যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইয়ের নামঃ আরেক ফাল্গুন
লেখকের নামঃ জহির রায়হান
গল্পের প্রেক্ষাপটঃ
“আরেক ফাল্গুন” জহির রায়হান রচিত ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিত্তিক একটি উপন্যাস। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হলেও গল্পটা তারও বছর তিনেক পরের এক ফাল্গুনের।
সময়টা ১৯৫৫ সালের ফাল্গুনের দিকের। বায়ান্নর ভাষা শহীদদের রক্তের দাগ তখনো শুকায়নি, ছাত্র জনতার মধ্যে চাপা ক্ষোভ জমে রয়েছে, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি বাংলা; পাশাপাশি বিরাজমান স্বৈরাচারী সরকার। এমনই এক পরিস্থিতিতে ছাত্র জনতার সম্মিলিত প্রয়াসে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ থেকে শুরু করে উদযাপনের ঘটনাটি জীবন্ত দৃশ্যায়নে তুলে ধরার পাশাপাশি এর সাথে সম্পৃক্ত মানুষের ব্যক্তি জীবনের কিছু ঘটনাও উপন্যাসে অতি সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে।
গল্পের প্রেক্ষাপটের স্থানঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন (মধুর রেস্তোরা [রাজনীতির আতুরঘর], আমতলা, লাইব্রেরি), ঢাকা মেডিকেল প্রাঙ্গন, ঢাকা হল, মুসলিম হল, চামেলি হাউস, ইডেন হোস্টেল, ফজলুল হক হল, ভিক্টোরিয়া পার্ক, লালবাগ প্রাঙ্গন ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ হাজার বছর ধরে PDF | উপন্যাস বই রিভিউ | সারাংশ | জহির রায়হান
গল্পের সারসংক্ষেপঃ
আরেক ফাল্গুন উপন্যাসে গল্পের শুরুতেই সিপাহী বিদ্রোহের নির্মম স্মৃতি বিজড়িত ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে একটি ছেলেকে খালি পায়ে, সদ্য ধোয়া সাদা শার্ট-প্যান্ট পরে হেঁটে যেতে দেখা যায় আর সেই ছেলেটিই হলো উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মুনিম।
স্বৈরাচারী সরকারের সকল বাধাকে উপেক্ষা করে শহীদ দিবসকে যথাযথ মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ফাল্গুনের উদ্যম হাওয়ায় মেতে ওঠে মুনিম ও তার সহযোগী দল। মুনিমের সহযোগী দলের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো আসাদ, সালমা, নীলা, রানু, বেনু, রাহাত, কবি রসুলসহ আরো অনেকে। এদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কেউ মেডিকেলের শিক্ষার্থী সাথে আরো যোগ দেয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা শহর জুড়ে যখন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পুনরাবৃত্তির ভয় মানুষের মাঝে জেকে বসেছে তখন মুনিম ও তার সহযোগী দলের পোস্টার লাগানো, লিফলেট ছাপানো, কালো ব্যাজ বিতরণ, স্লোগান ও অন্যান্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
আরও পড়ুনঃ বরফ গলা নদী PDF | সারাংশ / রিভিউ | জহির রায়হান | Borof Gola Nodi
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে মেডিকেল হোস্টেল, মুসলিম হল, ইডেন হোস্টেল,ফজলুল হক হল ইত্যাদি হলের ছাত্রছাত্রীরা একত্রিত হয়ে শহীদ দিবস পালনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সকল বাধাঁকে উপেক্ষা করে তারা কালো পতাকা উত্তোলিত করে।
ছাত্রদের স্লোগান ও ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং মেডিকেলের ব্যারাক ঘেরাও করে কিছু শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এসে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জমায়েত হতে শুরু সেখানেও পুলিশ গুলি চালায়, সেখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয় আবার অনেককে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
প্রিজন ভ্যানে উঠে তারা স্লোগান দিতে থাকে ‘শহীদের খুন ভুলব না, বরকতের খুন ভুলব না’; ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’। উপন্যাসের শেষ অংশের কথোপকথন ছিল প্রতিবাদের আশার আলো, বিদ্রোহের মূলঅস্ত্র।
“নাম ডেকে ডেকে তখন একজন করে ছেলেমেয়েদের ঢোকানো হচ্ছিল জেলখানার ভেতরে।
নাম ডাকতে ডাকতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন ডেপুটি জেলার সাহেব। এক সময় বিরক্তির সঙ্গে বললেন, উহ অত ছেলেকে জায়গা দেব কোথায়? জেলখানাতো এমনি ভর্তি হয়ে আছে।
ওর কথা শুনে কবি রসুল চিৎকার করে উঠল, জেলখানা আরও বাড়ান সাহেব। এত ছোট জেলখানায় হবে না।
আর একজন বলল, এতেই ঘাবড়ে গেলে নাকি? আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবে।”
আরও পড়ুনঃ শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাস রিভিউ PDF | জহির রায়হান
গল্পের কিছু চরিত্রের মূল্যায়নঃ
মুনিমঃ মোটামুটি ভাবে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ধরা যায় মুনিমকে। পরিবারের একমাত্র সন্তান হয়ে, মায়ের আপত্তি বাধা সত্ত্বেও আন্দোলনে যোগ দেয় মুনিম। এমনকি আন্দোলনে সময় দিতে গিয়ে সে তার পছন্দের মানুষ ডলিকেও এক সময় হারাতে বসেছিলো। এককথায়, মুনিম হলো তারুন্যের এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত।
আসাদঃ মুনিমের মতো আরেকজন আপোসহীন একনিষ্ঠ বিপ্লবী ছাত্রকর্মী আসাদ। বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে কালো ব্যাজ ও কালো পতাকা বিতরণসহ সব কাজে সে ছিল ক্লান্তিহীন। উপন্যাসের শেষের দিকে আসাদ চরিত্রটিই মূখ্য হয়ে ওঠে।
সালমাঃ মেডিকেলের ছাত্রী সালমা কারারুদ্ধ বিপ্লবী রওশনের স্ত্রী। স্বামীর জন্য হৃদয়ে গভীর ভালবাসা লালন করে আন্দোলনে সে অত্যন্ত দৃঢ়। ১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণে ফলে স্বামী রওশনকে জেলা বন্দী করে রাখে। এরপর রাজশাহী জেলে পুলিশ গুলি চালালে রওশন তার হাত দুটি হারায়। স্বামী রওশনের খণ্ডিত হাত আর কখনো স্লোগানে উত্তেজিত হবে না, নিবিড় আলিঙ্গনে সালমাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করবে না এমন স্পর্শকাতর ভাবনা সালমার মনবলকে কখনো ভাঙ্গতে পারেনি। বরং আন্দোলনে আরো সোচ্চার হয়ে ওঠে সালমা।
আরও পড়ুনঃ আট কুঠুরি নয় দরজা বই রিভিউ PDF | সমরেশ মজুমদার উপন্যাস
বজলে হাসানঃ গল্পের এক কাপুরুষ চরিত্র। এক বক্তব্য বজলে হাসান বলেন-
“আমরা হলাম সাহিত্যিক। সমাজের আর দশটা লোক মিছিল আর শোভাযাত্রা বের করে পুলিশের লাঠি খেয়ে প্রাণ দিলে কিছু এসে যায় না। কিন্তু আমাদের মৃত্যু মানে দেশের এক একটি প্রতিভার মৃত্যু।”
উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রঃ নীলা, রানু, বেনু, রাহাত, কবি রসুল প্রমুখও রাজপথে তাদের আন্দোলন নিষিদ্ধ জেনেও ভিন্ন পথ অবলম্বন করে তারা লড়ে যায়।
মূল্যায়নঃ অন্যায়ের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজের রুখে দাড়ানোর দৃষ্টান্ত, আপোষহীন নীতি গ্রহন, আপন স্বার্থকে তুচ্ছ করে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে নিজেকে গড়ে তোলার মনোভাব, সংগ্রামী চেতনার জীবন্ত দৃশ্যায়ন পুরো উপন্যাস জুড়ে ফুটে উঠেছে।
তবে আরেক ফাল্গুন উপন্যাসের অনেক জায়গায় তারুণ্যের বিদ্রোহ ও প্রেম মুখোমুখি সাংঘর্ষিক আকারে রূপধারন করেছিলো বলে আমার মনে হয়েছে।
রিভিউ করেছেনঃ Munzeera Eshita
আরও পড়ুনঃ বিরাজ বৌ PDF রিভিউ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস