যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আবু ইসহাক এর অতি বিখ্যাত গল্প জোঁক শুধু এর অসাধারণ প্রতীকময়তার কারণেই স্মরণীয় হয়ে আছে বহুবছর ধরে। ভাগচাষিরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলায়, কিন্তু অর্ধেকই দিয়ে দিতে হয় মালিককে। তেমনই এক ভাগচাষি ওসমান। বুকসমান পানিতে নেমে সন্তানের স্নেহে গড়ে-তোলা পাটগাছগুলোকে কেটে তুলতে তুলতে তার শরীরে কখনো কখনো জোঁক ধরে, রক্ত চুষে পুষ্ট হয়। তার দীর্ঘশ্বাস পড়ে— আহা তার মেহনতের ফসলে যদি আর কেউ ভাগ না বসাত! কিন্তু করার কিছু নেই, তার অমানুষিক পরিশ্রমের ফসলের ভাগিদার সে একা নয়, কারণ জমি তার নয়। জমির মালিক কোনো কাজ না করেই অর্ধেক নিয়ে যায়, কষ্ট হলেও এতদিন তারা সেটা মেনে আসছিল। কিন্তু ‘শিক্ষিত’ মালিক এবার নতুন ফন্দি আঁটেন, ‘তেভাগা’ আইন পাস হওয়ার সম্ভাবনায় নিরক্ষর চাষিদের কাছ থেকে টিপসই নিয়ে নেন। কী লেখা ছিল ওই কাগজে, সরল চাষিরা তা বোঝেওনি, এ নিয়ে প্রশ্নও তোলেনি।
ফসল ওঠার পর যখন তারা দেখতে পেল— মালিকের লোকজন ফসলের তিনভাগের দুইভাগ নিয়ে যাচ্ছে, তখনই কেবল প্রশ্ন জাগে এবং জানতে পারে মালিক যে তাদেরকে লাঙল-গরু কেনার জন্য টাকা দিয়েছে ওই কাগজে সেটাই লেখা ছিল, যদিও মোটেই সেটা ঘটেনি। তারা প্রতারিত হয়, অনুভব করে— জোঁকের মতোই এরাও তাদের রক্ত চুষে খাচ্ছে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে পাট তোলার সময় জোঁকের রক্ত চুষে খাওয়ার প্রতীকে এই গল্পে আবু ইসহাক এক অসামান্য কুশলতায় শ্রেণীবিভক্ত এই সমাজের শোষণের চিত্রটি এঁকেছেন।
আরও পড়ুনঃ ছুটি গল্প PDF | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প | Chuti | বিষয়বস্তু | চরিত্র
গল্পটিতে পাটচাষের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা আছে, সেটা একমাত্র একজন অভিজ্ঞ কৃষকের পক্ষেই দেয়া সম্ভব। আবু ইসহাক কত গভীরভাবে ওই জীবনকে চিনতেন এই একটি গল্পেই তার সাক্ষ্য রয়েছে। মনে হয় ওই কৃষকের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও ডুব দিয়ে দেখেছেন পাট কাটার দৃশ্য, কিংবা কে জানে হয়তো নিজেও কেটেছেন তাদের সঙ্গে। আবু ইসহাকের দেখার অতলস্পর্শী চোখ আমাদেরকে এমনটি ভাবার জন্য প্রলুব্ধ করে।
আরও পড়ুনঃ পদ্মার পলিদ্বীপ আবু ইসহাক PDF