Skip to content
Home » ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হয় কেন? প্রেসক্রিপশন বোঝার উপায় কি

ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হয় কেন? প্রেসক্রিপশন বোঝার উপায় কি

প্রেসক্রিপশন বোঝার উপায়

যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্টুডেন্ট। ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেলে প্রায় সময়ই বয়স্ক মানুষজন তাঁদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে হাজির হয় ডাক্তার কি কি ওষুধ লিখেছে এবং কোনটার কি কাজ এসব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু প্রেসক্রিপশন বোঝার উপায় যে আমার নাই সেটা কিভাবে বুঝাবো? আর আমি যখন ওষুধের নামই বলতে না পারি তখন তাঁদের চিরচেনা সেই ডায়লগ শুনতে হয় যে “ভার্সিটিত পইড়াও ডাক্তরের লেহা ধরতে পারো না, এতো লেহাফড়া কইরা কি করলা।”

যাইহোক, তারপর নিজে নিজে ঘেটে ঘুঁটে চেষ্টা করলাম সেই মর্ম উদ্ধার করতে, কেন বেশিরভাগ ডাক্তারের লেখা সাধারণ মানুষজন বুঝতে পারেনা। ইন্টারনেট থেকে অনেকগুলো কারণ পেলাম এবং সেগুলোই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি যাতে হাতের লেখা খারাপের পিছনের যুক্তিগুলো আপনারাও বুঝতে পারেন।

প্রথম কথা হচ্ছে যারা যত বেশি স্পীডে লিখে তাঁদের হাতের লেখা খারাপ হয়। আপনি আপনার আশেপাশের মানুষজনকে উপলব্ধি করলে দেখবেন হাতের লেখা তাঁদেরই সুন্দর যাদের লিখতে হয় কম। কলেজ পর্যন্ত আমাদের হাতের লেখাও ভালো ছিলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অনেক বেশি লিখতে লিখতে সুন্দরের প্রতি আর মনোযোগ নেই। কেননা সুন্দর হাতের লেখা দিয়ে পরীক্ষায় নাম্বার পাওয়া যায়না, তাই মনোযোগটা চলে যায় গুণগত লেখার দিকে। স্কুল কলেজ পর্যন্ত যারা লেখাপড়া করেছে তাঁদের হাতের লেখা তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে ভালো। কিন্তু আপনি স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় / মেডিকেলের স্টুডেন্টের লেখার প্রতিযোগিতা করালে দেখা যাবে বিশ্ববিদ্যালয় / মেডিকেলের স্টুডেন্টরা তিন গুণ বেশি লিখতে পারবে।

Download Now

আরও পড়ুনঃ পাশ মার্ক ৩৩ কেন ? ইতিহাস ও আমাদের ঔপনিবেশিক মনোভাব

এখন আসেন মেডিকেলের স্টুডেন্টদের জীবন সম্পর্কে জানি। মেডিকেলে পরীক্ষার ধরণ অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় একটু আলাদা। এখানে তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ে অনেক বেশি লিখতে হয়। পড়াশোনা হয় ইংরেজি ভার্সনে। মেডিকেলে পাশের নাম্বার হলো ৬০%। প্রতি প্রশ্নে টিচাররা সহজে নাম্বার দিতেই চায় না। মোটামুটিভাবে বলা যায় একটা প্রশ্ন কম লিখলে বা ছোট করে লিখলে ধরে নেন ফেইল নিশ্চিত। তখন পুরো পরীক্ষা আবার দিতে হয়।

মেডিকেলে OSPE নামে একটি পরীক্ষা আছে যেখানে প্রতি প্রশ্নের জন্য মাত্র ১ মিনিট সময় থাকে। দূরে দূরে রাখা ১০টি টেবিলে ১০টি প্রশ্ন থাকে। টিচাররা স্টপওয়াচ ধরে বসে থাকে। ১ মিনিট শেষ হলেই সবাইকে লাইন ধরে দৌড়ে পরবর্তী টেবিলে যেতে হয়। (অনেকটা বালিশ খেলার মতো।)

Download Now

এছাড়া প্রতিদিন সকালে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট এবং রাতে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট ওয়ার্ড ক্লাস হয়। সেখানে বসার কোন সুযোগ না থাকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক হাতের উপর খাতা রেখে ওয়ার্ড ক্লাসের লেকচার তুলতে হয়। এভাবে টানা ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে হাতের উপর খাতা রেখে কয়েকদিন প্রাকটিস করে দেইখেন তো হাতের লিখার অবস্থা কেমন হয়। আর এইটা শুধু ওয়ার্ডের কথা বললাম রেগুলার লেকচার আর পরীক্ষা গুলোতে সময় এত সীমাবদ্ধ থাকে যে সুন্দর করে লেখা তো দূরের কথা সব কিছু লিখে আসাটাই দুরূহ ব্যাপার। এইভাবে টানা ৫ বছর চলতেই থাকে। সব মিলিয়ে হাতের লিখা আর আগের মত থাকেনা। একটানা ইংরেজি ভাষায় লিখতে লিখতে একসময় টানা হাতের লেখা অভ্যাসে পরিনত হয়। তাই প্রতি শব্দের প্রথম কয়েকটা বর্ণ লিখে পরেরগুলো টেনে লিখে যেতে হয় এবং এছাড়া আর কোন উপায় নেই। তারপরও কিছু ব্যতিক্রম তো অবশ্যই থাকে ওরা সবদিক দিয়ে মানিয়ে হাতের লেখাটা একটু সুন্দর রাখতে পারে।

আরও পড়ুনঃ সিদ্ধান্তহীনতা দূর করার উপায় কি? আমরা কেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি?

এ তো গেলো পড়াশোনা পর্ব। পরবর্তীতে যখন ডাক্তার হিসাবে কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখন অনেকগুলা রোগী একসাথে যখন লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকে তখন পূর্বোক্ত অভ্যাসের মতো ঔষধের প্রথম দুই বা তিন অক্ষর ঠিক করে লিখে বাকিগুলো টানা হাতের অক্ষরে লিখতে হয়। (সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ সম্পর্কে অবগত নিশ্চই)। ধীরে সুস্থে সুন্দর করে লিখার মত সময় তো থাকেই না আবার ছাত্রজীবনের সেই অভ্যাসও ছাড়া যায়না।

আর যারা বেশি আইকিউ এর অধিকারী তাদের হাতের চেয়ে ব্রেইনের গতি বেশি থাকায় ব্রেইনের কমান্ড মত হাত সেটা যথাযথত টাইমে পালন করতে পারেনা! আর সেই টাইম এডজাস্ট করতে গিয়ে দ্রুত লিখার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু যারা অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট তারা প্রথম দুই অক্ষর দেখেই ওষুধের নাম দেখে বলে দিতে পারেন। (অনেকটা আপনি যেমন নিজের মাকে বোরখা পড়া থাকলেও চিনতে পারেন তেমনই) প্রেসক্রিপশন বোঝার উপায় একমাত্র তারাই ভালো জানেন।

Download Now

এইখানে আরও অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে যেমন যে যত ভালো ডাক্তার, তাঁর হাতের লেখা তত খারাপ। কারণ ভালো ডাক্তারের কাছে রোগি থাকে বেশি। বেশি মানুষ তাড়াহুড়া করে একসাথে হ্যান্ডেল করতে চাইলে হাতের লেখা একটু খারাপ হবেই আর সেটা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। যার কাছে রোগী নাই সে আস্তে ধীরে সময় নিয়ে লেখার সুযোগ পায়। অনেকে পারসোনাল চেম্বারে আবার ভালো করে লিখে কারন ওখানে তাদের সময় থাকে।

আরও পড়ুনঃ বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা | বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ কিছু উপকারিতা

সরকারি মেডিকেলে যে ভিড় হয় তাতে কি করবে বলেন। দেশে বরাবরই ডাক্তারের সংকট থাকে রোগির তুলনায়। ডাক্তার এক পাশ দিয়ে শুনে আমাদের সমস্যা। শোনার সাথে লিখতেও থাকে তাই প্রেসক্রিপশন বোঝার উপায় থাকেনা। রোগীকে বসায়া দেখা আর সুন্দর করে গোটা গোটা অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখতে থাকলে রোগী আর দেখা লাগবেনা। পিজিতে বা ঢাকা মেডিকেলে অথবা জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে গেলেই বুঝবেন রোগীর কত চাপ।

তবে প্রেসক্রিপশন সুন্দর না হোক, অন্তত বোঝা যায় এমনভাবে লেখা দরকার। প্রতি বছর প্রায় ৭,০০০+ রোগী মারা যায় ডাক্তারদের দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশনের কারণে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষজন বেশি ভুক্তভোগী। ডাক্তারদের শত ব্যস্থতার মাঝেও মোটামোটি বুঝা যায় এমন প্রেসক্রিপশন লিখার চেষ্টা করুক এটাই কাম্য। সেই দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন যেন না হয় কারো মৃত্যুর কারণ। ধন্যবাদ

Download Now
Tags:
x
error: Content is protected !!