যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ ন হন্যতে
লেখকঃ মৈত্রেয়ী দেবী
বইঃ লা নুই বেঙ্গলী
লেখকঃ মির্চা এলিয়াদ
রিভিউ করেছেনঃ চাতকী রূপা
‘ন হন্যতে’ অর্থাৎ ‘It does not die’। যার অর্থ হচ্ছে ‘যার মৃত্যু নেই’। যা অমর, অক্ষয়। কথাটি প্রেমের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, সত্যের ক্ষেত্রেও তাই। বইটি যতটা না প্রেমের তারচে বেশি জীবনবোধের। স্মৃতির সীমানা ডিঙিয়ে চোখের পাতায় ভাসমান, বেয়াল্লিশ বছরের পুরনো ঘটনাগুলোকে কলমবিদ্ধ করে সত্যকে টেনে এনেছেন। প্রেমের অমরত্ব এবং সত্যের অমরত্বের আক্ষরিক এক রূপ ‘ন হন্যতে’। তাইতো বেয়াল্লিশ বছর পরেও লেখিকার জবানবন্দী হিসেবেই বইটি রচনা করেছেন।
বই সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
ন হন্যতে এবং লা নুই বেঙ্গলী একই মলাটে আবৃত দুই লেখকের যুগলবন্দী উপন্যাস। বলা যায় একটি আরেকটির পরিপূরক কিংবা বিরোধিতার পূর্ণ জবাব। রোমানীয় দার্শনিক মির্চা এলিয়াদের কৈশোরের সম্পর্কের ভিত্তিতে ‘লা নুই বেঙ্গলী’র বিরোধিতার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত ‘ন হন্যতে’ মৈত্রেয়ী দেবীর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসটি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য একাডেমিক পুরষ্কার লাভ করে। এটি লেখা হয় ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
১৯৩০ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৈত্রেয়ী এবং মির্চার প্রেমের সম্পর্কের ভুল এবং বিভ্রান্তিকর কল্পনার বর্ণনাস্বরূপ মির্চা এলিয়াদ ১৯৩৩ সালে রোমানিয়নে ‘মৈত্রেয়ী’ এবং ‘লা নুই বেঙ্গলী’ নামে ফরাসি ভাষায় অনুমোদিত বইটি প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে মৈত্রেয়ীকে দেয়া কথা অনুযায়ী মৈত্রেয়ীর মৃত্যুর চারবছর পর বইটি ১৯৯০ সালে ইংরেজি ভাষায় ‘দ্য বেঙ্গলী নাইটস’ নামে প্রকাশিত হয়। মজার ব্যাপার হলো, রোমানিয়ার স্কুল সিলেবাসে পড়তে হয় মির্চা এলিয়াদের ‘মৈত্রেয়ী’।
আরও পড়ুনঃ জন্ম ও যোনির ইতিহাস PDF | জান্নাতুন নাঈম প্রীতি | নিষিদ্ধ বই
‘ন হন্যতে’র কাহিনী সংক্ষেপণ-
১৯৩০ সাল, মৈত্রেয়ী দেবী তখন ষোলো বছরের কিশোরী। তার বাবা প্রফেসর সুরেন্দনাথ তাকে বিদ্যার সাগরে নিমজ্জিত করে নিজের মনের মতো করে তৈরি করছিলেন ছোট থেকেই। শিক্ষিত এবং সম্ভ্রান্ত পরিবার হওয়ায় দেশ বিদেশের বিভিন্ন দার্শনিক, কবিদের আনাগোনা ছিল সেই বাড়িতে। রবিঠাকুর ছিলেন অমৃতার গুরু।
মির্চা এলিয়াদ নামের রোমানীয় এক যুবক কলকাতায় দার্শনিকশাস্ত্র পড়তে আসে প্রফেসরের কাছে। মৈত্রেয়ী তাকে বাংলা শেখায় আর তার পরিবর্তে মির্চা তাকে শেখায় ফরাসি। পড়াশোনা, সাহিত্যে এবং দর্শনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়। অমৃতা টের পায় তার হৃদয়ের শৈল্পিক রক্তক্ষরণ। ‘বুকে দোলে বিরহব্যথার মালা, গোপন মিলন অমৃত গন্ধ ঢালা’ অমৃতা প্রথম অনুভব করে লাইনগুলার গভীরত্ব। যার কাছে গেলে অমৃতা নিজের আত্মাকে দেখতে পায় সেই কবিগুরু বললেন, অমৃতা তোমার বয়স অল্প। মনটাকে নিয়ে এত নাড়াচাড়া করো না। সেটা স্বাস্থ্যকর নয়। মনটা স্বচ্ছ কাকচক্ষু সরোবরের মতো স্থির রাখ, তার নিচে বহুদূর গভীরতা, কিন্তু এখনই তাকে চঞ্চল করে উত্তাল করার দরকার নেই- শান্ত হয়ে থাক। সে মনে বাইরের ছায়া পড়বে, সহজভাবে তা গ্রহণ কর।
আরও পড়ুনঃ প্রথম প্রতিশ্রুতি PDF | উপন্যাসের বিষয়বস্তু | Prothom Protishruti
সেই যে আমি লিখেছি- সত্যরে লও সহজে।
তোমার নিজের ভেতরে যে মাধবীলতা আছে দূরে নেমে যাবে তার মূল, তার উপরে ফুল ফুটবে। অপেক্ষা কর।
কিছু লাইন আছে, যেগুলোর গভীরতার পরিমাণ তাদের প্রেমের গভীরত্বের সমান বৈ কম নয়। এ লাইনগুলিই যেন অনুভবের উষ্ণতা প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম।
★ ও বলল, অমৃতা আমার একটা কথা শোনো, একটা কথা, রবিঠাকুরকে ভুলে যাও।
‘সে কি মির্চা, সূর্যকে কি কেউ ভুলতে পারে?’
‘সূর্য! মানুষ কি করে সূর্য হবে?’
মনে মনে বলছি, তোমাকে আমি সূর্য দেখাবোই- যদি তা পারি তবে আমরা দুজনে এক সঙ্গেই সূর্যোপাসক হব।
★ স্বর্গ? সেই তো স্বর্গ যেখানে আনন্দে ছাড়া চোখের জল পড়ে না। যেখানে প্রণয়কলহ ছাড়া বিরহ হয় না।
★ যদি তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে নাও হয় আমি তোমায় তিনবার দেখতে চাই। একবার তুমি মা হবার পর, একবার যখন তুমি খুব বৃদ্ধা আর একবার তোমার মৃত্যুশয্যায়।
★ এ কথা সত্য, সত্য, শরীরের স্থায়িত্ব নেই, আত্মা অমর- ‘ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে’। অমরত্বের অনুভব হচ্ছে আমার। কি আশ্চর্য! আমি জানতামই না তেতাল্লিশ বছর ধরে আমার সত্তার একটা অংশ উনিশ শ ত্রিশ সালেই স্থির দাঁড়িয়ে আছে- আজ আমার শরীর নেই কিন্তু সে আছে, সেই আছে, সে অমৃতা।
★ বইটির শেষের পাতায় তেড়ছা ভাবে লেখা- Mircea, Mircea, I have told my mother that you have only kissed me on my forehead.
হ্যাপি রিডিং।
আরও পড়ুনঃ সুবর্ণলতা উপন্যাস আলোচনা PDF | Subarnalata Book Summary
আমরা অনেকেই সঞ্জয় লীলা বানসালি-র “হ্যাম দিল দে চুকে সানাম” মুভিটা দেখেছি। এই মুভির কাহিনী মুলত ‘ ন হন্যতে এবং লা নুই বেঙ্গলী’ থেকে নেওয়া। ন হন্যতে পড়ার আগে লা নুই বেঙ্গলী পড়লে গল্পটা বোধগম্য হবে। আসলে এটা গল্প নয় পুরোটাই বাস্তব জীবনে ঘটা কাহিনী।
রোমানিয়ার মির্চা এলিয়াদ প্রেমে পড়েন বাঙালী মেয়ে মৈত্রেয়ীর (বা অমৃতার)। তবে সেই সময়ের রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার দোহাই দিয়েই হোক বা অন্য কোনো কারনেই হোক তাদের সম্পর্ককে মেনে নেওয়া হয় নি। প্রেমের বিয়োগান্তে মির্চা লেখেন লা নুই বেঙ্গলী বা বাংলার রাত। ধারণা করা হয় বা মৈত্রেয়ী দেবীর মতে গল্পের খাতিরে মির্চা অনেক কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন কারণ সেই সময়ের রক্ষণশীল অবস্থায় বাঙালি মেয়েদের এতো বেশি সীমা লঙ্ঘনের সাহস ছিলো না। তার প্রতিউত্তর হিসেবে প্রায় ৪০ বছর পর ন হন্যতে লিখেন মৈত্রেয়ী দেবী। বিস্তর কাহিনী বলবো না বা লিখতেও ইচ্ছে করছে না তবে আমার ধারণা নিয়ে কিছুটা বলবো।
লা নুই বেঙ্গলী পড়ার পর আমার নিজেরও মির্চার প্রতি ঘৃণা, রাগ লেগেছিলো আমিও ভেবেছিলাম একটু বেশি হয়ে গেছে। তবে ন হন্যতে পড়ে বুঝেছি পুরোটা না হলেও একটু সত্যতা ছিলো। তবে এটা বড় ব্যাপারও মনে হয় নি। মির্চা যখন বই লেখেন তখন তিনি যুবক বয়সে ছিলেন সাথে বিতাড়িত, মনের আঘাতে নিপিড়ীত। এমন অবস্থায় এসব লেখা স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু মৈত্রেয়ী দেবী বই লিখেছেন যখন তিনি পূর্ণ বয়স্ক,সমাজের সবকিছুকে দেখার অভিজ্ঞতা তার হয়েছিলো।তাই তার বইয়ে ভুলের পরিমাণ নেই বললেই চলে। যতটুকু বুঝেছি দুজনে আর একটু চেষ্টা করলে এতো বেদনা সইতে হতো না,৪০ বছর পরে যে চিঠিগুলো উদ্ধার করার সাহস মৈত্রেয়ী-র হয়েছিলো সেটা ৪০ বছর আগে একটু দেখাতে পারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো, এখানে ভাগ্যদেবতার হাত ছিলো এটাই বলা সমীচীন হবে।
তবে তাদের দুজনের মধ্যে একটা গভীর ভালোবাসা সারাজীবন ছিলো। সেই ভালোবাসার বিয়োগান্তক পরিণতি সকলের মনে ছাপ রাখতে যথেষ্ট। ছবির মতো শেষে মির্চা এবং মৈত্রেয়ীর দেখা হয় কি না সেটা জানতে হলে ন হন্যতে পড়তে হবে ||
কৃতজ্ঞতাঃ Sumaiya Jesmin
আরও পড়ুনঃ বকুল কথা আশাপূর্ণা দেবী PDF রিভিউ | Bokul Kotha Book Summary
বইঃ ন হন্যতে
লেখকঃ মৈত্রেয়ী দেবী
রিভিউ করেছেনঃ সুমাইয়া জলি
১৯৭২ সালে দাড়িয়ে ১৯৩০ সালে ঘটে যাওয়া এক তীব্র প্রেমের আখ্যান “ন হন্যতে”। ভারতীয় সংস্কৃতির কাছে পরাজিত দুটো রক্তমাংসের মানুষের মন।
গল্পের প্রধান দুটো চরিত্র অমৃতা দেবী ও মির্চা ইউক্লিড। ভারতে পড়তে আসার সুবাদে মির্চার থাকার জায়গা হয় অমৃতা দেবীর বাড়িতে। শান্ত, ভদ্র এবং রুচিশীল মানুষ। অমৃতার বাবার ছাত্র হওয়ায় তার সৌভাগ্য হয় অমৃতার পরিবারের সাথে থাকার।
শাস্ত্র চর্চা, সাহিত্য চর্চা, ক্যাটালগ তৈরি কিংবা ভারতীয় সংস্কৃতিতে যারপরনাই মুগ্ধ হতে থাকে মির্চা। অমৃতা হয়ে ওঠে তার সবসময়ের সঙ্গী। অমৃতার রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসায় ইর্ষান্বিত হয় কখনও। কখনও অপার মুগ্ধতা গ্রাস করে তাকে।
অমৃতা দেবী কি করে যেন মিশে যেতে থাকে মির্চার সত্তাতে।
তারপর অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছেদ।
এ গল্প ১৯৩০ ও ১৯৭২ সালের সংমিশ্রণ। ১৯৭২ সালে থেকেও পরতে পরতে ১৯৩০ সালকে অনুভব। একই রকম ভাবাবেগ, অনুভূতি, যেন সব জীবন্ত, চোখের সামনে সেই প্রেম, সেই আনন্দ, সেই বেদনা সব কিছু এলোমেলো করে দেয় অমৃতার সত্তাকে। দেহ পড়ে আছে, কিন্তু মন সেই ১৯৩০ সালে।
৪০ বছরের সংসার জীবন যে দুঃখবোধ ঢেকে রেখে আবার এমন অনুভূতি জাগাতে পারে কে জানত! অমৃতা বুঝতে পারে না এ অমরত্ব কি না! অমরত্ব হবেই না কেন! অতীত যদি ভোলা না যায়। তবে সে তো অমরত্বই।
একটি পরিপূর্ণ সংসার, একজন ভালো স্বামী ৪০ বছরে যেটা কোনো রকম পীড়া তৈরি করেনি, কেমন করে এই এত দিন পরে সে বিদেশির জন্য মন উতলা হয়? কেন একটা বার তাকে দেখতে ইচ্ছে করে?
এর নাম কি দেয়া যেতে পারে?
এতো যাতনা, বেদনা ৪০ বছর ধরে দুটো মানুষ কোথায় লুকাতে পারে?
এজন্যই বোধ হয় এই উপন্যাসগুলি সেরার জায়গা দখল করে থাকবে। মৈত্রেয়ী দেবীর আত্মজৈবনিক উপন্যাস এটি। মির্চা এলিয়াদ ও একই ঘটনা নিজ বয়ানে লিখেছেন “লা নুই বেঙ্গলী” বইয়ে। পড়ে জানাব।
কিছু কথা মন ছুঁয়ে গেছে। যেমন-
মানুষ যা পেয়েছে শুধু সেটুকুতেই সন্তুষ্ট নয়, সে যে সৃষ্টিকর্তা।
সত্তার যে অংশ অমর সেইখানেই তো সাহিত্যের জন্ম। কাজেই একদিন যা ভালো ছিল, যদি সত্যিই ভালো হয়ে থাকে অন্য দিনে কি তা নষ্ট হয়?
কোন কোন মানুষের জীবনই তো দীপ যা অন্যের পথে আলো ফেলে। পৃথিবীকে চিনতে শেখায়।
মানুষের সঙ্গে সংস্পর্শে সুখ-দুঃখের ঘাতপ্রতিঘাত ভালোমন্দের দ্বন্দ্বে নিত্য মথিত হওয়াই লেখকের প্রেরণার উৎস।
মানুষ আপনাকে যা দিতে পারে তা দেশ, কাল, পাত্রে সীমাবদ্ধ_ সবটা দেওয়া যায় না, পাওয়াও যায় না, তাই যা পাওয়া গেল না তার জন্য হা-হুতাশ করে লাভ কি? যা হয়েছে তাই কি যথেষ্ট নয়?
যারা জীবনে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে তারাই শুধু জানে, কোনো কোনো ঘটনা বাইরে থেকে যা দেখায় তাই যথার্থ নয়। একই ভালোবাসা যা মানুষকে স্বর্গের ছবি দেখায়, তার চারপাশে সৌরভে ভরে দেয়, তারই আবার এমন রূপ আছে যা মানুষকে চূর্ণবিচূর্ন করে, সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারে। বাইরে থেকে দেখতে উভয়ের রূপ একই যেন যমজ ভাই, কিন্তু একজন প্রাণ দপয়, অন্যজন হরণ করে
মানুষকে ছেড়ে দাও, মানুষকে ছেড়ে দাও।
কাঠের হাতা যেমন সুপরসে ডুবে থাকলেও তার আস্বাদ পায় না তেমনি যার জীবনে সত্য নেই সে অনেক জানতে পারে, তবে জ্ঞানী হবে না।
মানুষ পুঁথির চেয়ে বড়।
সংসারে বুদ্ধি করে যারা চলতে পারে না, যারা প্রাকটিকাল নয়_ তাদের ভালোত্ব শ্রদ্ধনীয় নয়।
যে ভালোবাসা এ সংসারের বস্তু নয়, তা মানুষকে উন্নত ও পবিত্রই করে।
মানুষের সবচেয়ে বড় দিক তার সত্যানুসন্ধানী মন।
মরে না মরে না, প্রেম মরে না।
বিস্মৃতিই মৃত্যু_ এই বিস্মৃতিকে সরিয়ে রাখলেই অমরত্ব লাভ হতে পারে, আমরা অমৃতা হতে পারি।
আরও পড়ুনঃ ইডিপাস নাটকের বিষয়বস্তু | Oedipus Rex Bangla Summary PDF
আরও পড়ুনঃ দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত কাহিনী | Durgesh Nandini PDF