যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ জীবন তৃষা
লেখকঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণ
রিভিউঃ Abida Sultana Umama
আপনি কি ভ্যানগগের নিজের কান কেটে ফেলার গল্পটা শুনেছেন?
ভ্যান গগ আর তার আঁকা ‘স্ট্যারি নাইট’ চেনেনা, এমন কাউকেই বোধহয় আজকাল পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে রঙ-তুলি যারা কোনোভাবে ধরতে শিখেছে। স্ট্যারি নাইটকে তো মানুষ উঠতে, বসতে, ঘুমাতে ব্যবহার করছে। বেডশিট থেকে শুরু করে কাঁধের ব্যাগ, পানির মগ, ঘরের দেয়াল সবখানে স্ট্যারি নাইট আঁকে। সত্যি বলতে, চোখে বিতৃষ্ণ লাগতে শুরু করেছিলো। বাঙালি মাত্রই যে কোনো জিনিস পেলে তার শেষ রসটুকু নিংড়ে বের না করা অব্দি শান্তি পায় না।
সেই ভিনসেন্ট ভ্যানগগের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো তাঁর কান কেটে ফেলার ঘটনাটা কোথাও পড়ার পর। আর এখন নতুন করে আরভিং স্টোনের উপন্যাসে, অদ্বৈত মল্লবর্মনের শিল্পরূপময় অনুবাদে। দু পাতা নিজে না পড়লে বুঝবেন না, অনুবাদটা কত সুন্দর! অদ্বৈত মল্লবর্মনের অনুবাদ না হলে আমি হয়তো বইটা কেনার সাহস করতাম না। কারণ? অনুবাদ পড়ার অতীত অভিজ্ঞতা।
হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে, উপন্যাসটা পড়তে শুরু করার পর থেকে আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম কখন কান কাটার ঘটনাটা আসবে, কখন স্ট্যারি নাইট আঁকার ঘটনাটা আসবে। সেই অপেক্ষা নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে যে ইমোশনাল রোলারকোস্টারে চড়ে বসেছি, সেই অনুভূতি নিয়ে জীবনভিত্তিক উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনাগুলো সত্য কি মিথ্যা সে বিশ্লেষণ চলে না।
জীবনীভিত্তিক বা ইতিহাস-আশ্রিত যে কোনো গল্প-উপন্যাসকে আমি ফিকশন বাদে অন্যকিছু মনে করে পড়ি না। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’, ‘বাদশাহ নামদার’ বইগুলো পড়ার পর থেকে। তাই ৩৯৮ পৃষ্ঠার এই উপন্যাস, যেখানে পড়েছি ভ্যানগগের সারা জীবনভর ঘটে যাওয়া অসংখ্য বিচিত্র ঘটনা, তাঁর চিত্রভাবনা, জীবন-দর্শন আর চিত্রশিল্পী হওয়ার পথে জীবনের নানা টানাপোড়েনের কথা— এসবের ভেতর দিয়ে ভিনসেন্ট ভ্যানগগকে সত্যিকারে জেনেছি কি না, আমি নিশ্চিত না। তবে ভাই থিওকে লেখা ভ্যানগগের সবগুলো চিঠি (৬০০+) থিও সংরক্ষণ করেছিলো বলে জানি। আর ভূমিকা থেকে যতদূর আন্দাজ করেছি, লেখক মূলত সেই চিঠিগুলোর উপর নির্ভর করে উপন্যাস সাজিয়েছেন নিপুণ কারিগরিতে।
অদ্বৈত মল্লবর্মণ ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার গোকর্ণ গ্রামে এক দরিদ্র জেলে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কেবল একটি উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় সাহিত্যিক মনে হয় একমাত্র অদ্বৈত মল্লবর্মণ -ই। তাঁর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয়। বিখ্যাত এই উপন্যাসটিও হয়তো আলোর মুখ দেখতো না। কেননা প্রথমে ১৯৪৫ – ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাসিক মোহাম্মদীতে পত্রিকায় কয়েকটি অধ্যায় প্রকাশ হবার পর মূল পাণ্ডুলিপি রাস্তায় হারিয়ে যায়। তারপর বন্ধু-বান্ধব ও আগ্রহী পাঠকদের আন্তরিক অনুরোধে তিনি উপন্যাসটি পুনরায় লিখতে আরম্ভ করেন।
১৯৫০ সালে অদ্বৈত মল্লবর্মণ হঠাৎ যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হোন। চিকিৎসার জন্য যক্ষ্মা হাসপাতালে যাবার পূর্বেই এই গ্রন্থটি লিখে শেষ করেন এবং পাণ্ডুলিপি বন্ধু-বান্ধবকে দিয়ে যান। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল, কলকাতার নারকেল ডাঙায় ষষ্ঠীপাড়ার নিজ বাড়িতে অদ্বৈত মল্লবর্মণ মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর কয়েক বছর পর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ যা আজও বাংলা সাহিত্যে ওমর সৃষ্টি হয়ে রয়েছে। উৎপল দত্ত ১৯৬৩ সালে উপন্যাসটির কাহিনী নিয়ে একটি নাটক তৈরি করেছিলেন এবং চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করেন আরেক মাস্টারপিস চলচ্চিত্র "তিতাস একটি নদীর নাম।"
রচনা তালিকায় আরও রয়েছে শাদা হাওয়া ও রাঙামাটি নামে দুটি উপন্যাস। কয়েকটি ছোটগল্প (সন্তানিকা, কান্না, বন্দী বিহঙ্গ, স্পর্শদোষ) এবং অনুবাদগ্রন্থ জীবন-তৃষা।
আরও পড়ুনঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণ প্রবন্ধ সমগ্র PDF রিভিউ