যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বাজারে হাতে ভাজা মুড়ি চলে না। মানুষ কম দামের ইউরিয়া ও হাইড্রোজ মিশ্রিত মেশিনের মুড়িই কিনে।
বাজারে বড় ও ধবধবে সাদা মুড়ির চাহিদা বেশি। তাই লবণের বদলে চালে ইউরিয়া সার ও হাইড্রোজ মিশিয়ে মুড়ি ভাজা হয় কলে। ইউরিয়া ও হাইড্রোজ সরবরাহ করছেন মুড়ি ব্যবসায়ীরা। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মুড়ির আসল স্বাদ।
হাতে ভাজা মুড়ির চেয়ে মেশিনের তৈরি মুড়ির দাম প্রায় অর্ধেক কম হওয়ায় বাজার রাসায়নিক মেশানো মুড়ির দখলে।
ইউরিয়া ও হাইড্রোজ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে বাজারে যেসব ধবধবে সাদা ও ফোলানো মুড়ি পাওয়া যায়, তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মুড়িতে মেশানো রাসায়নিক পদার্থ কোনোভাবেই হজম হয় না। সেগুলো অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়াসহ কিডনির রোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
মুড়ির খাদ্যগুণ: (প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণে)
ক্যালরি- ৪০২ গ্রাম,
ফ্যাট/চর্বি- ০.৫ গ্রাম,
কোলেস্টেরল- নেই ,
শর্করা- ৮৯.৮ গ্রাম ,
প্রোটিন- ৬.৩ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৬ মি.গ্রা. ,
ফসফরাস- ৬ মি.গ্রা. ,
সোডিয়াম- ৩ মি.গ্রা.।
গ্রামবাংলায় একসময় অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ছিল শালি ধানের মুড়ি ও বিন্নি ধানের খই। এই দুটি ধান প্রায় হারিয়ে গেছে। খেতকলা / ক্ষেতকলা ধানের মুড়ির কথা আজও প্রবীনরা ভুলতে পারেনি।
বাংলাদেশ জুড়েই হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি হলেও দেশের বিভিন্ন এলাকার ‘মুড়ি পল্লী‘ গুলো হাতে ভাজা মুড়ির জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠছে।
মুড়ির গ্রাম হিসেবে নাটোরের গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর, ঠাকুরগাঁওয়ের গিলাবাড়ী ও মহব্বতপুর, গাইবান্ধার বৈরাগীপাড়া, টাঙ্গাইলের নারান্দিয়া, গাজীপুরের বারতোপা, ভোলার মুছাকান্দি ও চাচরা, চাঁদপুরের আলোনিয়া, বরিশালের বুড়িরহাট, ঝালকাঠির তিমিরকাঠি ও দপদপিয়া, বাগেরহাটের বারুইখালি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, মানিকগঞ্জের সরুপাই পরিচিত হয়ে উঠছে দেশে বিদেশে।
আরও পড়ুনঃ নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থের রুপাই চরিত্রের বাস্তব পরিচয় ও জীবনী
আমন মৌসুমের মোটা ধান দিয়েই সাধারণত হাতেভাজা মুড়ি হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের মুড়ির গ্রামগুলিত পাটজাগ, বউরি, নাখুচী, সাদা মোটা, মোটা, নারকেল ঝোপা, সাদা পেকরাজ, পারমা, লালগাইচা, ঘিগজ/গিয়জ/গীগজ, করচা মুড়ি, দুধরাজ, রঙ্গীখামা, আদুল জরা, লাল হাইল, শংকরবটি, জাগল, হুগলি, ছালট সহ সব জলিধানেই ভাল মুড়ি হয়।
পশ্চিমবঙ্গে তুলাই পাঞ্জি, কালো নুনিয়া, নলটি, মালা, নাগেশ্বরী ধানের মুড়ির সুনাম রয়েছে।
হামাই ধানের মুড়ি সুন্দরবন এলাকায় জনপ্রিয়।
মুড়ি তৈরির জন্য ধান প্রথমে শুকায় তারপর সেদ্ধ করা হয়। সেদ্ধ করার পর এই ধান দুই রাত এক দিন পানিতে থাকে। তারপর আবার শুকিয়ে ভাঙিয়ে চাল করা হয়। চাল খুটে-বেছে (পরিস্কার করে) তারপর মুড়ির চুলা জ্বালা হয়।
এক পাত্রে জ্বাল হয় বালি, আরেক পাত্রে চাল। চাল ভাজতে ভাজতে যখন একটু লাল হয় তখন বালির ভেতর চাল দিয়ে নাড়াচাড়া দিলেই মুড়ি ফোটে।
হাতে মুড়ি ভাজতে কোনো প্রকার রাসায়নিক দিতে হয় না। শুধুমাত্র একটু লবণ পানি দেয়া হয়।
হাতে ভাজা মুড়ির জন্য দুই চুলা ও চার চুলা পদ্ধতি চালু আছে। দ্রুত ভাজার জন্য এখন প্রায় সবাই চার চুলা ব্যবহার করে। চার চুলার দুটিতে বালু ও দুটিতে চাল দিতে হয়।
একত্রে চার চুলায় ভাজলে দিনে গড়ে ১০০ কেজিরও বেশি মুড়ি ভাজা সম্ভব। এক মণ ধান থেকে মুড়ি উৎপাদিত হয় ২২ থেকে ২৩ কেজি।
জ্বালনি ও মুড়ির ধানের দাম বেশি হওয়ায় হাতে ভাজা মুড়ির উৎপাদন খরচ বেশি। ফলে বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি।
লিখেছেনঃ Mahidi Hasan
তথ্যসূত্র ১. উবিনীগ ২. বারসিক ৩. প্রাযোগ ৪. উইকিপিডিয়া ৫. বাংলাপিডিয়া ৬. বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রিকা।