যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ জাল
লেখকঃ আবু ইসহাক
প্রকাশনী : নওরোজ সাহিত্য সম্ভার
নিভৃতচারী লেখক আবু ইসহাক ১৯৪৬ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সে লিখেন সূর্য দীঘল বাড়ি উপন্যাসটি। কিন্তু প্রকাশক না পেয়ে বছর পাঁচেক পর লিখেন রহস্যোপন্যাস “জাল”। চলুন সে গল্প লেখকের কাছ থেকেই শুনে নেই।
আমার প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী‘ লেখা শেষ হয় ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে। তারপর চার-চারটে বছর প্রকাশকের সন্ধানে কলকাতা ও ঢাকায় ঘোরাঘুরি করেও বইটির প্রকাশক পাইনি। হতাশ হয়ে ভাবলাম, ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখলে হয়তো প্রকাশক পাওয়া যাবে। কলম হাতে নিলাম। কিন্তু কী লিখবো? আমি পেশায় ডিটেকটিভ। আমার পেশাগত প্রশিক্ষণ ও পড়াশুনো আছে, অপরাধ তদন্তের বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে, আর আছে ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখার মত প্রচুর মালমসলা। তাই বিদেশী গোয়েন্দাকাহিনী নকল করে বা তার ছায়া অবলম্বন করে কিছু লেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া অপরাধ তদন্তের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা নেই এমন কিছু লেখকের মতো আজগুবি ও অবাস্তব তদন্তকাহিনী পরিবেশন করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মালমসলা তো আছে প্রচুর, কিন্তু কোনটা লিখবো? ঠিক তখনই মনে পড়লো, ১৯৫০ সালে জাল নোটের কয়েকটা মামলার তদন্তের ভার পড়েছিল আমার ওপর। সেই অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করেই ‘জাল’ উপন্যাসটি রচিত।
আরও পড়ুনঃ আবু ইসহাকের গল্প : ডুবুরির কৌতুকপূর্ণ চোখ
১৯৫৪ সালে উপন্যাসটি লেখা শেষ করে পাণ্ডুলিপি তৈরি করছি, এমন সময় হঠাৎ ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী‘ উপন্যাসের প্রকাশক পাওয়া গেলো। ১৯৫৫ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে উপন্যাসটি সাহিত্যিক ও সাহিত্যরসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী‘ যে সুখ্যাতি অর্জন করেছে তা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় তখন ডিটেকটিভ উপন্যাস প্রকাশ করা আমি মোটেই সমীচীন মনে করিনি। তাই আমার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘জাল’-এর পাণ্ডুলিপি সুদীর্ঘ চৌত্রিশ বছর বাক্সবন্দী হয়ে ছিলো। ১৯৮৬ সালে আমার ‘পদ্মার পলিদ্বীপ‘ উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর ‘জাল’-এর পাণ্ডুলিপি বের করে আগাগোড়া পড়লাম এবং নতুন করে বুঝতে পারলাম, ‘জাল’ আমার সুনাম মোটেই ক্ষুণ্ণ করবে না, কারণ এটি একটি ভিন্ন স্বাদের উপন্যাস, গতানুগতিক ডিটেকটিভ উপন্যাস নয়। তাছাড়া এর ভেতরে আছে অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে আমার উদ্ভাবিত কিছু মৌলিক পদ্ধতি।
উপন্যাসটি ১৯৮৮ সালে ‘আনন্দপত্র’ ঈদ সংখ্যার প্রথম প্রকাশিত হয়। কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনার পর এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো।
রিভিউ
ইদানীং খুব জনপ্রিয় হলেও বাংলা সাহিত্যে এক লম্বা সময় গোয়েন্দা আখ্যানের সংখ্যা ছিল অল্প। ব্যোমকেশ আর ফেলুদা কে একপাশে সরিয়ে রাখলে সব শ্রেণীর পাঠকের বুক সেলফে ঠাঁই পেয়েছে এমন বই এখনো হাতেগোনা কয়েকটিই। নীহার রঞ্জন গুপ্তের কিরীটি ঠিক সময়ের গন্ডি পেরিয়ে আসতে পারে নি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু কখনো কখনো অতিমাত্রায় শিশুতোষ, সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিন মাসি, সমরেশ মজুমদারের অর্জুন বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এর শবরের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে তেমন নেই। বাংলাদেশের কথা যখন এসেই পড়ল তাহলে দেখা যাক এখানকার অবস্থা… ।। অনেকেই লিখছেন তবে পাঠকের মনে দাগ কাটা লেখার সংখ্যা স্বল্প।
লেখক আবু ইসহাক কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। স্কুল লেভেলে তাঁর লেখার সাথে পরিচয় হয়ে যাই আমরা। পাঠ্যবইয়ে মহাপতঙ্গ এবং জোঁক গল্প পড়ে আবু ইসহাকের সাহিত্য সম্পর্কে যথেষ্ট আগ্রহ জন্মেছিলো। আর যারা মোটামুটি বইপত্র পড়েন তাদের কাছে সূর্য দীঘল বাড়ী বেশ সুপরিচিত নাম। তবে গোয়েন্দা উপন্যাস আর আবু ইসহাককে মেলানো একটু কষ্টসাধ্য। লেখক ৩৪ বছর আলোর মুখ দেখান নি উপন্যাসটিকে। আমরাও খুব সম্ভবত বঞ্চিত হলাম আরো ভালো কিছু গোয়েন্দা উপন্যাস পাওয়া থেকে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা একাডেমী সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান সম্পাদক আবু ইসহাক
খুনের রোমহর্ষকতা বা গুপ্তধন আবিষ্কারের উত্তেজনা বোধ হয় পাঠককে একটু বেশিই নাড়া দেয়, তাই বেশিরভাগ পাঠকপ্রিয় গোয়েন্দা উপন্যাস এসব নিয়েই। আপনাকে মুদ্রা জালিয়াতি নিয়ে কোন লেখা জিজ্ঞেস করি, হুট করে বলা হয়তো মুশকিল হবে। অথচ মুদ্রা জালিয়াতি যে খুব দুর্লভ ঘটনা তা না। এর ক্ষতিও কিন্তু বেশ, যদিও কিছুটা অর্থনৈতিক জ্ঞান না থাকলে তা বোঝা মুশকিল। সঙ্গত কারণেই বেশিরভাগ মানুষই চেষ্টা করে জাল টাকা পেলে তা হাতবদলের।
“জাল” উপন্যাসের গল্প এই জাল নোট নিয়েই। উপন্যাসটা হয়ত মাস্টারপিস না, তবে বাংলা সাহিত্যের অপরিণত এই ধারার মধ্যে অন্যতম তো বটেই। আর লেখকের পেশাগত অভিজ্ঞতা এই গল্পের প্রাণ।
১৯৪৭, দেশ সদ্য স্বাধীন। স্রোতের মতো শরনার্থী আসছে ওপার থেকে। ওপারের টাকা এপারে অচল, তাই শরনার্থীরা একে ওকে ধরে ভারতীয় টাকাকে পরিবর্তন করছে পাকিস্তানি টাকায়। এই সুযোগেই চলছে জাল মুদ্রার রমরমা কারবার। পুলিশের স্পেশাল অফিসার আলী রেজার অধস্তন ইলিয়াস আলীর হাতে পড়ে এই দুষ্টচক্র ভাঙার ভার। এই চরিত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো, একে এমনভাবেই গড়া যেন আপনি একে গোয়েন্দা উপন্যাসের সুপারম্যানের চেয়ে কোন সাধারণ পুলিশ অফিসার হিসেবেই ভেবে স্বস্তি পান। ইলিয়াস আলী বুদ্ধিতে জালিয়াত চক্রের দিনাজপুরের এক এজেন্টের কাছে পাঠানো এক চিঠির ইন্টাসেপ্ট সম্ভব হয়। এবার ইলিয়াস আলীর সামনে আরেক চ্যালেঞ্জ, চিঠিটি ক্রিপ্টোগ্রাম ব্যবহার করে লেখা।
আরও পড়ুনঃ হারেম | গল্পগ্রন্থ | আবু ইসহাক | Harem by Abu Ishak PDF Download
এরপর কেমন করে খুললো ক্রিপ্টোগ্রামের জট!! কিভাবেই বা জালিয়াতির শিকার এক রিফিউজি পরিবারের সাধারণ মেয়ের সহায়তায় ভাঙ্গা সূত্র জোড়া লাগিয়ে পাওয়া গেল দুষ্টচক্র ভাঙ্গার মন্ত্র তা না হয় আপনিই পড়ে আবিষ্কার করুন। ইলিয়াস আলীর সাথে না হয় একটু ঘুরেই বেড়ান দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত।। ও হ্যাঁ “জাল” এ আপনার জন্য বোনাস হিসেবে আছে একটু রোমান্টিসিজম আর ধর্মান্ধতার কথা।।
উপন্যাসের প্রধানতম দুর্বল দিক হলো স্বল্প পরিসর হওয়ায় এক ইলিয়াস আলী ছাড়া বাকি চরিত্রগুলো ভালোভাবে ডেভলপড হয় নি আর গোয়েন্দা উপন্যাসের টানটান উত্তেজনা ও হয়ত আপনি পাবেন না। তারপরও, যদি আপনি বাস্তবধর্মী, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ভিন্নধর্মী প্লটের কোন গোয়েন্দা উপন্যাস পড়তে চান, “জাল” আপনার জন্যই।
রিভিউ করেছেনঃ দীপ্ত সেন