যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ এইসব দিনরাত্রি
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
নব্বই এর দশকের একটি একান্নবর্তী পরিবারের গল্প এইসব দিনরাত্রি। শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারে যারা বেড়ে উঠেছে তাদের কাছ মনে হবে এটা তাঁদের নিজেরই গল্প। হুমায়ূন আহমেদ এমনি এক জাদুকর যিনি কলমের জাদুতে সুখ-দুঃখের, আশা আনন্দের, ব্যর্থতা ও বঞ্চনার গল্প এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যাতে পাঠক নিজেকে সেই গল্পের একজন ক্যারেক্টার হিসেবে কল্পনা করে নেয়। কিছু সাধারণ মানুষের গল্প এতো অসাধারণভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা আমাদের হুমায়ূন আহমেদের মাঝেই ছিলো। সত্যি আমাদের প্রজন্ম হুমায়ূন আহমেদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। একটা প্রজন্মকে উনি বই পড়তে শিখিয়েছেন।
যাইহোক, এইসব দিনরাত্রি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রতিটি ক্যারেক্টার সম্পর্কে বলা উচিত। আমার কাছে প্রতিটা চরিত্র সমানভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। নীলু, শফিক, রফিক, শারমিন, মনোয়ারা, হোসেন সাহেব, কবির মামা, শাহানা আর ছোট্ট টুনিকে নিয়ে গড়ে ওঠা সেই মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখ দুঃখের গল্পগুলো শুধু পড়তেই মন চাইবে। পুরো বইটি শেষ করার পরও মনে হবে এতো তারাতারি শেষ হয়ে গেলো কেন? তারপর কি ঘটেছিলো? আর কি বড় করা যেতো না? কেন আর বড় করা হলোনা?
শুরু করি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সংগ্রামী মেয়ে নিলুকে দিয়ে। গল্পের বড় একটি অংশ জুড়ে আছে এই সংসারের মধ্যমণি নীলু। মেয়েরা যখন বইটি পড়বে অথবা নাটকটি দেখবে প্রতিটা মেয়েই নিলুর জায়গায় নিজেকে কল্পনা করবে। একজন আদর্শ সাংসারিক চরিত্র এই নিলু। আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের বড় ছেলের বউ। শাশুড়ী মনোয়ারা কিছুটা খিটখিটে স্বভাবের। সবকিছুতেই যেন একটা বিরক্তি। তার ধারণা কেউ তার দিকে নজর দেয় না, সবাই চায় তাকে তাড়িয়ে দিতে। সবসময় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুঁত ধরতে থাকলেও শ্বাশুড়ি কিন্তু নিলুকে সত্যি খুব ভালোবাসে। মনে মনে তার লক্ষী বৌমাকে আশীর্বাদ করেন। অন্যদিকে শ্বশুর সাহেবের কাছেও নিলু খুব ভালোবাসার মানুষ।
আরও পড়ুনঃ আরেক ফাল্গুন পিডিএফ জহির রায়হান উপন্যাস রিভিউ | PDF
আট দশটা পরিবারের মতো এই পরিবারের কর্তৃত্ব শাশুড়ির হাতে থাকলেও সংসার সামলানোর গুরুদায়িত্ব নিতে হয় বড় ছেলের স্ত্রী নীলুকে। নীলু নামের মেয়েটি পরম মমতায় তার সংসারকে আগলে রাখে। স্বামী সফিক, শ্বশুর শাশুড়ি হোসেন সাহেব ও মনোয়ারা, দেবর রফিক, ননদের শাহানা এবং ছোট্ট মেয়ে টুনির এই সংসারে নীলু মাঝে মাঝে নিজেকে বেশ সুখী মনে করে।
স্বল্পভাষী স্বামী শফিক, চুপচাপ ধরনের মানুষ, নিতান্তই ভদ্রলোক। দরকারের বেশি একটা কথাও বলেনা। মূলত সফিকের একা আয়ে সংসার চলে। সংসারের টানাপোড়েনের জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে নীলু একটা চাকরির ব্যবস্থা করে। ছোটখাট শত অশান্তিকে হাসিমুখে মানিয়ে নিয়ে দায়িত্ববান নীলু আরেকটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় কর্মজীবনে প্রবেশ করে। দায়িত্ব বেড়ে যায়, ঘরে বাহিরের সকল দায়িত্ব পালনের মাঝেই নিজের সুখের সন্ধান করে সে। স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় প্রিয় সংসারকে।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরীর সন্ধানে আছে দেবর রফিক। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও চাকরির দেখা মেলেনা। কিন্ত পছন্দ করে তারই সহপাঠী শারমিনকে। বিরাট বড়লোকের একমাত্র মেয়ে সে। তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অসাধারণ রূপবান সাব্বিরের সাথে। নানা জটিলতার পরও ঘটনাক্রমে রফিকের সাথেই বিয়ে হয় তার। বিশাল প্রভাবশালী ঘরের মেয়ে হলেও শারমিন মেয়েটি অতি সাধারণ পরিবারটির সাথে মিশে গেল খুব সহজেই!
পরিবারের আদরের মেয়ে শাহানা, ছেলেমানুষি স্বভাব তার। ভালোবাসে ছাদের চিলেকোঠায় বসবাস করা আনিসকে। তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু আনিসের বেকারত্ব এবং শাহানার পরিবারের কাছে তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। বিরাট জাদুকর হবার স্বপ্নে আনিস সাহেবও আশায় বুক বাঁধতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাহানার জীবনে তার পছন্দের মানুষটি আর আসেনি।
আরও পড়ুনঃ দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক PDF রিভিউ | প্রেক্ষাপট | পটভূমি | আলোচনা
হাসি কান্নায় চলমান এদের জীবনে এসে উঁকি দেয় কবির মামা। যিনি সুখী নীলগঞ্জের স্বপ্ন দেখেন। নীলগঞ্জের মানুষদেরকে নিয়ে আদর্শ এক সমাজ গড়ার স্বপ্নে বিভোর একজন মানুষ। এইসব দিনরাত্রি নাটকে কবির মামার ভূমিকায় অভিনেতা আবুল খায়ের ছিলেন অনন্য।
পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য টুনি। সকলের কাছে বড়ই আদরের মেয়ে। কিন্তু সে আদর বেশিদিন টিকেনি। তার শেষ পরিণতি পাঠককে কাঁদতে বাধ্য করে। দুরারোগ্য লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জার্মানীর এক হাসপাতালে আদরের টুনি একা একা পারি দেয় না ফেরার দেশে।
পরিশেষে বলা যায় এই গল্পের কোনো শেষ নেই। এই গল্প এখনো চলমান আমাদেরই কোন এক মধ্যবিত্তের পরিবারে। আর শেষ হবার দরকারও নেই। হুমায়ূন আহমেদের কলম বন্ধ হয়ে গেলেও গল্পটি থেমে যায়নি। যারা এখনো উপন্যাসটি পড়েননি, আর দেরি না করে শুরু করে দিন। চাইলে ইউটিউব থেকে নাটকটিও দেখে নিতে পারেন। গল্পটিতে আপনি বারবার নিজেকেই আবিষ্কার করবেন।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম-সনদ অথবা সার্টিফিকেটে নামের ভুল সংশোধন