যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
নব্বই দশকে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করেছেন তাদের অনেকেই ‘ফুটবলের রাজা’ শিরোনামে একটি লেখা পাঠ্য হিসেবে পেয়েছিলেন। সেই লেখাটিতে পেলের ছোট্ট একটা জীবনী তোলে ধরা হয়েছিলো। সদ্য প্রয়াত ফুটবল রাজা পেলেকে স্মরণ করছি পাঠ্যবইয়ের সেই লেখাটি থেকে।
সবাই তাকে আদর করে ডাকে কালোমানিক। তার আসল নামটি বেশ বড়। এডসন অরান্তেস দো নাসিমেনতো। তবে ঐ নামে তাকে কম লোকেই চেনে। পেলে নামেই এই ফুটবলের রাজা এখন সারা বিশ্বে পরিচিতো।
১৯৪০ সালের ২৩শে অক্টোবর পেলের জন্ম হয় ব্রাজিলের ছোট্ট এক শহরে। তাঁর জীবন রুপকথার মতো। কালো লিকলিকে ছেলেটির এমন দিন গেছে যখন দু বেলায় একবারো খাবার জুটে নি। প্রচন্ড শীতেও মেলেনি একটা গরম কম্বল। আর আজ তিনি বিপুল সম্পদের মালিক।
পেলের বাবাও ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়ার। নানা দুঃখ কষ্টের মধ্যেও তাঁর একমাত্র আনন্দ ছিলো ফুটবল খেলা। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, পেলে তাঁর বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন।
পেলের যখন খুব অল্প বয়স তখনই পুরোনো চটের তৈরি বল তাঁর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বাবা লাথি মারতে বলতেন। দু একটি লাথি বলে লাগলেই তিনি চিৎকার করে উঠতেন, শাবাশ। বন্ধু বান্ধবদের প্রায়ই বলতেন, দেখে নিও, আমার ছেলে খুব বড় খেলোয়ার হবে। বাবার কথা ফলেছে। পেলে এখন ফুটবলের রাজা খেতাবে ভূষিতো।
বাবার কাছে প্রেরণা লাভ করলেও পেলেকে তৈরি করেন ব্রাজিলের এককালীন সেরা খেলোয়ার বিত্রোর। বিত্রোর তাঁর সমস্ত ক্রীড়া চাতুর্য পেলেকে শিখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই ছেলে শুধু ব্রাজিলের নয়, সারা পৃথিবীতে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। পেলের বয়স যখন ১৪ বছর তখন থেকেই তিনি ব্রাজিলের বিখ্যাতো একটি ফুটবল ক্লাবে খেলতে শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে ঐ ক্লাবের সিনিয়র টিমে যোগ দেন।
আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ করেন ১৯৫৭ সালে। পরের বছর ব্রাজিল প্রথমবারের মতো ফুটবলের বিশ্বকাপ জুলেরিমে জয় করে। আঠারো বছরের পেলে এই খেলায় যে ক্রীড়ানইপুননো দেখিয়েছিলেন, তা দেখে ঝানু খেলোয়াররাও হতোবাক হয়ে যান। উনিশ শো সত্তর সালে ব্রাজিল তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে সারা দুনিয়াকে বিস্মিতো করে দেয়। এবারো পেলে এমন খেলা খেললেন যে, নানা দেখের ডাকসাইটে ফুটবল খেলোয়াররা তাকে সর্বকালের সেরা খেলোয়ার বলে স্বীকার করে নেন।
পর্তুগালের ইউসোবিও তো আগেই বলেছিলেন, পেলের মতো খেলা আমি শুধু স্বপ্নেই খেলে থাকি। তাঁর সঙ্গে এবার কন্ঠ মেলালেন ইংলেনডের চার্লটন, ববিমুর, জার্মানির বেকেন বাওয়ার প্রমুখ। চার্লটন বললেন, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ফুটবলের জন্মই হয়েছিলো বুঝি এই জাদুকর খেলোয়ারের জন্য।
আরও পড়ুনঃ HUBLOT কি? বিশ্বকাপ ফুটবলে হাবলট কেন ব্যবহার করা হয়? জানুন বিস্তারিত
প্রথম শ্রেণির ফুটবল খেলায় যেদিন তাঁর এক হাজার গোল পূর্ণ হলো, সেদিন তিনি আনন্দে অভিভুতো হয়ে পড়েছিলেন। গোল করবার পর বলটিকে হাতে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন। এরপর পচাত্তর হাজার দর্শক যখন উঠে দাঁড়িয়ে তাকে অভিনন্দন জানালো তখন কিন্তু তিনি ফুটবলের কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে গেলেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, এখন আমার শুধু সব শিশুর কথাই মনে পড়ছে, যারা অনাহারে রয়েছে। তাদের কথা যেনো আমরা ভুলে না যাই।
অনেকে বলেন, পেলে জাত খেলোয়ার। দ্বিতীয় পেলে কোনোদিন হবেনা। কিন্তু পেলে নিজে বলেছেন, জাত খেলোয়ার বলে কিছু আছে এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। সাফল্যের জন্য প্রয়োজন অনুশীলন, কঠোর পরিশ্রম এবং নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা।
দীর্ঘ ২২ বছর ফুটবল খেলে পেলে অবোসর নিয়েছেন ১৯৭৭ সালের পয়লা অক্টোবর। তিনি ফুটবল খেলেছেন ৬৫ টি দেশে। প্রথম শ্রেণীর ১৩৬৩ টি খেলায় অংশ নিয়ে গোল করেছেন ১২৮১ টি। এতো গোল আর কোন ফুটবল খেলোয়ার করতে পারেন নি।
পেলে ছোটদের খুব ভালোবাসেন। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, লেখাপড়া আর ফুটবল এই দুইয়ের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। একই সঙ্গে পড়াশোনা আর খেলাধুলা করেও জীবনে সাফল্য লাভ করা সম্ভব। সফলতা বা বিফলতা নয়, মানুষ হওয়াটাই আসল কথা। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, অন্যের অনুকরন না করে স্বকীয়তা অর্জন করা।