যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বই : বিষবৃক্ষ
লেখক : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রিভিউ করেছেন : Sumaiya Rimi
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “কৃষ্ণকান্তের উইল” বই টা পড়ার পরই উনার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, এখনও বিষবৃক্ষ বইটি পড়ে হতাশ হলাম না, বরং এত সুন্দর সাজানো সবকিছুর বর্ণনা এত সুন্দর, প্রতিটি কাল্পনিক চরিত্র থেকে তার পরিস্থিতির বর্ণনা ও উপলব্ধি খুবই অসাধারণ।
বঙ্কিমের উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ‘বিষবৃক্ষ’ বইয়ে বিধবা-বিবাহ ও বহুবিবাহের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বইটি শেষ করার পর এর প্রতিটি চরিত্র মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। সাধু ভাষায় লিখা হলেও বইটা পড়তে মোটেও অসুবিধা হয়নি।
নগেন্দ্র তার মনোবৃত্তি সংযত করতে পারে নি তার জন্য বিষবৃক্ষের উৎপত্তি হয়েছে । নগেন্দ্র তার সাময়িক মোহের গভীরতায় পড়ে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছে, নগেন্দ্র এর জীবনে কোনোকিছুর অভাব ছিল না, তারপরেও নগেন্দ্র বিবাহিত হয়েও কুন্দের রুপের মোহে তার প্রতি ভালবাসায় সিক্ত হয়ে যায়, সবকিছু জানার পর নগেন্দ্রের সাথে কুন্দের বিয়ে দেন নগেন্দ্র প্রথম স্ত্রী সূর্যমুখী, নগেন্দ্র হাসিমুখে তাকে বিয়ে করে।
নগেন্দ্রের প্রথম স্ত্রী সূর্যমুখী কষ্টে কাউকে না জানিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়, একমাস অতিবাহিত হওয়ার পর নগেন্দ্র তার ভুল বুঝতে পারে, ও সূর্যমুখীর খোঁজে বেরিয়ে যায়, নগেন্দ্র বুঝতে পারে ক্ষনস্থায়ী কোনোকিছুই ভালো না । মোহ আর ব্যক্তিত্ব এই দুই টাই সম্পূর্ণ আলাদা। মোহ ক্ষণস্থায়ী যেটা চোখ থাকতেও অন্ধ করে ফেলে। ব্যক্তিত্ব এর টানে একটা মানুষকে সারাজীবন মনে রাখা যাবে। শেষ পর্যন্ত নগেন্দ্র আর কুন্দের ভুলের চরম ভুলে মাসুল দিতে হয়েছিল!!! কষ্ট সহ্য করার মতো মানসিক ক্ষমতা নেই বলে শেষ পর্যন্ত এই দুই জনের একজন আত্মহত্যা করে,কিন্তু কে করে??
আরও পড়ুনঃ কমলাকান্তের দপ্তর প্রবন্ধ পিডিএফ | Komola Kanter Doptor PDF
এই বইটি থেকে কিছু কথা অনেক ভালো লাগলো —
যত্ন আর ভালোবাসা এক, ইহার মধ্যে প্রভেদ কি, আমরা স্ত্রী লোক সহজেই বুঝতে পারি।
আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া নিজে ক্ষতবিক্ষত হইয়াছি।
স্ত্রী চরিত্র মন্দ নহে, তোমাদিগের ন্যায় পুরুষের চরিত্র অতিই মন্দ, তোমাদের ধর্ম জ্ঞান নাই, পরের ভালো মন্দ বোধ নাই — কেবল আপনার সুখ খুজিয়া বেড়াও কেবল কিসে কোন স্ত্রী লোকের সর্বনাশ করিবে, সেই চেষ্টায় ফের।
আপনাকে অতি অধম লোকে ভালবাসিলেও তাহার ভালবাসা লইয়া তামাসা করা ভালো নয়।
মনুষ্য মনুষ্য প্রভেদ এই যে কেহ কেহ আপন উছ্ছলিত মনোবৃত্তি সকল সংযত করিতে পারেন এবং সংযত করিয়া থাকেন সেই ব্যক্তি মহাত্মা কেহ বা আপন চিত্ত সংযত করতে পারে না , তাহারই জন্য বিষবৃক্ষের উৎপত্তি।
সকল সুখেরই সীমা আছে
রূপবতীর রুপ, ভোগলালসা, ভালোবাসা নয়।
যতদিন মানুষের আশা থাকে, ততদিন কিছু ই না, আশা ফুরালে সব ফুরাইলো।
আরও পড়ুনঃ মেঘনাদবধ কাব্য PDF | Meghnath Vadh Kabbo Summary in Bengali
পাঠ পর্যালোচনাঃ
“বিষবৃক্ষ”কে বলা হয়ে থাকে বাংলা সাহিত্যে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের জনক হিসেবে, আর সেরা মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস হিসেবে বলা হচ্ছে “চোখের বালি“কে। দুইটার মধ্যে আমার কাছে ‘বিষবৃক্ষ’ই বেশি ভালো লেগেছে। ‘চোখের বালি’তে মহিন্দ্র আর বিনোদিনী দুজনের উপরেই রাগ হয়েছিল, দুজনকেই দোষী মনে হয়।
কিন্তু ‘বিষবৃক্ষ’তে কেবল নগেন্দ্রকেই দোষী মনে হয়েছে, যদিও সে-ই উপন্যাসের নায়ক; কিছুটা “শেষের কবিতা” র অমিতের মতো। খারাপ লেগেছে কুন্দনন্দিনীর মৃত্যুতে; বেচারার উপর মায়া হয়। আর সূর্য্যমুখীর আসলেই কোনো তুলনা হয় না। অমন স্ত্রী যে পুরুষের কপালে আছে তার জীবন-মরন-পরকাল সবই স্বার্থক, ধন্য এককথায়।
তবে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস যেগুলো পড়েছি সেগুলোর মধ্যে শরতের “চরিত্রহীন“ই আমার কাছে সেরা হয়ে থাকবে। সেরা হওয়ার অন্যতম কারন চরিত্র সংখ্যা অন্য দুই উপন্যাস ‘চোখের বালি‘ ও ‘বিষবৃক্ষ’ থেকে বেশি ছিল এবং তাদের মনোজগতের হাবভাব বেশি সরল আবার একই সাথে জটিলও এবং বাস্তবিক বলে মনে হয়েছে।
তো আর দেরি কেন? এখনি পড়া শুরু করে দিন দারুণ এই উপন্যাসটি। আশা করছি নিরাশ হবেন না। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ কপালকুণ্ডলা বাংলা বই রিভিউ উপন্যাসের সারাংশ | Kapalkundala PDF