যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ঘ. স্নেহের কাঙ্গাল সুকান্তঃ
বন্ধু অরুণাচলকে লেখা পত্র থেকে বোঝা যায় সুকান্ত স্নেহ ভালবাসার কতটা কাঙ্গাল ছিল। অরুণাচল বসু ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। সাহিত্য চর্চায়ও এঁরা ছিলেন সমউৎসাহী। অরুণাচল বসুকে লেখা চিঠিতে সুকান্তর ঘনিষ্ঠতা ফুটে উঠে |
“আমার উপর রাগ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক আর আমিও তোমার রাগকে সমর্থন করি। কারণ, আমার প্রতিবাদ করার কোন উপায় নেই, বিশেষত তোমার স্বপক্ষে আছে যখন বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ। স্লানায়মান কলকাতার ক্রমন্তস্বমান স্পন্দনধ্বনি শুধু বারম্বার আগমনী ঘোষণা করছে আর মাঝে মাঝে আসন্ন শোকের ভরে ব্যথিত জননীর মত সাইরেন দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে।…./আমার কথা অনেক বললাম, এবার তোমার খবর কী তাই বল ।….তুমি কি লিখলে টিকলে?”
অন্য একটা চিঠিতে সুকান্ত লিখেছেন-
“অরুণ, তোর কাছ থেকে চিঠির প্রত্যাশা করা আমার উচিত হয়নি, সে জন্য ক্ষমা চাইছি। বিশেষতঃ তোর যখন রয়েছে অজস্র অবসর। সেই সময়টা নিছক বাজে খরচ করতে বলা কি আমার উচিত।”
শুধু তাই নয়, সুকান্ত-লিখিত ও উদ্ধারকৃত চিঠিসমূহের অধিকাংশ চিঠিই বন্ধু অরুণকে সম্বোধন করে লেখা। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে অভাব-অনটন, হাস্যরস, প্রেম- বিরহ, সংগঠন মান-অভিমান সাহিত্যচর্চা-এক কথায় সব কিছুই। অরুণাচল বসু লিখেছেন,
“সুকান্ত একবার বলেছিল, আমাকে তোরা হিংসা করিস না? জবাবে বলেছিলাম আর কোনো দিক থেকে তোকে হিংসা করলে সমূহ ক্ষতিরই সম্ভাবনা, কেবল যে জিনিষকে হিংসা না করে পারা যায় না তাহল তার প্রতিভা। সে হেসে জবাব দিয়েছিল, তা বটে, সে হিসেবে তো আমি রবীন্দ্রনাথকেও হিংসা করি।”
অরুণাচল বসুর মা ও সুকান্তকে ভালবাসতেন, স্নেহ করতেন। যে স্নেহে সুকান্ত মার ব্যথা অনেকটা ভুলতে পেরেছিলেন। সুকান্ত তাঁকে মা বলেই ডাকতে শুরু করলেন। ১৭-৪-৪২ বেলেঘাটা থেকে বন্ধু অরুণাচলকে লেখা এক চিঠির শেষাংশে সুকান্ত লিখেছেন,
“মাকে বলিস এবার আর তাঁকে লিখলাম না বটে, কিন্তু শিগগিরই একখানা বৃহৎলিপি তাঁর সম্মুখে উপনীত হবে। আর তিনি নিশ্চয়ই তার বপু দেখে চমকে যাবেন।”
২০ অক্টোবর সুকান্ত লিখেছেন- ‘বাবা-মাকে আমার বিজয়ার সশ্রদ্ধ নমস্কার জানাস, তাঁরা বোধ করি ভাল আছেন।’ তারিখ ছাড়া অন্য একটা চিঠিতে সুকান্ত সরলাবসুকে লিখেছেন, ‘মা, আপনার ছোট্ট মৌচাকটি আমার হস্তগত হল। কিন্তু কৃপণতার জন্য দুঃখ পেলাম। আপনি আমায় যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি যেতে বলেছেন।….আপনার আগ্রহ উপেক্ষা করতে পারব বলে মনে হয় না।’
সরলা বসুকে লেখা আর একটা চিঠির অংশ বিশেষ-‘মা, প্রথমেই আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে রাখা ভাল।….আজকাল আপনাকে….এই সময়ে আপনার পবিত্র সান্নিধ্য পেলে আমি নিজেকে এতটা অসহায় মনে করতুম না….আর সুযোগ পেলেই আমায় দেখতে পাবেন আপনার সমক্ষে। আপনি আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন।’
চিঠির উদ্ধৃত পঙক্তিসমূহ থেকে সরলাবসু আর সুকান্তর ভেতরকার সম্পর্ক আঁচ করতে বোধ করি কারও কোন কষ্ট হবে না। এমনকি স্বয়ং সরলাবসু বলেছেন, ‘প্রথম যেদিন ও আমাদের কাছে এলো বেলেঘাটা…ছেলের জন্মতিথির দিনে ওকে আমি মিষ্টি দিয়ে কত প্রশ্ন করলাম। একটি কথারও উত্তর ও দিল না। ওকে অভদ্র মনে করে মনটা আমার বিগড়ে গেল।….ও আসা-যাওয়া করত….. আমার ছেলে একদিন জানালো-ওর মা নেই। আমি উত্তর দিলাম, তবেই মাথা কিনেছেন আর কি!…. অরুণ উত্তরে বললে ও যে কানে শুনতে পায় না, মা, তাই তোমার কথার উত্তর দেয়নি।…আমাকে ও বড় ভয় করত।….সেদিন আমি আবার করেছি তালের পিঠে। খাওয়া দাওয়া সেরে তালের পিঠে বালিয়-কৌটোয় ভরে অরুণাচলের সঙ্গে চললাম ওদের নাটক দেখতে। গেটের সামনেই সুকান্তকে পাওয়া গেল…তাল ফুলুরি খাওয়ালাম ওকে।’
আরও পড়ুনঃ শরৎচন্দ্র রচনা সমগ্র PDF | রিভিউ Rachana Samagra Rachanabali
তথ্যসূত্রঃ
১. ১৩৫৪ সালের ‘পরিচয় শারদীয়'তে শ্রীযুক্ত জগদীশ ভট্টাচার্য কর্তৃক লিখিত কবি কিশোর নামক প্রবন্ধের অংশবিশেষ।
২. বদরুদ্দীন উমর, ২৫শে বৈশাখ, ১৩৭৭, ঢাকা।
৩. বন্ধু অরুণাচলকে লেখা সুকান্তের দীর্ঘতম এক ঐতিহাসিক চিঠির অংশবিশেষ।
৪. মার্কসীয় অর্থনীতির মূল সূত্র : এল. লিয়ন তিয়েভ।
৫. সাহিত্য চর্চা, বুদ্ধদেব বসু ।
৬. রবি রশ্মি। চারু চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এম. এ.।
৭. বাংলা সাহিত্যের খসড়া। শ্রী প্রিয় রঞ্জন সেন।
৮. সুকান্ত কবি ও মানুষ। সামাদ সিকদার। (ভূমিকার ক্ষেত্রে সামাদ সিকদারের সুকান্ত কবি ও মানুষ বইটি অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। সামাদ সিকদারের কাছে ঋণ স্বীকার করছি।)