যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইটা নিয়া কালচারাল মাঠ গরম।
মিডিয়ায় প্রতিদিন খবর হইতেছে, এত এত কপি বিক্রি হইতেছে,অথচ বইয়ের ভেতরের মাল-মশলা বা কন্টেন্ট বিষয়ে কোনো ধরনের আলাপ আপনি মিডিয়ায় পাবেন না।
অদ্ভুত না?
এই পোস্ট ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইয়ের একটা অপূর্ণাঙ্গ রিভিউ। অপূর্ণাঙ্গ কারণ লিখতেছি ১ বছর আগের পাঠের ভিত্তিতে।
এখনও পড়েন নাই যারা, আশা করি বইটা সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাবেন।
বইয়ের নামটা দেখে ১টা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরতেছিলো: ফাহাম আব্দুস সালাম নিজেরে কি বাঙালি মনে করেন?
আর বাঙালির সর্বব্যাপী মিডিয়োক্রিটির বিষয়ে তার যে থিসিস সেইটার মধ্যে নিজেরে কি আউটসাইডার হিসেবে দেখেন নাকি বাঙালি নামের ভেন ডায়াগ্রামের মধ্যে তিনি নিজেরেও অন্তর্ভুক্ত করেন?
ওকে, অনেকের মনে হইতে পারে আমি হয়তো ফাহাম সাহেবকে এ্যাড হোমিনেম ধরণের এটাক করতে যাইতেছি। ঘটনা মোটেই তেমন না।
প্রশ্নটা করছি কারণ আমি নিজেই ফাহামের সমস্যায় পড়ছিলাম ‘উগান্ডিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ এ্যান ইনক্রেডিবল নেশন’ নামে ১টা স্যাটায়ারিক্যাল ফিকশনাল ননফিকশন লিখতে গিয়া।
(বই রচনা শেষ করছি ২০২১ এর ডিসেম্বরে। তবে রেজিম চেঞ্জ না হইলে এই বই প্রকাশ করার সম্ভাবনা বা আমার দু:সাহস কোনোটাই নাই।)
অর্থাৎ ১টা জাতির সামষ্টিক প্রবণতা, মনস্তত্ত্ব বুঝতে চাওয়া বা বিচার করার কিছু ইনহেরেন্ট সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা থাকে৷ আপনি কোন পার্স্পেক্টিভ ও পাটাতন থেকে ইভেন্ট বা বিষয়রে দেখবেন?
তাছাড়া পর্যালোচনায় সহায়ক হাইপোথিসিস দাড় করাইতে পদ্ধতিগত বিবিধ কম্প্রোমাইজে যাইতে হয়। না চাইলেও অতিসরলীকরণ বা স্টেরিওটাইপিং-এর ফাঁদে পড়ার সমূহ ঝুকি থাকে।
এইসব কারণে প্রকাশের পরপরই আগ্রহ জাগছিলো।
আমার কৌতূহল ছিলো: এই সমস্যার মোকাবেলা ফাহাম ভাই ক্যামনে করেন?
বইটা কোন ঘরানার?
নীরদ সি চৌধুরীর ‘আত্মঘাতী বাঙালি’, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘সংগঠন ও বাঙালি’ কিংবা বিনয় ঘোষের বাঙালি বিষয়ক বইপত্র আছে।
হুমায়ূন আজাদের ১টা প্রবন্ধ আছে, ‘বাঙালি একটি রুগ্ন জনগোষ্ঠী’ ( বাঙালিরে নিয়া খুবই টক্সিক ধরণের স্টেরিওটিপিক্যাল কমেন্ট আছে। অসহ্য উন্ন্যাসিক সুপিরিয়র ভাব ইগনোর করলে, ‘বাঙালির সামষ্টিক মৌল প্রবণতা’ টাইপ কিছু অনুমানও হয়তো পাওয়া যায় প্রবন্ধটাতে)।
পরিসরটা হালকা টানলে, আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ বা মোহম্মদ আজমের ‘সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ’ও এই ঘরানার বই।
‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইয়ে জাতি বা নৃগোষ্ঠী হিসেবে বাঙালিরে বুঝতে বা বিচার করতে চাওয়ার আন্তরিক চেষ্টা আছে, উপরে উল্লেখিত বইগুলার ঘরানার মতোই।
‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’কে উপরের শ্রেণিভুক্ত করা যায়।
বইয়ের বিষয়বস্তু কী?
অনেকগুলা বিষয়ে লেখার সংকলন। দিদেরো ইফেক্ট নিয়া যেমন আলাপ আছে, আছে বাংলা নিউমেরাল নিয়াও প্রবন্ধ।
তবে বইয়ে বারবার ঘুরে-ফিরে আসছে বাঙালি বর্গটা। বাঙালির স্বভাব-চরিত্র, নানান অসঙ্গতি, সামাজিক আচরণ-প্রবণতার সুলুকসন্ধানই বলা যায় মূল আলোচ্য বিষয়।
ঠিক কী কী কারণে বাঙালি মিডিয়োকার?
ফাহাম ভাইয়ের আর্গুমেন্ট ও আমার প্রতিক্রিয়া—
ফাহাম বাঙালির স্বভাবের বর্ণনা বেশি করছেন, কারণ বলার চাইতে৷
তবুও বইটা পড়ে মিডিয়োক্রিটির কারণ হিসেবে তার কিছু প্রধান অনুমান আছে বলে মনে হইছে। ৩টা কারণ মেজর। যথা—
১.
বাঙালি ‘পলিটি’র ধারণা বুঝে ওঠার আগেই ১টা রাষ্ট্র পায়া গেছে।
২.
কলোনির আন্ডারে থাকায়, পুজির ধারাবাহিক বিকাশ এই জনপদে ঘটে নাই। সমাজ ফিউডালিজম থিকা সরাসরি পুজিবাদে লাফ মারছে অথচ বাঙালির রয়ে গেছে সেই ফিউডাল যুগের মন।
৩.
বাংলা ভাষার ইনহেরেন্ট স্ট্রাকচার
১ম দুইটা কারণ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং ২টাই বেশ পুরানা কিন্তু চালু মত। এবং ব্যাখ্যা হিসাবে প্রবলেমেটিক।
(নীরদ সি চৌধুরী, বিনয় ঘোষ, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, গোলাম মুরশিদ, এমনকি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখাতেও এই আর্গুমেন্টের কোনো না কোনো ভার্শন আপনি পাবেন।)
সমস্যা হইতেছে, (পশ্চিম) ইউরোপীয় স্টাইল ফিউডালিজম ভারতীয় সমাজে কোনো কালেই ছিল না।
যেমন, দিল্লী সুলতানাত প্রতিষ্ঠার ঘটনাই ধরেন।
১১৯০ সালের দিকে, পূর্ব ইরানের শাসক মুহাম্মাদ ঘুর তার তুর্কি স্লেভ আর্মিরে হিন্দুস্তান জয়ের উদ্দেশ্যে পাঠাইলেন। এই স্লেভ জেনারেলরা কালক্রমে ঠিকই ইন্দো-গ্যাঞ্জেটিক ভ্যালি জয় করে।
এই স্লেভ জেনারেলরা গ্যারিসন করছে যথাক্রমে—
ইঈলদিজ গজনিতে,
বখতিয়ার খিলজি বাংলায়,
কাবাচা পাঞ্জাবে এবং
আইবেক দিল্লিতে।
মুহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর ক্ষমতার লড়াইয়ে আইবেক জিতে। ফলে দিল্লীর ইম্পেরিয়াল উত্থান ও ভারতে কয়েক শ’ বছরের জন্যে স্লেভ ডাইন্যাস্টির সূচনা ঘটে।
স্লেভ ডাইন্যাস্টিতে ১জন দাসের পরে উত্তরাধিকারসূত্রে আরেক দাস ক্ষমতারোহন করতো।
‘স্লেভ এলিট বা অভিজাত দাস’ এর এই আইডিয়াটাই ইউরোপীয়দের চোখে ছিল অবিশ্বাস্য। এমন কমপ্লেক্স সোশিও-পলিটিকাল স্ট্রাকচার ইউরোপীয় স্কলারদের মাথা ঘুরায়ে দিছে। বার্নার্ড লুইস-এর মতো অনেকের মনে হইছে ‘এ পিকুলিয়ার সোশ্যাল স্ট্রাকচার অফ মুসলিম সোসাইটি’। ইউরোপীয় চোখে এইটা পিকুলিয়ার ঠেকছে। অথচ এশিয়ার ইতিহাসে কিন্তু এইটা ছিল খুবই কমন।
কমপ্লেক্স স্ট্রাকচারের ভারতীয় সমাজরে ইউরোপীয় ফিউডালিজমের লেন্সে দেখতে গেলে গড়বড় হয়।
ফলে ইউরোপীয় (তাও পশ্চিম ইউরোপীয়। পূর্ব ইউরোপে—বিশেষত বলকান অঞ্চলে—কিন্তু আবার অনেকখানি আলাদা চেহারা ছিল!) ফিউডালিজম থেকে বুর্জোয়া পুজির বিকাশের মধ্যে দিয়া, ‘এনলাইটেনমেন্ট’-উত্তর যে ব্যক্তি ধারণার বিকাশ ঘটছে (পশ্চিম) ইউরোপে, সেই লেন্সে আপনি ভারতীয় সমাজে ব্যক্তির বিবর্তন,/বিকাশরে কোনোভাবেই দেখতে বা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
করলে গভীর প্যারাডাইম–জনিত বিভ্রাট তৈরি হয়। বিজ্ঞান দিয়া ধর্ম বা ধর্ম দিয়া বিজ্ঞানরে ব্যাখ্যা করতে গেলে যে বিভ্রাট দেখা দেয়, অনেকটা তেমন।
‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইয়ে এইটা আছে।
৩. বাংলা ভাষার ইনহেরেন্ট স্ট্রাকচার—
লেখকের আরেকটা বড় দাবি, বাঙালির মিডিয়োক্রিটির কারণ তার ভাষাগত স্ট্রাকচার। এইটাই মূলত বইয়ের প্রধান দাবি।
যেমন– বাঙালি নাকি প্রচুর মিথ্যা বলে আর অতিরঞ্জন করে। এর কারণ হিসেবে ফাহাম ভাই বলতেছেন:
‘বাঙালি মিথ্যা ভালবাসে কারণ মিথ্যা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় অবশিষ্ট নাই।’
অবশিষ্ট নাই কারণ—ফাহাম ভাইয়ের মতে— বাংলার ভাষাকাঠামোর কারণেই সে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়। ‘ডিসটিংগুয়িশ’ করার মতো পর্যাপ্ত ভাষিক রিসোর্স বাংলায় নাই। ফলে ডিসটিংকশনের খাতিরে সে কথায় অতিরঞ্জন করে, মিথ্যা মেশায়।
অনুমানটা এমন যে, বাংলা ভাষা সূক্ষ্ম চিন্তা ও প্রিসিশনের ক্ষেত্রে ইনহেরেন্টলি ইনকেইপাবল।
এই অনুমান সমস্যাজনক নানা কারণে। কোনো ভাষাই সক্ষমতার দিক দিয়ে অন্য ভাষা থেকে উন হয় না। রাজনৈতিক ক্ষমতার, ঐতিহাসিক ভিন্নতার কারণে, ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় নির্দিষ্ট কালে, ভিন্ন ধরণের বিষয়ের চর্চা হয় এবং ভিন্ন স্বভাবজাত মনে হয়, নির্দিষ্ট ভাষা কোন নির্দিষ্ট চিন্তার ক্ষেত্রে পেছানো মনে হয়।
আদতে, এইটা ভাষার ইনহেরেন্ট কোনো দূর্বলতা বা সমস্যা না। ভাষায় রিসোর্স আছে ঠিকই, প্রয়োজন দেশ ও রাজনীতি ঠিক কইরা সেই রিসোর্সরে খাটায়ে নেয়ার।
এমনকি ১/দেড় শ’ বছর আগের রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী কিংবা শিবনাথ শাস্ত্রীদের ( যদিও ত্রিবেদী বা শাস্ত্রীরা ছিলেন সংখ্যায় অল্প, কিন্তু ছিলেন তো!) রচিত বাংলা গদ্য দেখলেই বুঝবেন এই অনুমান কতখানি ভুল। এদের রচনা প্রমাণ করে যে, চাইলে বাংলা ভাষাতেও টেকনিকেল বা বিশেষায়িত চিন্তার প্রিসাইস আর্টিকুলেশন সম্ভব।
কিংবা ধরেন, নব্যন্যায়ের মতো ব্যাপক আকারের দার্শনিক আন্দোলন কিন্তু এই বাংলায়–নদীয়াতেই ঘটছে!
আর এই নব্যন্যায় বা ২য় ন্যায়দর্শন তো ছিলো মূলত পিওর লজিক আর আর্গুমেন্টের মামলা, যা এখনও প্রাসঙ্গিক। এর চেয়ে ★প্রিসাইস★ জিনিস আপনি ২০-শতকের পশ্চিমা এনালিটিক্যাল ফিলসফিতেও খুব বেশি পাবেন না। বাঙালি জাতিবাদী জোশ থেকে এই কমেন্ট করতেছি না, আমি জাতিবাদী না। জাস্ট ক্রসচেক করলেই প্রমাণ পাবেন।
এখন ‘বাংলা ইনহেরেন্টলি নির্দিষ্ট ধরণের চিন্তা বা আইডিয়া ধারণ করতে অপারগ’ —এই অনুমান বাদ দিলে ফাহাম ভাইয়ের অধিকাংশ আর্গুমেন্ট কমজোরি ও নাজুক হয়ে পড়ে।
হ্যা ফাহাম ভাই অবশ্য এবসলিউট ট্রুথের দাবি করেন নাই। হাইপোথিসিস আকারেই বলছেন।
এই হাইপোসিসের বিপক্ষে আমি আরও ২টা দরকারি কথা বলতে চাই:—
১মত—স্পষ্টত উল্লেখ বা বিস্তারিত না বললেও ফাহাম ভাইয়ের এই আর্গুমেন্ট মূলত ভাষাতত্ত্বের ১টা হাইপোথিসিসের উপর দাঁড়ানো।
লিঙ্গুয়িস্টিক রিলেটিভিজম (লি.রি) কিংবা সাপির-হোরফ হাইপোথিসিসও নামেও পরিচিত এই হাইপোথিসিসের অনেকগুলা ভার্সন আছে। সোজা ভাষায় আইডিয়াটা মোটামুটি এমন—
কোনো ভাষার স্ট্রাকচারই ওই ভাষাভাষীদের দুনিয়াকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি (কগনিশন), পারসেপশনের ধরণকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে।
হাইপোথিসিস হিসেবে লি.রি. সুন্দর। সমস্যা হইতেছে ভাষাতত্ত্বে এইটা মোটামুটি পরিত্যক্ত আইডিয়া। এমনকি লি.রি’র হার্ডকোর সাবস্ক্রাইবার ভাষাতাত্ত্বিকরাও সর্বোচ্চ লি.রি’র সফট ১টা ভার্শন গ্রহণ করেন।
(এবং ২য়ত—)
ফাহাম তার বইয়ের আর্গুমেন্টে এই হাইপোথিসিস কেন্দ্রে রাইখা সাজাইছেন খালি না, লি.রি’র ১দম এক্সট্রিম ভার্শনটা নিছেন।
এক্সট্রিম এই ভার্শনের নাম লিঙ্গুইস্টিক ডিটার্মিনিজম (লি.ডি) বা ভাষাগত নির্ধারণবাদ।
লি.ডি. অনুযায়ী, মানুষের চিন্তাভাবনা, অভিব্যক্তি তার ভাষাকাঠামো দিয়াই মূলত নির্ধারিত হয়। মানে আপনি আপনার ভাষাকাঠামোর কারণেই নির্দিষ্ট ধরনের চিন্তা করতেই পারবে না, অথবা চিন্তার নির্দিষ্ট খুপড়িতে আটকায়ে যাবেন। আপনার কোনো মুক্তি নাই।
এই লেভেলের ডিটার্মিনিজম হাস্যকর।
বাঙালির মিডিয়োক্রিটির ব্যাখ্যায় এমন বিতর্কিত ১টা হাইপোথিসিসরে লেখক প্রধান টুল হিসেবে ইউজ করবেন আশা করি নাই।
আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয়—
প্রমিত বাংলা যে ১ অচলায়তন, অনেকভাবে বিস্তারিয়া সেটা বলছেন। এইখান থেকে উত্তরণের জন্যে, লেখকের মতে, বাংলা ভাষার নতুন স্ট্রাকচার দরকার।
‘কিন্তু বাংলা ভাষার এই স্ট্রাকচার ধারণ করতে হোলে আমাদেরকে অপ্রমিত বাংলার শরণাপন্ন হতে হবে। অর্থাৎ ‘আবার জিগস’, ‘গুগলাও’ ধরণের বাংলা। আমি এই বাংলাকে সম্ভাবনাময় মনে করি ঠিক এ কারণে না যে অপ্রমিত বাংলা মাত্রই দুর্দান্ত চাছাছোলা ভাষা৷ কিন্তু এই বাংলা অভিভাবকত্বে জর্জরিত না, যে কেউ যেভাবে ইচ্ছে দুমড়ে-মুচড়ে ব্যবহার করতে পারছেন- যে কারণে অপ্রমিত বাংলার পক্ষে সম্ভব হবে বিশাল পরিবর্তনকে ধারণ করবার। যে কেউ যেভাবে, ইচ্ছা ব্যবহার করবে এই স্বাধীনতার থেকেই ভাষার উন্নতি- এই চেনা পথটা রুদ্ধ হয়েছে প্রমিত বাংলার অভিভাবকত্বে৷’ (পৃ: ৪৬)
ভালো প্রস্তাবনা। কিন্তু আইরনি হইতেছে —
পরিবর্তন ও উন্নতির জন্যে অপ্রমিতে যাওয়া দরকার, অন্তত প্রমিত কাঠামো থেকে বাইর হওয়া দরকার, প্রমিতের সমস্যাগুলো বোঝেন যিনি, তিনি নিজে বইটা লিখছেন প্রমিতে।
এটা অবশ্য কোনো মেজর ইস্যু না। কেউ ১টা তত্ত্ব দিলে, সেটা তারে নিজেরও প্র্যাক্টিস করতে হবে– এমন দাবি আমি করি না।
সবমিলে ফাহাম প্রস্তাবিত ‘বাঙালি বিষয়ক’ থিসিসে কনভিন্সড হওয়া কঠিন। তবে অন্য কিছু কারণেও বইটা গুরুত্বপূর্ণ।
‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইয়ের আমার ভাল্লাগার কিছু কথা বলি—
আমার বিবেচনায় বাংলা নিউমেরাল বা বাংলা সংখ্যাবাচক শব্দ নিয়া লেখাটা অসামান্য। বাংলা ভাষার অন্যতম সেরা, ১ অবশ্যপাঠ্য মাস্টারপিস।
বইজুড়ে ছড়ায়ে-ছিটায়ে থাকা বিচ্ছিন্ন কিন্তু, দুর্দান্ত সব পর্যবেক্ষণ। বইয়ের পয়সা এই পর্যবেক্ষণগুলাতেই ভালোভাবে উসুল হয়ে যাওয়ার কথা। বোনাস হিসেবে আছে ফাহামের সহজাত উইট। আছে মজারসব কোটেবল লাইন।
১টা গ্র্যান্ড থিয়োরি বা হাইপোথিসিস দিয়া কোনো জনগোষ্ঠীর মনস্তত্ত্ব, আচরণ ও প্রবণতা ব্যাখ্যা করতে চাওয়ায় সীমাবদ্ধতা থাকবেই। বইটাতে আছেও।
কিন্তু ফাহামের লেখার সুন্দরতম দিক উনার গদ্যের ক্লারিটি। চলতি বাংলায় আমরা যারে বলি, ত্যানা প্যাঁচানো- ফাহামের লেখা সেই ত্যানা-প্যাঁচানো থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। বেহুদা তত্ত্বের কচকচানি বা আজাইরা তথ্যের ভার নাই। ইহা কোনো কষা প্রবন্ধের বই না।
আর গদ্যের এই ক্লারিটির কারণেই আপনি তার আর্গুমেন্টের সাথে সহজে ডিস্যাগ্রি করতে পারেন। মনে হইছে লেখকেরও চাওয়া এমন যে আপনি তার সাথে দ্বিমত হন; পর্যালোচনামূলক, সংশয়ী দৃষ্টিতে চিন্তা করেন। তবে অস্বীকার করতে পারবেন না যে তার গদ্য খুব পরিচ্ছন্ন, নির্মেদ।
সহমত ব্রাদারহুড ও মিহি আধ্যাত্মিক ‘চেতনা’র
সোনার বাংলায় দ্বিমত হওয়ার কালচার তৈরি হওয়া জরুরি।
বাংলায় থট প্রোভোকিং, তর্ক -বিতর্ক উস্ককে দেওয়া বইপত্রের অনটনের বাজারে ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ তাই ইন্ট্রেস্টিং সংযোজন।
লিখেছেনঃ কে এম রাকিব