নামঃ- তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
জনরাঃ অতিপ্রাকৃত, ভৌতিক
তারানাথ তান্ত্রিকের প্রথম স্রষ্টা হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর বিভূতিভূষণ পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তারানাথ তান্ত্রিকের অনেকগুলি কাহিনি লেখেন। পরে লেখেন তারানাথ তান্ত্রিক নিয়ে একটি গােটা উপন্যাস ‘অলাতচক্র’। সেই সমস্ত কাহিনি একত্র করেই এই গ্রন্থ “তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র”। যারা অতিপ্রাকৃত বা ভৌতিক জনরা পছন্দ করেন তাদের কাছে খুব ভাল্লাগবে এই সমগ্রটা।
বিভূতভূষণ বন্দোপাধ্যায় নামটা শুনলেই প্রথমে মাথায় কি আসে? আমার তো প্রথমেই “পথের পাঁচালী” নামটা মনে আসে। কি দারুণভাবে অপু দুর্গার কথা বর্ণনা করেছেন লেখক। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ সব উপন্যাসের রচয়িতা তিনি। “চাঁদের পাহাড়”, “আরণ্যক“, “ইছামতী”, “বিপিনের সংসার” এর মতো রত্ন উপহার দিয়েছেন তিনি বাংলা সাহিত্যকে।
এছাড়াও তার সৃষ্ট চরিত্র হাজারী ঠাকুরের রান্নার বর্ণনায় জিভ ভিজেনি এমন পাঠক তো পাওয়াই যাবেনা। বলছিলাম “আদর্শ হিন্দু হোটেল” এর কথা। শুন্য থেকে কিভাবে পূর্ণ হওয়া যায় তার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন লেখক তার এই উপন্যাসে। এতোসব মাস্টারপিসের ভিড়ে “তারানাথ তান্ত্রিক” নামটাও কিন্তু অপরিচিত নয়। তার জীবনের অতিপ্রাকৃত সব ঘটনার বর্ণনা করে গেছেন তিনি কিশোর সেন আর গল্প কথকের কাছে। ধারণা করা হয় বইয়ের আদলে তারানাথের জীবনের কাহিনী বলে গেছেন গল্প কথক অর্থাৎ “বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়”।
বিভূতিভূষণের সৃষ্ট চরিত্র তারানাথ তান্ত্রিক। কিন্তু তিনি মাত্র দুটো গল্প লিখতে পেরেছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এই চরিত্র দারুণ করে ফুটিয়ে তুলে একেক পর এক গল্প বলে গেছেন। একদমই মনে হয়নি এটা তারাদাস এর নিজস্ব তৈরি চরিত্র না। একদম জীবন্ত একটা চরিত্র। মনে হয় চোখের সামনে বসে সে কলকেতে টান দিচ্ছে আর গল্প বলছে।
তারানাথ তান্ত্রিক একজন সাধক, তার জন্ম হয় এমন এক লগ্নে যখন আকাশে নীল উল্কাপাত হয়। যৌবনের ভবঘুরে তারানাথ বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হন। একেক পর এক সেসব ঘটনা বলে যান লেখক ও তার বন্ধু কিশোরি সেনকে।
তারা যখন গল্প শোনে তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে। বিশ্বাসও করে। তবু মট লেনের বাড়ি ছাড়তেই তাদের সব বিশ্বাস উবে যায় আস্তে আস্তে। তবে কি তারানাথ সব মিথ্যে গল্প বলে?
তারানাথ যে মিথ্যে গল্প বলে না, তার প্রমান পাওয়া যায় অলাতচক্র উপন্যাসে।
পুরো বইটা নিরেট গল্পে ঠাসা। যারা এসব আধিভৌতিক গল্প পছন্দ করে তাদের জন্য মাস্টরিড একটা বই। তবে আমার মনে হয়েছে গল্পগুলো আমার এখান থেকে পাঁচ বছর আগে পড়া উচিত ছিল। তাহলে আসল মজাটা পেতাম। এখন পড়েও ভালো লেগেছে, কিন্তু ঐ অতিরিক্ত ভয়টা পেলাম না বলে আফসোস হচ্ছে।
গল্পের ভালো দিক হচ্ছে এ একদম সরস এবং নিরেট গল্প। এসএসসি বা ইন্টারমিডিয়েট যারা পড়ে তারা বইটা পড়ে খুব মজা পাবে। গল্পের খারাপ দিক হলো একই কথা বারবার প্রতি গল্পে বলা হয়েছে, যেমন মধুসুন্দরী দেবী আবির্ভাব এর গল্প, মাতু পাগলীর কথা। এটা বেশ বিরক্তিকর লেগেছে। এই যা।
আর লোভনীয় বিষয় হলো বর্ষাকালে গল্প বলা। আমিও বৃষ্টির দিনে পড়েছি বইটা। কচুড়ি, গরম তেলেভাজা, জিলিপি আর চা। পড়ে আমার বারবার চা খেতে হয়েছে। তাই বর্ষাকালে পড়তে পারেন, হয়তো আরেকটু ভালো অনুভূতি নিতে পারবেন। পরিশেষে বলা যায় এটা একটা দারুণ নিরেট আধিভৌতিক গল্পের বই।
আরও পড়ুনঃ বেগ বাস্টার্ড সিরিজ রিভিউ | Beg Bastard Series PDF | Nazimuddin
চরিত্র পরিচিতি
তারানাথ তান্ত্রিক হলেন এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব এবং প্রবক্তা। তাঁর পুরোনাম তারানাথ জ্যোতির্বিনোদ। তাঁর বংশগত পদবি চক্রবর্তী। তাঁর পিতা আদিনাথ। তাঁর জন্মের পূর্বে তাঁর বাড়িতে অমরজীবন নামে এক রহস্যময় ব্যক্তি এসেছিলেন। তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে তাদের বংশে এক তান্ত্রিকের জন্ম হবে। যখন জন্ম হবে, তখন আকাশে নীল রঙের উল্কা দেখা যাবে।
তিনি মধ্য পঞ্চাশবর্ষী। হাত দেখে আর কোষ্ঠী বানিয়ে দিন গুজরান করেন এই প্রৌঢ়। সংসার তেমন সচ্ছল নয়। অভাব রয়েছে। কিন্তু অভাব কিছুতেই কাবু করতে পারে না মানুষটিকে। স্ত্রী-কন্যা-পুত্র নিয়ে দিব্যি আছেন তারানাথ।
জ্যোতিষীর খোলস ছাড়ালে জানা যায়, তিনি একজন সিদ্ধ তান্ত্রিক। কিন্তু কোনও কারণে তার সাধনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। খুব অল্প বয়সে ঘর ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে। তিনি সমগ্র বাংলায় পরিভ্রমণের সময় অনেক অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথে অনেক মুখোমুখি হন।
বীরভূমের এক শ্মশানে মাতু পাগলি নামের এক রহস্যময়ী সাধিকার কাছে মহাডামর সাধনা করেন তারানাথ। কিন্তু তাতে সফল হননি। পরে বরাকরের অরণ্যে তিনি লাভ করেন মধুসুন্দরী দেবীর বর। কিন্তু সেই সাধনাকেও সম্পূর্ণ বলা যায় না।
অবশেষে থিতু হন তারানাথ। সংসার নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। একটা সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটিয়ে প্রচুর পয়সা করেছিলেন। কিন্তু তা জলের মতোই বেরিয়ে যায়। কায়ক্লেশে হস্তরেখা বিচার করে আর কোষ্ঠী বানিয়ে দিন যায় তার।
তিনি চা এবং সিগারেট সহযোগে তার মট লেন হাউসে কয়েকজন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সেই অভিজ্ঞতাগুলি শেয়ার করেন।
গল্পে বলা হয়েছে লেখক তারনাথের ঘরে নিয়মিত পরিদর্শক। কখনও কখনও তার বন্ধুর সাথে, মাঝে মাঝে একা।
কিছু কথা
গল্পের পটভূমি ১৯৩৯ সাল। এতো সুন্দর করে সেই, সময়কালকে মলাটবন্দি করেছেন লেখক, পড়তে গেলে মনে হবে, এসব আপনি দেখছেন। জানি না এর আগে সাহিত্যের এই জনরা নিয়ে, দেশীয় লেখকগণ এভাবে লিখেছেন কি-না… তবে এই চরিত্রকে ফলোআপ করে পরবর্তিতে, এদেশে এই জনরার অনেক শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে। অনেক লেখা তৈরি হয়েছে ছায়ানুসরণ করে। তাই বলা যায়, এই চরিত্র অনেকটা পথিকৃৎ।
যারা এই জনরাগুলোতে তৃপ্তি পান, তারা জানেন, তারানাথ তান্ত্রিক একটা নাম না, এটি একটি ব্যান্ড। বিঃদ্রঃ- ভালো লাগে বলে হয়তো একটি বেশি-ই বলে ফেলেছি। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আরও পড়ুনঃ আরণ্যক PDF | উপন্যাসের বিষয়বস্তু | রিভিউ | বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
- তারানাথ তান্ত্রিক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় [Download]
- ব্রজভূষণের বিশ্বাসপ্রাপ্তি – তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় [Download]
- তারানাথ তান্ত্রিক – তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় [Download]
- তারানাথ তান্ত্রিক ও ব্রক্ষ্মপিশাচ – তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় [Download]
- অলাতচক্র – তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় [Download]
তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র PDF [Download]