যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বাংলা ছোটগল্পের জনক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ছুটি” গল্পটির সাথে পরিচয় হয় নবম শ্রেণীতে। অসাধারণ এই ছোটগল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ফটিক। গল্পটির মূলভাব হলো বয়ঃসন্ধিকালের সংবেদনশীলতা। পাঠ্যবইয়ে পড়ার সময় প্রতিটি পাঠক সদ্য বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করে, যেখানে তাদের বয়স ১৩-১৪ বছরের মতো হবে। গল্পের ফটিক চরিত্রটিও ছিলো ১৩-১৪ বছরের এক বালক, যার কারণে পাঠক সহজেই ফটিকের মাঝে নিজেকে খুঁজে পায় এবং গল্পটি সারাজীবনের জন্য মনে গেঁথে যায়। এদের মাঝে অনেকেই আবার মামার বাড়িতে বা শহরেও গিয়েছে পড়াশোনার জন্য এবং ফটিকের মতো পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে। এসব কারণে প্রতিটি স্টুডেন্টের কাছে মনে হয়েছে এটা যেনো তার-ই জীবনের গল্প। নিঃসন্দেহে এই গল্পটি সময়োপযোগী গল্প ছিলো।
ইংরেজিতে যে সংখ্যাগুলোর শেষে “teen” থাকে (যেমনঃ thirteen, fourteen, fifteen…nineteen) সেই সময়ের বয়সকে Teenage বলা হয়, বাংলায় যাকে বলে বয়ঃসন্ধিকাল, ১৩-১৯ বছর পর্যন্ত এর ব্যাপ্তিকাল। শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে এই টিনএজ বা বয়ঃসন্ধিকাল প্রতিটা ছেলেমেয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। কেননা এই বয়সে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।
আরও পড়ুনঃ গল্পগুচ্ছ Read Online | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Golpo Guccho PDF
সেই সময়ের চাইতে অনেক বেশী এগিয়ে থাকা কবিগুরুর মনস তত্ত্বের প্রমাণ এই ছোটগল্পটি, যার অন্তর্নিহিত মূলভাব আজও সমভাবে প্রযোজ্য। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ১৩-১৪ বছরের ছেলেমেয়েদেরকে ‘বালাই’ বলেছেন। কেননা এ সময়টাতেই হঠাৎ করে অধিক শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে, যা অনেকের কাছে কুশ্রী স্পর্ধারূপে পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া শৈশবের লালিত্য ও মিষ্টতা চলে যায় এবং কৈশোরে পদার্পণ করে বলে এ বয়সটাতে অন্যের মনে স্নেহের উদ্রেক করে না।
এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মাঝে কথামাত্রই প্রগলভতা অর্থাৎ অসংকোচে, নির্লজ্জভাবে এবং স্পষ্ট ভাষায় বলে বলে দেয়। এসবকিছুর জন্য বয়ঃসন্ধিকালটা অনেকটা স্পর্শকাতর বা সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। আর এ সময়টাতে ছেলেমেয়েরা সবার কাছ থেকেই বেশি স্নেহ-ভালোবাসা প্রত্যাশা করে, কিন্তু খুব বেশি স্নেহ-ভালোবাসা পায়না, বরং নিষ্ঠুর, রুক্ষ ও রূঢ় আচরণ করে। স্নেহবঞ্চিত, অযত্ন, অবহেলায় এরা একসময় নিজেকে কোথাও খাপ খাওয়াতে পারে না। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়ে থাকে। এভাবে আস্তে আস্তে মানসিক চাপে পড়তে থাকে এবং হয়তো কারো ক্ষেত্রে দেখা দেয় ফটিকের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো এক দুর্ঘটনা।
আরও পড়ুনঃ হাজার বছর ধরে PDF | উপন্যাস বই রিভিউ | সারাংশ | জহির রায়হান
ফটিক ছিল গ্রামের দুরন্ত, ডানপিটে এক কিশোর, যে খোলা মাঠে বোঁ বোঁ শব্দে ঢাউস ঘুড়ি উরাতো। অকর্মণ্য ‘তাইরে নাইরে নাইরে না’ করে ঘুরে বেড়ানো এবং দিনের মধ্যে যখন-তখন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোসল করা ছিলো যার স্বভাব। বন্ধুদের দলবল নিয়ে উপদ্রব, স্বাধীনতা—এ সব কিছুই ছিল তার নিত্যদিনের কাজ।
শহর থেকে মামার আগমনে, নতুন পরিবেশের প্রতি দুর্বার কৌতূহলের কারণে সে কলকাতায় আসার জন্য মরিয়া ছিল। তবে দুর্ভাগা ফটিক তখনও জানত না, চারদেয়ালের বদ্ধ পরিবেশ বা শহরের জীবনযাত্রা মোটেও তার জন্য অনুকূল না। অবারিত মাঠঘাট, নদীনালা আর মাটির সোঁদা গন্ধে বেড়ে ওঠা ফটিকের জন্য মামির বাসা যে কোনভাবেই তার উপযোগী না সেটা উপলব্ধি করতে পারেনি দুরন্ত ফটিক।
স্নেহহীন প্রতিকূল পরিবেশে পড়ে ক্রমাগত ফটিক মানসিক চাপে পড়ে। প্রবল জ্বরের ঘোরে সে খালাসিদের মতো ‘এক বাঁও মেলে না, দো বাঁও মেলে না’ করে জীবনের তল খুঁজতে চায়। প্রতিবার গল্পটি পড়ার সময় ফটিকের সাথে সাথে জীবনের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে কখন যেন এই ডানপিটে কিশোরের প্রতি মায়ায় পড়ে গিয়েছি টেরই পাই নি, সমাপ্তিতে এসে প্রতিবার একটা অপ্রাপ্তির হাহাকার তাড়া করে বেড়ায় বহুক্ষণ।
আরও পড়ুনঃ যে বইগুলো জীবনে একবার হলেও পড়া উচিত | ৫০০ বইয়ের তালিকা