যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ সুবর্ণলতা (সত্যবতী ট্রিলজির ২য় খণ্ড)
লিখেছেনঃ আশাপূর্ণা দেবী
রিভিউ করেছেনঃ Jannatul Firdous
সুবর্ণলতাকে শুধু একজন গৃহিনীর জীবনকাহিনী বললে ভুল বলা হবে, সুবর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে একটি নির্দিষ্ট কালের। এটা সেই সময়ের গল্প, যখন ‘মেয়েমানুষের’ পড়াশোনা করতে চাওয়ার ইচ্ছেকে ধরা হতো মহাপাপের সমান। ন’বছর বয়সে বিয়ে হওয়া সুবর্ণ কতোটা পেরেছিলো সব বাঁধা পেরিয়ে এগোতে? সে কি নিজের আলোয় উজ্বলতা ছড়াতে পেরেছিলো, নাকি দৈনন্দিন চাল-ডাল আর তেল-মসলার ফর্দতে হেঁশেলের দরজার আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিলো? সুবর্ণর স্বপ্ন ছিলো একটা ঝুলবারান্দার। স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছিলো আদতে?
‘প্রথম প্রতিশ্রুতি‘ থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিলো সুবর্ণর। ‘সুবর্ণলতা’ উপন্যাসটা সত্যবতীর একমাত্র মেয়ের সংসারজীবনের গল্প। মা-মেয়ে দুজনেই এক চরিত্রের মানুষ হলেও তাদের পারস্পার্শ্বিক পরিবেশ একরকম না। একরকম চরিত্রের না তাদের স্বামীরা, শ্বাশুড়িরাও। যেখানে মা নিজের চারপাশের পরিবেশটা পিটিয়ে পাটিয়ে নিজের উপযোগী করে নিয়েছিলো, যেখানে বাবা বোকাসোকা মানুষ হলেও অন্তত মায়ের সম্মান করতো, যেখানে শ্বাশুড়ি রাগী হলেও বৌয়ের ওপরে কথা বলতে সাহস পেতেন না সেখানে সুবর্ণ রাগী, অত্যাচারী, সন্দেহবাতিকগ্রস্ত এক স্বামী ও ভয়ানক মুখরা শ্বাশুড়ি, দেবর, ভাসুর পরিবেষ্টিত পরিবারে প্রতিবাদের নামে মার খেয়ে মরে। তার থেকে এক জেনারেশন আগের তার মা, মাত্র তিনটি সন্তান নিয়ে ছোট্ট গোছানো সংসার ছিলো তার। সে নিজেও ছিলো তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তার স্বামীও তাই। কিন্তু সুবর্ণ? ছয় সন্তানের জননী সে।
এমন নয় যে তার স্বামী প্রবোধ তাকে ভালোবাসে না। ভালো না বাসলে ঐ মুখরা বৌকে নিয়ে জ্বলেপুড়ে মরেও ত্যাগ করে না কেন? করে না কারণ সে যে তার বৌকে ভালোবাসে তা তার এই জলন্ত স্বভাবের জন্যই। মুখরা এই মেয়েরই আর সকলের চেয়ে মায়া মমতা বেশী। নিজের সন্তানের জন্য চকলেট, বিস্কুট কিনলে পরিবারের অন্য সবার সন্তানের জন্যও কেনে। পরিবারে কারোর কিছু হলে সবার আগে সেবা করতে ছোটে। কারো টাকা লাগলে আর জায়েরা স্বামীদের দিতে বাঁধা দিলেও সুবর্ণ জোর করে টাকা বের করে দেয়। শ্বাশুড়ি বলে, “এদিকটাই শুধু ওর ভালো।” কিন্তু দোষ হলো,বড্ড ন্যায্য কথা বলে। এত ন্যায্য কথা বললে সংসারে টিকে থাকা যায়?
দোষ তার আরো একটা আছে। সে পড়তে ভালোবাসে, সে চায় মাথার ওপর ছাদ আর ঘরের সাথে বারান্দা। সে চায় একটু আকাশ, সে চায় একটু ভালো পরিবেশ, মানুষের মতো করে বাঁচা! এটাই তার দোষ। অর্থ আছে, স্বামী আছে, সংসার আছে। এসব রেখে ওসব আবার কি ঢং? এমন মেমসাহেবীয়ানা জীবনে সুবর্ণের শ্বশুরবাড়ির লোক শুনেছে?
তারপর আছে গৃহত্যাগী মায়ের অপবাদ,যদি এই বাড়ির দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায় দাঁড়াবে এমন কোন জায়গা কি সুবর্ণের আছে? অবশ্য সে দেশের কাজ করবে এমন একটা বাসনা তার আছে, কিন্তু তারাও যে তাকে নিতে চায় না! বলে, “এতগুলো পিছুটান তোমার, এত সন্তান কাজেই তুমি পারবে না।”
আর স্বামী মানুষটি নিজেও জানে যে সুবর্ণের সে যোগ্য নয়। সুবর্ণের মনের জায়গা যে তার মনের থেকে অনেক ওপরে একথা সে বোঝে বলেই চায় কোনোরকমে সুবর্ণকে টেনে নিচের দিকে নামিয়ে জাপটে ধরে আটকে রেখে সন্তান দিয়ে বেঁধে নিজের কাছে ধরে রেখে এই জীবনটা তো পার করে দেয়া যাক! সুবর্ণ কারো সাথে হেসে কথা বললেও তার রাগ হয়, তখন তাকে ঘরে এনে বেদম মারে। তবুও শিক্ষা হয় না সুবর্ণর। যে আনন্দ সে কুঁড়েঘরেও বড় মনের মানুষের পরিচয় পেলে পায় সে আনন্দ এই দালানে এত অর্থবিত্তের মধ্যে বাস করে কেন পায় না এটাই প্রবোধের রাগ। খুব রাগ।
আরও পড়ুনঃ বিসর্জন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | বিষয়বস্তু | Bisorjon Natok PDF Download
সুবর্ণর সংসারে মেয়েদের আর ছেলেদের এক চোখে দেখা হয় না। তার শ্বাশুড়ি কথায় কথায় বলে,কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা? পায়ের সঙ্গে মাথার? না পেরে কাজের মেয়েও মাঝেমধ্যে বলে ওঠে, মানুষের সঙ্গে মানুষেরই তুলনা। তা পা-ই বা মাথার থেকে কোন অংশে ছোট? মাথাটা তো পায়ের ওপরই দাঁড়িয়ে?
হয়তো এই মানসিকতা এখন পরিবর্তন হয়েছে। তারপরও এতবড় বিশ্বসংসারের জীর্ণ দেয়ালের কোনো না কোনো ফাঁকে ফোঁকরে কি এখনো লেগে নেই সেই পুরাতনের ছোঁয়া? বিংশ শতাব্দীর চোখ ধাঁধানো আভিজাত্য আর আধুনিকতার মধ্যেও হয়তো কোথাও একটা মেয়েকে ধরা হয় পা, ছেলেকে ধরা হয় মাথা। এই বিষ কি এত সহজে যাবার?
সুবর্ণ ভাবে তার ইহকাল শেষ হয়ে গেছে। আবার ভাবে, তা কেন! আমার ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটি কি মানুষের মতো মানুষ হবে না? হবে হয়তো,বকুল হয়তো মানুষ হবে, পড়বে লিখবে। হয়তো এই বিরাগ পরিবেশেও একজন তৈরি হবে, সেটাই হবে ঈশ্বরের সুবর্ণর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা। কিন্তু সুবর্ণ কি তা দেখে যেতে পারবে?
সিক্যুয়েল এত সুন্দর হয় আমার ধারনা ছিলো না। আজ অব্দি খুব কম বইয়ের সিক্যুয়েলই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে। বিভূতির পথের পাঁচালী-অপরাজিতের পর আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা যেন একে অন্যের সাথে ফাইট দিচ্ছে কে বেশী সেরা। এর একটা কারণ সম্ভবত, এখনকার লেখকরা সিক্যুয়েল লেখেন জনপ্রিয়তা, ব্যবসায়িক লাভ হিসেব করে। কিন্তু আগের লেখকরা লিখতেন প্রাণ থেকে অনুভব করেই।
আর লেখনী? একেবারে অভিনব এই চমৎকার লেখনী কোথা থেকে পেলেন অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া সংসারের একরাশ বোঝা কাঁধের আশাপূর্ণা দেবী? শুনেছি সংসারের সব কাজ সেরে রাতের বেলা লিখতে বসতেন, এমন নয় যে মুড হলেই বসে পড়তে পারতেন। তাই এই? এত গভীর, এত হৃদয় জেতা? আপনি যদি সুবর্ণলতা উপন্যাসের একটা লাইনও বুঝতে না পারেন ভাববেন না আশাপূর্ণা দেবী ভুল লিখেছেন, জানবেন আপনি লাইনটা স্পর্শ করতে পারেননি দুঃখটা না জানার কারণে। কিন্তু যারা দুঃখটা জানে তাদের কাছে এই বইটা সোনার চেয়েও খাঁটি, কারণ সোনায়ও খাদ থাকে।
তবে আশাপূর্ণা দেবী প্রথম প্রতিশ্রুতি দিয়েই আমাকে জিতে নিয়েছেন, তাই সুবর্ণলতার বেলায় আর অবাক হইনি। এনার পক্ষেই এমন লেখা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ বিদ্রোহী কবিতা ব্যাখ্যা PDF | Bidrohi Kobita Bekkha Summary HSC
বই : সুবর্ণলতা
লেখিকা: আশাপূর্ণা দেবী
রিভিউ করেছেনঃ Halima Akter Tanny
বারান্দা পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া দায়। শহুরে জীবনে এক চিলতে বারান্দা যেন আমাদের একটু স্বস্তির জায়গা, শান্তির জায়গা। আমাদের মধ্যে যাদের যাদের বাড়িতে বারান্দা আছে (যদিও এখন প্রতিটি বাড়িতে ছোট্ট পরিসরে হলেও থাকে)তারা বিকেল হলেই বা যেকোনো সময় সেখানে সময় কাটাতে পছন্দ করি৷ বারান্দার গ্রিল ধরে যতটুকু পারা যায় প্রকৃতিকে দেখা, মানুষজনের কর্মকান্ড দেখা এগুলো আমাদের আনন্দ দেয়। আমরা যারা শৌখিন তারা বারান্দাকে নানারকমভাবে সাজাতেও পছন্দ করি।
একটু ভাবুন তো, একটি মেয়ে যার সারাজীবনের স্বপ্ন একটা চওড়া, ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া, কিছুক্ষণ নিজের মত করে থাকা কিন্তু তার এই স্বপ্ন বাকিদের কাছে অর্থহীন মনে হয়, সমাজ-সংসার তাকে প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নিতে দেয় না, তখন সেই মেয়েটার কেমন লাগে? যার খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস, বই পড়ার অভ্যাস, অন্যরকম চোখ দিয়ে সবকিছু দেখার জন্য আজীবন উপহসিত, অপমানিত হতে হয় তখন তার কী অবস্থা হয়?
যারা প্রথম প্রতিশ্রুতি পড়েছেন তারা এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন এই গল্প। সত্যবতীর সাথে যাদের পরিচয় ঘটেছে তারা জানেন যে, সুবর্ণলতা কে! বিয়ের পরে যার জীবনের নির্মম কাহিনি শুরু! তার কেবলই মায়ের কথা মনে পড়ে। সে বহুবার পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না৷ পারবে কী করে দর্জিপাড়ার সেই বাড়ির মেজবউ হিসেবে তার পায়ে আজীবনের জন্য বেঁড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক উন্নত, কুসংস্কারমুক্ত মানসিকতার অধিকারী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মায়ের মেয়ে হওয়াই যেন তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। সে বাড়ির বাকি বউদের সাথে নিজেকে মেলাতে পারে না। বাকি বউরা শাড়ি, গয়না, সাংসারিক খাটাখাটুনির পর ভাত-ঘুম, গালগল্প করতে পারলেই খুশি, সেখানে সুবর্ণ খবরের কাগজ, নতুন বই, স্বদেশী আন্দোলন, একটু খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য মাথাকুটে মরে! ঠোঁটকাটা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বাড়ির বউকে তার স্বামী, শ্বাশুড়ি, সমাজ কেন মেনে নেবে? তাইতো সুর্বণের ভাগ্যে জোটে শত অপমান, লাঞ্ছনা।
কিন্তু এতকিছুর পরও যখন মনে করা হয় তার আগুন তো নিভে গেছে তখন যেন ফিনিক্স পাখির মত ছাই থেকে আবার নতুন করে সেই অদম্য স্পৃহার জন্ম হয়। কালকে অতিক্রম করার জন্যই বোধোহয় কারো কারো জন্ম হয়! নইলে কারা এগিয়ে দেবে সেই প্রবহমান ধারাকে? সে ধারা মাঝেমাঝেই স্তিমিত হয়ে যায়, নিস্তরঙ্গ হয়ে যায়। তবু এরা বর্তমানের পূজো কদাচিৎ পায়, এরা লাঞ্ছিত হয়, উপহসিত হয়, বিরক্ত-ভাজন হয়। এদের জন্য কাঁটার মুকুট।এদের জন্য জুতোর মালা। তবু এরা আসে। হয়তো প্রকৃতির প্রয়োজনেই আসে। তবে কোথা থেকে আসবে তার নিশ্চয়তা নেই৷ আসে রাজরক্তের নীল আভিজাত্য থেকে, আসে বিদ্যা বৈভবের প্রতিষ্ঠিত স্তর থেকে। আসে নামগোত্রহীন মূক-মানবগোষ্ঠীর মধ্য থেকে, আসে আরো ঘন অন্ধকার থেকে…..
আরও পড়ুনঃ প্রাগৈতিহাসিক গল্পগ্রন্থ | গল্পের সারাংশ | Pragoitihashik Summary PDF
আশাপূর্ণা দেবীর সুবর্ণলতা উপন্যাসের কিছু পছন্দের লাইন-
১) সংসার করা মানে তা হলো শুধু সংসার পরিচর্চা করা, আর কিছু না। আশ্চর্য, যেখানে এক কানাকড়াও অধিকার নেই, সেখানে কেন এই গালভরা গৃহিণী নাম??
২) গৃহিণীদের যদি তার গৃহের দরজায় এসে দাড়ানো একটা অতিথিকে ‘এসো এসো’ বলে গৃহে ডাকবার অধিকারটুকু মাত্র না থাকে, তবে ‘গৃহিণী ‘শব্দটা ধোকাবাজি ছাড়া আর কি?? ওই ধোকায় দৃষ্টি আচ্ছন্ন করে দিয়ে দাসত্ব করিয়ে নেওয়া!
৩) তোমার কথা শুনবো? বরং ভুল পথে গিয়ে লোকসান খাবো, তোমার ইচ্ছানুসারে চলব?? গলায় দিতে দড়ি নেই আমার?? তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধাচারণই ব্রত হোক,….ভারী তুমি আত্নসম্মানী, তোমায় পেড়ে ফেলে তবে আমার কাজ আমার;
কারন??
কারন তুমি মেয়ে মানুষ!
তুমি বৌ মানুষ।
৪) সুবর্নলতার বদনাম উঠতে বসতে কারন সুবর্নলতা বাড়িতে খবরের কাগজ আসার পত্তন করেছে, সুবর্নলতা আতুড়ঘরে ফর্সা বিছানা-কাপড়ের প্রথা প্রবর্ত্ন করেছে, সুবর্নলতা মেয়েগুলোকে সুদ্ধু ধরে ধরে ‘পড়তে বসা’র শাসন নীতি প্রয়োগ করেছে।
আরও পড়ুনঃ সত্যবতী ট্রিলজি | আশাপূর্ণা দেবী | Satyabati Trilogy PDF Download
সুবর্ণলতা উপন্যাস এর আরেকটি PDF ভার্সন [Download]
আশাপূর্ণা দেবীর জীবনী PDF [Download]