যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ পরিণীতা
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাংলা অভিধান বলছে, পরিণীতা শব্দটি একটি স্ত্রীবাচক শব্দ। এর অর্থ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মেয়ে অর্থাৎ বিবাহিত কোন মহিলাকে বুঝিয়েছে। দেখা যাক গল্পে সেই পরিণীতা কে । শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত জনপ্রিয় এই উপন্যাসটি ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কলকাতার পটভূমিতে রচিত হয় পরিণীতা উপন্যাস।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
উপন্যাসের মূল চরিত্র ললিতা, বয়স তেরো। ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়ে সে তার মামা গুরুচরণের নিকট মানুষ হয়েছে। গুরুচরণবাবু পেশায় একজন ব্যাঙ্কের কেরানী। ষাট টাকা বেতনে তার সংসার চলে। পাঁচ কন্যার জনক তিনি। দুই কন্যাকে অনেক কষ্টে বিবাহ দিয়েছেন। পঞ্চম কন্যার জন্ম নেওয়ার শুভ সংবাদটি তাকে কিছুটা ব্যথিত করে তুললো। কারণ গত বছর দ্বিতীয় কন্যার বিয়ে তিনি খুব কষ্ট করে দিয়েছেন। নিজ বাড়িটি একসময়ের গুড়ের কারবারে লক্ষপতি ব্যবসায়ী নবীন রায় এর কাছে বন্ধক রেখে টাকা নিয়েছিলেন। নবীন রায় সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দিয়েছেন। যার অর্ধেক পাওনা এখনো পরিশোধ হয়নি।
নবীন রায়ের দ্বিতীয় এবং ছোট পুত্র শেখরনাথ, বয়স ২৫/২৬। এম.এ শেষ করে গত বছর এটর্নি হয়েছে। শেখরদের তিনতলা বাসার একটি ছাদ ললিতার মামার বাসার ছাদের সাথে মিলে যাওয়ায় খুব ছোটবেলা থেকেই তার এ বাসায় আসা যাওয়া। শেখরের মা ভুবনেশ্বরী গুরুচরণের পুরো পরিবারকে খুব ভালবাসতো। ললিতাকে তিনি নিজের মেয়ের মতই ভালবাসতেন। ললিতা ভবনেশ্বরীকে মা বলেই সম্বোধন করতো।
আরও পড়ুনঃ পুতুল নাচের ইতিকথা রিভিউ PDF | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস সমালোচনা
ছোটবেলা থেকেই ললিতার সাথে শেখরের সম্পর্কটা বেশ গভীর ছিল। শেখরকে সে দাদা বলেই ডাকতো। তার কাছে টুকটাক পড়ালেখা এটা ওটা শিক্ষা নিয়ে আসছে ললিতা। শেখরের স্নেহের বিশেষ পাত্র ছিল ললিতা। সকলে এটা জানতো। কোন কাজ সে শেখরের অনুমতি ছাড়া করেনা। শেখরের ঘর গোছানো সহ যাবতীয় সকল কাজ ললিতা করে দিতো। দুজনের প্রতি দুজনার দুর্বলতা কখনো কারো চোখে পড়তোনা।তা রা নিজেরাও প্রকাশ করতোনা। তাদের সম্পর্কটাকে কেউ কোনদিন অন্যভাবে কল্পনা করেনি। কারণ সকলে ললিতাকে সে বাসার মেয়ে বলেই স্নেহ করতো। ললিতার প্রতি শেখরের স্নেহ, অধিকার, ভালবাসাটা যে তাকে আপন করে পাবার জন্য প্রবল হয়ে উঠেছিল সে কথা প্রকাশ করার সুযোগ, সাহস তার হয়ে উঠেনি।
একদিন সেই সুযোগ এলো। সুন্দর জ্যোৎস্নাত শীতের রাতে গাঁদাফুলের মালা পড়ানোর মধ্যদিয়ে সে ললিতাকে নিজের করে নিয়েছিল। ললিতাও কোনরকম আপত্তি না জানিয়ে নিজেকে শেখরের স্ত্রী হেসেবেই মেনে নিয়েছিল। সেই থেকে তারা নিজেদের বিবাহিত মনে করতো।
আরও পড়ুনঃ রিক্তের বেদন গল্পের বিষয়বস্তু | রিভিউ | PDF | কাজী নজরুল ইসলাম
ললিতার শেখরদের বাসা ছাড়া চারুবালা তার সখী তাদের বাসায়ও নিয়মিত যাওয়া আসা হতো। চারুর মামা গিরীন এখানে বি.এ. পড়তে এসেছেন। ললিতাকে দেখে তার ভাল লেগে যায়। ললিতার প্রতি ভাললাগা থেকে ললিতার মামার বাসায় তার আসা যাওয়া শুরু হয়। গুরুচরণের সাথে আলাপে আলাপে সে সুদের ব্যাপারটি জেনে যায় যদিও এটি সে চারুর মায়ের কাছে আগেও শুনেছিল। এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সাহায্য করার।
একসময় গিরীন গুরুচরণের সমস্ত সুদ পরিশোধ করে। অন্যদিকে গুরুচরণ যথারীতি দীক্ষা গ্রহণ করে ব্রাহ্ম হয়ে যায়। গিরীনের সাথে ললিতার বিবাহের আলাপটা প্রায় পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।
গুরুচরণের নিজ জাত ত্যাগ, ললিতার সাথে গিরীনের বিয়ের আলাপ সবকিছু শেখরকে বিচলিত করে তোলে। তার বিবাহের কথা, ললিতা পাওয়ার আশা সব কিছু মলীন হয়ে যায়। ললিতার সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক সে ছিন্ন করে। ললিতা এক প্রকার ভুল বুঝে সে। তার বাবার মৃত্যুর পর সেও বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুনঃ এইসব দিনরাত্রি হুমায়ুন আহমেদ উপন্যাস রিভিউ | Eisob Dinratri Book PDF
ললিতা, শেখর যে বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করেছিল সে বন্ধন ভেঙে গিরীনের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল নাকি সকল প্রকার ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ললিতা শেখরের সম্পর্কটি পূর্ণতা পেয়েছিল সেটি উপন্যাস পড়লেই জানতে পারবেন। কষ্ট করে নিচের থেকে পুরো উপন্যাসটি পড়ে নিন। প্রয়োজনে ডাউনলোড করেও রাখতে পারেন।
আমাকে রেটিং দিতে বললে আমি ১০/১০ দিয়ে দিবো। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। অনেকেই এই চমৎকার উপন্যাসটি পড়েছেন। যারা পড়েননি অবশ্যই পড়ে নিবেন। আশা করি শরৎবাবু আপনাকে হতাশ করবেনা।
পরিণীতা চলচ্চিত্র
উপন্যাসটির গল্প অবলম্বনে উপমহাদেশের কয়েকটি দেশ বিভিন্ন ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। সর্বপ্রথম ১৯৪২ সালে পশুপতি চট্টোপাধ্যায় হিন্দি ভাষায় নির্মাণ করে “পরিণীতা” (১৯৪২) চলচ্চিত্রটি। কিন্তু সে সিনেমার কলাকুশলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তারপর ১৯৫৩ সালে এসে বিমল রায় আবারো হিন্দি ভাষায় পরিচালনা করেন “পরিণীতা” (১৯৫৩)চলচ্চিত্রটি যেখানে অভিনয় করেছেন অশোক কুমার, মিনা কুমারী, মনোরমা এবং নাজির হোসেন। ভারতীয় বাংলা ভাষায় ১৯৬৯ সালে অজয় কর পরিচালিত একই নামের সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলেন টলিউডের মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ও সমিত ভঞ্জ। বাংলাদেশেও সিনেমাটি ১৯৮৬ সালে রিমেক করেন চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির, যেখানে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, অঞ্জনা রহমান, ও আশীষ কুমার লোহ। সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বেশ কয়টি পুরস্কার তুলে নেয়। ২০০৫ সালে এসে বিদ্যা বালান, সাইফ আলী খান, সঞ্জয় দত্ত, ও সব্যসাচী চক্রবর্তীকে নিয়ে প্রদীপ সরকার আবারো হিন্দি ভাষায় তৈরি করেন “পরিণীতা” (২০০৫) সিনেমাটি।
আরও পড়ুনঃ শেষের কবিতা PDF | সারসংক্ষেপ | Shesher Kobita | Read Online