যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
জসীম উদ্দীন, নামটি বাংলা এবং বাংলার মানুষের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই ব্যক্তিটিকে ছাড়া যেন গ্রাম বাংলার প্রকৃতির সাহিত্য কল্পনাই করা যায়না। তাঁর এতো সুন্দর সুনিপুণ পল্লী বিশ্লেষণ তাকে “পল্লীকবি” হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছে।
জসীম উদ্দীন এর কাব্যগ্রন্থগুলোর অনেক চরিত্রই তিনি বাস্তব জীবন থেকে নিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যের রূপাই চরিত্রটি। নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থের রুপাই সাজু চরিত্রের পিছনের ইতিহাস কি? কে সেই আসল রূপাই? তাঁর বাস্তব পরিচয় এবং সাজুর কথা নিয়েই আজকের আয়োজন।
ময়মনসিংহের গীতিকার সংগ্রাহক ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের কথায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোকজ সঙ্গীত সংগ্রহ করতেন আমাদের জসীমউদ্দীন। সেই সুবাদেই তখন ময়মনসিংহের গফরগাঁও -এ এসেছিলেন এবং বনগাঁও গ্রামের শেখ আবদুল জব্বারের বাড়িতে ওঠেন৷ মৌলভী শেখ আবদুল জব্বার ছিলেন কবি জসীম উদ্দিনের সাহিত্যচর্চার অন্যতম সঙ্গী।
আরও পড়ুনঃ দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক PDF রিভিউ | প্রেক্ষাপট | পটভূমি | আলোচনা
সেখানে অবস্থানকালে বনগাঁও গ্রামে জমির ধান কাটা নিয়ে একদিন বড় ধরণের এক দাঙ্গা হয়৷ ময়মনসিংহের স্থানীয় ভাষায় যাকে “কাইজ্জা” বলে। সেই দাঙ্গায় গফরগাঁওয়ের লাঠিয়াল দলের নেতৃত্ব দেন শিলাসী গ্রামের কৃষ্ণবর্ণের হালকা-পাতলা ছোটখাটো গড়নের এক যুবক, নাম রূপা৷ পল্লীকবি নিজ চোখে সেই দাঙ্গা দেখেন; দেখেন গ্রামাঞ্চলে জমি দখলের এক নারকীয় দৃশ্য৷ উপলব্ধি করেন লাঠিয়াল দলের নেতৃত্বদানকারী রূপার তেজোদীপ্ত এক ভয়ঙ্কর বীরত্ব৷ ওই দাঙ্গা কবির মনে দারুণভাবে রেখাপাত করে।
আরও পড়ুনঃ হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটির লেখক কে? সম্পূর্ণ কবিতার আসল রচয়িতা কে?
গফরগাঁও বাজারের কাইয়ুম মার্কেটে একটি স্টলে আড্ডা দিতেন জসীমউদ্দীন, সেখানে বসেই রূপাই সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি৷ সেই স্টলেই কবির সঙ্গে রূপার পরিচয় হয় এবং রূপা তাঁর নিজের সম্পর্কে জানান জসীমউদ্দীনকে, যাকে উপজীব্য করে কবি সৃষ্টি করেন এক অমর সাহিত্য “নকশী কাঁথার মাঠ”। যে কাব্যগ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী হয়ে আছে এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। গ্রামের ঘটনাগুলোর এতো সুন্দর সুনিপুণ উপস্থাপনা কবি জসীম উদ্দিন ছাড়া সম্ভব না।
সেসময় এই রূপাকে মানুষ ‘রূপা গুণ্ডা’ বলেই জানতেন৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর একবার তিনি ইউপি ‘সদস্য’ নির্বাচিত হন৷ অবিভক্ত ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় তিনি সরাসরি দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, আর তখন গফরগাঁও বাজারে ১১ জন মারা গেলে তাকে এ ঘটনায় দুই দফায় ১৫ মাস কারাভোগ করতে হয়। কৃষিজীবী শহর আলীর ৭ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে রূপার অবস্থান ছিলো তৃতীয়৷ আর রূপার রয়েছে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। এখনো মানুষ সেই গ্রামকে রূপাই বাড়ি নামে চিনে।
আরও পড়ুনঃ আবু ইসহাকের গল্প : ডুবুরির কৌতুকপূর্ণ চোখ | ২ | আহমাদ মোস্তফা কামাল
নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যে, রূপাইয়ের বিপরীতে সাজু নামক যে নারী চরিত্র ছিল, তিনিও বাস্তবের এক ব্যক্তিত্ব, নাম ছিল ললীতা, রূপা ললীতাকে ভালোবাসতেন। ললীতা ছিলেন রূপার প্রতিবেশী গ্রাম মশাখালী’র বাসিন্দা। যদিও গল্পের প্রয়োজনে কাব্যগ্রন্থে কিছু বিষয় কবি নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু বাস্তবে রুপা এবং ললিতারর ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি।
ললীতা ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে মারা যান। আর ২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল শিলাসী গ্রামের নিজ বাড়িতে বার্ধক্যের কাছে পরাজিত হয়ে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যের সেই কালো মানিক রূপা।
রুপাইকে নিয়ে জসীমউদ্দীনের লেখা কবিতাঃ
আরও পড়ুনঃ বরফ গলা নদী PDF | সারাংশ / রিভিউ | জহির রায়হান | Borof Gola Nodi