যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
কবি একটি বহুল আলোচিত বাংলা উপন্যাস। এর রচয়িতা বাংলাভাষার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কাহিনীর বিবেচনায় এটি একটি সামাজিক উপন্যাস। কবিয়াল, ঝুমুরদল সহ ঐ সময়ের জীবনযাত্রার প্রেক্ষিতে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি রচিত হয়েছে।
লেখক উপন্যাসটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন কিভাবে একটা হত দারিদ্র্য পরিবার থেকে একজন কবি হইয়ে উঠেছেন। তার কবি হওয়ার পূর্বে লোকের নিন্দাও সমালোচনা। বাস্তবিক লেখক বর্তমানের সমাজ ব্যাবস্থাই ফুটেয়ে তুলেছেন এই উপন্যাসটিতে। কেউ কারো উন্নয়ন চায়না। সবাইচাই দরিদ্ররা দরিদ্র থাকুক। যাতে তাদের থেকে অধিক সন্মানিত আরকেউ না হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পদ্মানদীর মাঝি PDF | সারাংশ | Padma Nadir Majhi Book Review
‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
কালো কেশে রাঙা কুসুম হেরেছ কি নয়নে?’
‘চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল।’ ডোম পরিবারের সন্তান নিতাই-এর কবি হওয়ার ঘটনাটা একটু আশ্চর্যের বৈকি। কারণ সেকালের কবিরা সচরাচর উঁচু বংশের হতেন। একে তো নিচু জাত, তার উপর দরিদ্র হওয়ায় নিজস্ব কোনো দল নিতাই-এর ছিল না। একটা ঝুমুর দলের সঙ্গে বিভিন্ন মেলায় ঘুরে সে তার স্বরচিত গান শোনায়।
উপন্যাসের নিতাই-এর ভালোবাসার দুটি স্বরূপ দেখা যায়।
এক. বিবাহিত ঠাকুরঝির প্রতি এক ধরণের শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালো লাগা আর
দুই. ঝুমুর দলের দেহপসারিণী বসন্তের সঙ্গে মনের মানুষের সম্বন্ধ।
তবে দুজনের অকাল মৃত্যুর কারণে নিতাই-এর মধ্যে ভিন্ন এক বোধ জাগ্রত হয় এবং সে রচনা করে-
‘এই খেদ আমার মনে—
ভালোবেসে মিটল না এ সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়— জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?’
উপন্যাসের এই ছোট্ট লাইনের মাঝে যেন উপন্যাসের সকল রহস্য লুকিয়ে আছে৷ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামাজিক উপন্যাস ‘কবি’ আমাকে আশাহত করেনি৷ এক কথায় দারুণ ছিল৷ একনাগাড়ে পড়ার মতো উপন্যাস৷ বাংলা উপন্যাস ভান্ডারের এক অনন্য সংযোজন এই ‘কবি’ উপন্যাস৷
উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয় বিখ্যাত চোর-ডাকাত বংশ ‘ডোম’-বংশের সন্তান নিতাই চরণের বিখ্যাত কবি হওয়ার স্বপ্ন লালনের মাধ্যমে৷ অবহেলিত, স্বল্প-শিক্ষিত ও নিচু বংশের সন্তান নিতাই চরণের বড় কবি হওয়ার স্বপ্ন যেন বামুন হয়ে চাঁদ ধরার মতোই ব্যাপার৷
উপন্যাসের দুই প্রধান নারী চরিত্র একজন নিতাই চরণের বন্ধু রাজার বিবাহিত শালিকা যাকে উপন্যাসে আমরা ঠাকুরঝি নামে চিনি আর অপর জন হলো ঝুমুর দলের নাচনী ওয়ালী বসন (বসন্ত )৷ নিতাই চরণের কবি হওয়ার পথে প্রথমে ঠাকুরঝি ও পরে বসনের জীবনের সংঙ্গে সংপৃক্ততা ও তাদের জীবনের বাস্তবতা ঔপন্যাসিক তার উপন্যাসে তুলে এনেছেন অসামান্য শৈল্পিক দক্ষতায়৷
আরও পড়ুনঃ বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প PDF Download | Bonofuler Srestho Golpo PDF
কবিয়াল হওয়ার নেশায় নিতাই চরণকে মাতৃত্বের সম্পর্ক ও আপন বংশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়৷ অকৃত্রিম বন্ধু রাজার আশ্রয়ে স্টেশনে কুলির কাজ করে জীবীকা নির্বাহের পাশাপাশি তার স্বপ্ন লালনে ব্যাস্ত৷ রাজা তার স্বপ্ন লালনের অনুপ্রেরণা৷ দুয়েকটা কবি গানের আসরের জন্য বায়নাও আসে মাঝে মধ্যে৷ এইসময়ে ভাব জমে ওঠে রাজার বিবাহিত শালি ঠাকুরঝি’র সাথে৷ এক রাতে ঝুমুর দলের নাচনী ওয়ালী বসনের সাথে নিতাইকে বদ্ধ ঘরে দেখতে পেয়ে ঠাকুরঝি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে৷ ছড়িয়ে পড়ল কবিয়াল নিতাই চরণ ঠাকুরঝিকে মন্ত্র করেছে৷
ঠাকুরঝি’র সংসার ভাঙা আর লোকের নিন্দার কথা ভেবে নিতাই চরণ বসনের নিমন্ত্রণে সারা দিয়ে চলে যায় ঝুমুরদলের সঙ্গে৷ ঝুমুর দল ত্যাগ করবে করবে ভেবেও হয়ে ওঠে না৷ বসনের সাথে গাঁট বাঁধে নিতাই চরণ৷ বসনের মৃত্যু হয়৷ বসনের মৃত্যুর সাথে যেন নিতাই চরণের জীবনেরও একপ্রকারে মৃত্যু ঘটে যায়৷ নিতাই চরণ দল ত্যাগ করে বৈরাগ্যের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাশী চলে যায়৷ অতঃপর নিতাই চরণ ফিরে আসে সেই অকৃত্রিম বন্ধু রাজার কাছে, সেই পুরনো দিনের আস্তানা -স্টেশনে৷
শেষ পর্যন্ত নিতাই চরণ কি পেরেছেন বড় কবির খ্যাতি অর্জন করতে? বসনকে সংঙ্গে নিয়ে তার ঝুমুর দলের যাত্রা কেমন ছিল? ঠাকুরঝি’র শেষ পরণতি কী হয়েছিল? নিতাইয়ের সাথে কি ঠাকুরঝি’র আবারও দেখা হয়েছিল কি? সেইসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য উপন্যাসটি পড়ে দেখতে হবে আপনাকেও৷
তারাশঙ্কর সাহেব বইয়ের শেষে আসিয়া একখানা টুইস্টও মারিয়াছেন। যদিও থ্রিলার বই এবং মুভি দেখিতে দেখিতে এইরকম টুইস্ট অতি নগন্য লাগিতেও পারে কিংবা নগন্য হইলেও বই পড়ার তৃপ্তিও আনিয়া দিতে পারে।
সবার শেষে বলা চলে—কবি হওয়ার অনেক জ্বালা। বারি সিদ্দিকীর গানের মতো বলিতে হয়, “আমার ঘরেও জ্বালা বাইরেও জ্বালারে।”
আরও পড়ুনঃ মেঘদূত কালিদাস PDF | Meghdoot Kalidas Bengali English Sanskrit