বাংলায় গান হিসেবে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পশ্চিম বাংলায় সুকান্তর গানের রেকর্ডও বেরিয়েছে। গীতিনৃত্য নাট্যের গান সমূহ অনেক আগেই সুরকারগণ লুফে নিয়েছেন। প্রমাণিত হয়েছে উৎকৃষ্ট কবিতা মানেই উৎকৃষ্ট ‘জীবনের জয়গান’।
আরও পড়ুনঃ সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবনী | ১ম পর্ব | সম্পূর্ণ জীবন কাহিনী | Sukanta