যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইয়ের নাম :- নেক্সট
লেখক :- মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রচ্ছদ :- সিরাজুল ইসলাম নিউটন
প্রকাশনী :- বাতিঘর
প্রথম প্রকাশ :- ২০২২
প্রচ্ছদ মূল্য :- ৫০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা :- ৪৩০
রিভিউ করেছেন :- নীলিমা জান্নাত
ফ্ল্যাপ থেকেঃ
পেশাদার খুনি বাস্টার্ড মরে গেছে না বেঁচে আছে কেউ জানে না। কিন্তু দীর্ঘদিন পর অবিশ্বাস্য ভাবেই ফিনিক্স পাখির মতো পুণরুত্থিত হয়েছে ব্ল্যাক রঞ্জু। আগের চেয়েও শক্তিশালী, আরো বেশি ভয়ংকর আর অপ্রতিরোধ্য। তার সন্ত্রাসী চক্র শুরু করেছে ত্রাসের রাজত্ব। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাধ্য নেই তাদেরকে থামানোর।
ওদিকে ঈদের ছুটিতে ঢাকার এক প্রান্তে সদ্য গড়ে উঠা আবাসিক এলাকায় এক রাতে ঘটে গেলো তিন-তিনটি হত্যাকাণ্ড। তদন্তে নেমে অপ্রত্যাশিত কিছুর হদিস পেয়ে গেল হেমিসাইডের জেফরি বেগ। তার ধারণা ব্ল্যাক রঞ্জুর নাগাল পেয়ে যাবে সে। কিন্তু পর্দার অন্তরালে আছে আরেকজন রহস্যময় মানুষ। তাকে ধরা প্রায় অসম্ভব।
কে সে? কি চায়? – কেউ জানে না…..!
আরও পড়ুনঃ বেগ বাস্টার্ড সিরিজ রিভিউ | Beg Bastard Series PDF | Nazimuddin
কাহিনি সংক্ষেপঃ
ব্ল্যাক রঞ্জু মারা গেছে। বাস্টার্ডও মৃত। ঝামেলা নেই। জেফরি বেগ তাই ঝামেলামুক্ত সময় পার করছে। নিজের স্বাভাবিক কাজ করেই দিন পার করছে। প্রতিদ্বন্দ্বীরা নেই, উত্তেজনাও নেই। তাই বলে কি সমস্যা থেমে থাকে? জাদুর শহর ঢাকার হাজারটা সমস্যা। এ ওকে মারছে, সে তাকে মারছে। ছিনতাই, হত্যা, চাঁদাবাজি লেগেই আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনি এসব বন্ধে কিছুই করতে পারছে না। কেউ কেউ আবার ব্ল্যাক রঞ্জুর নাম ভাঙিয়ে এসব করছে। এসব শুনে অবাক হয় জেফরি বেগ। মৃত মানুষ আবার কী করে চাঁদাবাজি করতে পারে?
এরই মাঝে খুন হলো দেশের এক বড়ো শিল্পপতি। তার বাসার সামনেই গুলি করে মারা হলো তাকে। তদন্তের ভার পড়ল হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের জেফরি বেগের ওপর। জানা গেল ব্ল্যাক রঞ্জুর নাম করে তার কাছে বিশাল অংকের চাঁদা চাওয়া হয়েছে। চাঁদা দিয়ে অপারগতার কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। বিশ্বাস করেনি জেফরি বেগ। তার দৃঢ় বিশ্বাস, রঞ্জুর নাম ভাঙিয়েই একদল এসব করছে। তদন্ত শুরু হলো। উপরমহল থেকে চাপ আসছে। মৃতের বাবা এমপি থাকার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী অস্থির হয়ে উঠেছেন। যে করেই হোক খুনিকে ধরতেই হবে। এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সাত দিনে এই রহস্য উদঘাটন সম্ভব? আর যদি ব্ল্যাক রঞ্জু সত্যিই এর পেছনে থাকে, তাহলে তো অসম্ভব!
আরও পড়ুনঃ কনফেশন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন PDF | রিভিউ | Confession
বাস্টার্ড মৃত। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে নদীতে পড়ে গিয়েছিল ভয়ংকর সেই পেশাদার খুনি। এরপর আর তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, মেঘনার স্রোতে ভেসে গিয়েছে বাস্টার্ড। কিন্তু অমূল্যবাবু তা বিশ্বাস করেন না। তার দৃঢ় বিশ্বাস বাস্টার্ড বেঁচে আছে। লাশ যেহেতু পাওয়া যায়নি, কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে নিশ্চয়ই। অমূল্যবাবু খোঁজ করছেন বাস্টার্ডের। পাওয়া যাবে বাস্টার্ডকে? খুনিকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই পড়লেন বিপদে। জীবন নিয়ে টানাটানি লেগে গিয়েছে। এবার বাঁচবেন কীভাবে? কীভাবেই বা খুঁজবেন বাস্টার্ডকে?
বাস্টার্ডকে খুঁজছে আরও অনেক মানুষ। প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে যাওয়া ব্ল্যাক রঞ্জুর বাস্টার্ডকে চাই-ই চাই। ব্ল্যাক রঞ্জুর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কিছুতেই কাটছে না। তার লোকেরা বলছে রঞ্জু বেঁচে আছে। কিন্তু কেউ স্বচক্ষে দেখেনি। এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে অন্য কেউ। ক্ষমতাধর সেই ব্যক্তির ইশারায় হচ্ছে সব কিছু। তার নাগাল কি পাওয়া যাবে?
ঢাকার এক প্রান্তে নিরিবিলি জায়গায় গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা – সোয়ান লেক সিটি। ইদের ছুটিতে সেখানে ঘটে গেছে তিন তিনটি খুনের ঘটনা। ছুটি না শেষ হতেই জেফরি বেগের তলব পড়ল সে জায়গায়। রহস্যময় এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কিছুতেই বুঝতে পারছে না। ছুটির এ সময়টাতে নিজেকে ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারের মতো লাগছে। তবুও শেষ চেষ্টা চলছে। তদন্ত করতে করতে জেফরি বেগের এক পর্যায়ে মনে হচ্ছে, এই বুঝি ব্ল্যাক রঞ্জুর নাগাল পেয়ে গেল। সত্যিই কি ব্ল্যাক রঞ্জু বেঁচে আছে? থাকলে এবার বোঝাপড়া হবে। কিন্তু চমক তখনও অনেক বাকি!
আরও আছে পার্থিব রায় চৌধুরী। কে সে? নতুন পরিচয়, নতুন জীবন নিয়ে তার পথচলা। কিন্তু চাইলেই কি অতীত ভুলে যাওয়া যায়? অতীতের টানে আবারও ছুটে চলা পুরনো সেই গন্তব্যে। পুরনো পরিচয় নিয়েই লড়াই শুরু। হেরে যাওয়ার জন্য তো তার জন্ম হয়নি।
আরও পড়ুনঃ নেমেসিস নাজিম উদ্দিন PDF রিভিউ | Nemesis Book Summary
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ-
বেগ-বাস্টার্ড সিরিজের সাথে, বলতে গেলে লেখক নাজিম উদ্দিনের লেখার সাথে আমার পরিচয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শুরু করেছিলাম নেমেসিস দিয়ে,, এরপর করাচি, নেক্সাস, কনফেশন পড়ে শেষ করেছি ফেব্রুয়ারিতেই। মার্চে পড়ি কন্ট্রাক্ট। কোনটার পর কোনটা ধারণা ছিলো না, যেটা পাইছি পড়ে শেষ করেছি।
এরপর মার্চ আর এপ্রিল মিলিয়ে উনার বাকি মৌলিক বইগুলো পড়ে শেষ করি (সম্ভবত ১টা বাকি এখনো)।
তো, নেক্সট এর পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে এসব ব্যাক্তিগত টুকটাক কথা কেন লিখছি ভাবছেন তো? এইজন্য লিখলাম যে_ একটা মানুষ কতটুকু বড় মাপের লেখক হলে একজন পাঠকের কাছে এতোটাই গুরুত্ব পায়, যতটা পেলে তিন মাসে একজন লেখকের ১১/১২ টা বই পড়ে শেষ করা যায়..
তো, সবাই নেক্সট এর জন্য দুই তিন বছর অপেক্ষা করলেও আমার অপেক্ষার সময় ততটা দীর্ঘ ছিলো না।
নেক্সট সম্পর্কে কিছু লিখি এইবার….
বেগ-বাস্টার্ড সিরিজের ৬ষ্ঠ বই নেক্সট। সিরিজের প্রথম ৫টা বইয়ের তুলনায় এই বইটা বেশি ভালো লেগেছে। দক্ষ হাতে মেপে মেপে একটু একটু করে তৈরী করা হয়েছে এক একটা চরিত্র।
সিরিজের আগের বইগুলোতে অমূল্য বাবুকে লেখক সেভাবে সামনে আনেননি। শুধুমাত্র বাস্টার্ড ওরফে বাবলুর মেন্টর হিসেবে দেখিয়েছেন।
এই বইটিতে অমূল্য বাবুকে মোটামুটি মেইন ক্যারেক্টার বলা যায়।
ব্ল্যাক রঞ্জুর কি খবর? এভাবে পুড়িয়ে মারা’র পরও সে কি সত্যিই বেঁচে আছে? জেফরির ধারণা রঞ্জুর নাম ভাঙিয়ে চাঁদা চাওয়া,অপহরণ সহ খুনের মতো জঘন্য কাজগুলো করছে অন্য কেউ। সাধারণত বড় কোন সন্ত্রাসীর মৃত্যুর পর দলের অন্য কেউ যেটা করে।
আরও পড়ুনঃ কন্ট্রাক্ট নাজিম উদ্দিন PDF রিভিউ | Contract by Nazim Uddin
কিন্তু রাজাদের ও রাজা থাকে… এ কিং অব কিংস…..
এমন কেউ কি আছে যে পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছে..! থাকলে সে কে..??
লেখক লেখায় তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এখানেই।
প্রধানমন্ত্রীর কাছের একজন কে রঞ্জুর লোকেরা টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়ার পরপরই খুন হয়ে যায় ঐ লোক। কেস হস্তান্তর করা হয় হেমিসাইড ডিপার্টমেন্ট কে। কারণ রঞ্জুকে নিয়ে এর আগেও কাজ করেছে জেফরি বেগ। কিন্তু মৃত মানুষকে খুঁজে বের করা ততোটা সহজ তো নয়। বাস্টার্ড কি এবারও তার কাজ এগিয়ে দিবে ? সবসময়ের মতো এবারও তাদের দুইজনের লক্ষ্য একই ব্যাক্তি…
বেগ আর বাস্টার্ড এর সম্পর্ক অনেকটা টম এন্ড জেরীর মতো। সারাক্ষণ একজন অন্যজনের বিপরীতে যুদ্ধ আবার দিনশেষে ঠিকই বন্ধুত্বের সুভাস ছড়ায়…!
বইয়ের একটা জায়গায় আমার এতো ভালো লেগেছে যে সেখান থেকে দুই চারটা লাইন দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। আশা করছি স্পয়লার হয়ে যাবে না…
❝❝ গেটের কাছে বসেছিলো নন্দ,বাবুকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। ছেলেটার মাথায় হাত বোলালো অমূল্য বাবু। “ভয় পেয়ে গেছিলি, না?”
নন্দ কিছুই বলল না। ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরেই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল বাবু।
দূর থেকেও বাবলু দেখতে পেলো ছেলেটা কাঁদছে। কয়েক মূহুর্তের জন্য ভাবলো, নন্দর মতো সেও কি কখনো কোন দিন অমূল্য বাবুকে জড়িয়ে ধরতে পারবে?
মুচকি হাসলো সে। কিছু কিছু সম্পর্ক যতো গাঢ়ই হোক, অদৃশ্য একটা দেয়াল থাকে, সারা জনমেও সেই দেয়াল ভাঙা যায় না! অমূল্য বাবুর সাথে তার সম্পর্ক টা হয়তো সে রকমই।❞❞
আরও পড়ুনঃ আট কুঠুরি নয় দরজা বই রিভিউ PDF | সমরেশ মজুমদার উপন্যাস
প্রচ্ছদ, প্রডাকশন ও অন্যান্যঃ-
এই বইয়ের প্রচ্ছদ টা অদ্ভুত সুন্দর। কিন্তু উপরের কাভার টা একটু পাতলা মনে হইছে, তাছাড়া খুলে রাখারও সিস্টেম নাই। তাই একটু সাবধানে পড়তে হয়েছে..!
বানান ভুল কিংবা টাইপিং মিস্টেক চোখে পড়েনি। এক জায়গায় নাম নিয়ে একটু উল্টাপাল্টা লাগছিলো, কিন্তু পরে ক্লিয়ার হইছি – এক লোকেরই দুই নাম।
সব মিলিয়ে চমৎকার একটা বই। তবে সিরিজের বাকি বইগুলো উল্টাপাল্টা পড়লেও তেমন সমস্যা নাই কিন্তু অন্য বইগুলো না পড়ে কেউ এটা পড়তে শুরু করলে কিছু না বুঝতে পারার প্রবল সম্ভাবনা আছে। তাই নতুন পাঠকদের জন্য পরামর্শ থাকবে আগের ৫টা বই না পড়ে এটা পড়তে যাবেন না। ভালো লাগবে না আপনার, দোষ হবে লেখকের।
যাই হোক, প্রিয় লেখকের সেরা একটা বই পড়লাম। যতটুকু আশা করেছিলাম তারচেয়ে অনেক বেশি ভালো লেগেছে।
আমার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু এখন আমি নাজিম উদ্দীন ভাইয়ার রীতিমতো ভক্ত। ভয়ে আছি, শাওন কিন্তু প্রথমে হুমায়ূন আহমেদ এর ভক্তই ছিলো। বই পড়া অব্যাহত থাকুক। বই হোক প্রিয় অভ্যাস। হ্যাপি রিডিং।
আরও পড়ুনঃ সিক্রেটস অব জায়োনিজম বই PDF রিভিউ Secrets of Zionism Bangla