যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ডাংকি (DUNKI) | শেষ পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | প্রথম পর্ব
শেষবারের মত আমার ডাংকিতে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। সুখ-দু:খের পাশাপাশি কাহিনীতে একটু কমেডি না থাকলে কেমন দেখায় বলেন! প্রথম পর্বে আপনাদের আমাকে বয়ে নিয়ে যাওয়া এয়ারলাইন্সের নাম মনে রাখতে বলেছিলাম, এই বিমানটি প্রথমে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর এবং এগার ঘন্টা পর সিঙ্গাপুর থেকে সোজা গ্রীসের রাজধানী এথেন্স রওনা করে।
সেই প্রথম দিকে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকার পার্শ্ববর্তী এক পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছি। আশেপাশে বাঙালী, আফ্রিকান সহ অনেক রকমের মানুষের আনাগোনা। এরমধ্যে দুই দেশিভাই আমাকে দেখে কাছে এলেন, আমি হাসিমুখ করে তাদের দিকে তাকালাম।
দেশিভাই ১: ভাই কি নতুন?
আমি: হ্যাঁ ভাই।
দেশিভাই ২: অপেক্ষাকৃত কম বয়সী, নির্বিকার, আগ্রহ নিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণরত…
দেশিভাই ১: দেশের বাড়ি কই?
আমি: ঢাকায়।
দেশিভাই ২: নির্বিকার, আগ্রহ নিয়ে আমাকে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণরত। সম্ভবত দেখতে আমি তার চে স্মার্ট, এটা তার সহ্য হচ্ছিল না।
দেশিভাই ১: তুর্কি দিয়া ঢুকছেন নাকি সাইপেরাস (সাইপ্রাস) দিয়া?
দেশিভাই ২: যথারীতি নির্বিকার এবং একই ভঙ্গিমায় পর্যবেক্ষণরত..
আমি: আমি সিঙ্গাপুর হয়ে আসছি ভাই।
আমার উত্তর শুনে দেশিভাই ১ আক্কেলগুড়ুম হয়ে দেশিভাই ২ এর দিকে তাকালেন। দেশিভাই ২ এবার সরব হলেন! “সিঙ্গাপুরের লগে লাইন আছে নি? আহেন” – বলে দেশিভাই ১ কে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে আমাকে শুনিয়েই বলে গেলেন- “আরে ঢাকাইয়া পোলাপাইন চাপাবাজ”! ঘটনার আকস্মিকতায় আমিও আক্কেলগুড়ুম।
বেশকিছুদিন পরে বুঝেছি কেন আমার উত্তর তাদের কাছে অবিশ্বাস্য লেগেছে! আশাকরি আগের দুই পর্ব পড়ে আপনারাও সেটা বুঝে ফেলেছেন এতক্ষণে!
শাহরুখ-হিরানীর ডাংকি নিয়ে আমার মত কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগী এক্সাইটেড। অনেকেই ইউটিউব/গুগলের কল্যানে ডাংকি শব্দের মর্মার্থ জেনে ফেলেছেন। বিভিন্ন মুভি রিলেটেড গ্রুপে রিভিউ লেখেন এমন অনেকেই সংক্ষেপে অবৈধ অভিবাসন বেইজড মুভি হতে চলেছে লিখে ফ্যানদের কিউরিয়াস মাইন্ড স্যাটিস্ফাইড করেছেন। তাহলে আমি একটা মুভি রিলেটেড গ্রুপে মোটামুটি একটা গল্প লিখতে কেন বসে পড়লাম? আমি গ্রুপটার কাছে ঋনী তারা আমাকে এখানে সাহিত্য চর্চা করার সুযোগ দিয়েছে! তো কেন এই লম্বা সাহিত্য? কেন পাঠক টেনে ধরে রাখার মত ইন্টারেস্টিং করে একটি গল্প বলার চেষ্টা? বলতে পারেন-নাম ফুটানোর জন্য! সেক্ষেত্রে দু:খিত এটি আমার ছদ্দনাম/ছদ্দপ্রোফাইল। আইডিটা কাল হারিয়ে গেলে পরশু অন্য নামে থাকব আমি। যারা এই লেখা পড়ে আমার সাথে এড হয়েছেন, তারাও দেখেছেন আমার প্রোফাইল গড়ের মাঠ!
আমার এই গল্পের দুই পর্ব পড়ে প্রায় সকল সিনেমাখোর পাঠক মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং একইসাথে তাদের আরেকটি প্রতিক্রিয়া ছিল হিরানী এরকম এলিমেন্ট পেলে একটা বিস্ফোরক মুভি বানাবে! আচ্ছা, কারো মাথায় কি একবারের জন্য এই চিন্তা এসেছে- যে আমাদের দেশের কেউ এমন স্টোরিলাইন পেলে একটা ধামাকা সিনেমা বানাতে পারবে? এই গল্পে তো বাংলাদেশের কথাই আছে, আমাদের ছেলে, আমাদের আবেগ, আমাদের বাস্তবতা ! একটা স্ট্রং সোশ্যাল মেসেজও আছে..! হিরানীর সিনেমার ডায়লগ দিয়েই যদি বলি- “কিসিকি দিমাগ মে ইয়ে সোচ আয়া? এনিওয়ান? ন্যাহি, সাব রেস মে লাগ গ্যায়ে -হিরানী কা ফিল্ম ক্যায়সা হোগা”
কারো মুখে একবারও শুনতে পেলাম না আমাদের দেশের একজন কীর্তিমান পরিচালকের নাম! যিনি এমন এলিমেন্ট ওরিয়েন্টেড স্টোরিলাইন পেলে ধামাকা করে ফেলতেন! তাহলে আমাদের দেশে কি এমন কোনো ফিল্ম মেকার নেই এরকম একটা মুভি পর্দায় তুলে আনার মত? স্বাভাবিকভাবেই উত্তর হবে- আছে হয়ত, তবে তিনি কোনো দর্শকের মগজ-মননে জায়গা দখল করতে ব্যর্থ, এটা পরিষ্কার !
কেউ কেউ অবশ্য স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পেরেছেন, প্রথম পর্ব পড়ে একজন লিখেছেন ‘মনে হলো একটা মুভি শেষ করলাম’ এবং দুই পর্ব পড়ে একজন লিখেছেন- ‘একটা মুভি দেখার সমান আমেজ নিয়ে লেখাদুটো পড়েছি’। হয়ত.. এই তালিকায় আরও কেউ থেকে থাকবেন। এখন সবার কাছে প্রশ্ন- নিজের দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে, নিজেদের গল্পে কেন আমরা এমন সিনেমা পেতে আশাবাদী নই? ভাবতে থাকুন আমি ততক্ষণে আবার ডাংকিতে ফিরে যাই..
…রাত গভীর হয়েছে, সামান্য আলোর ব্যবস্থা আছে ভেতরে কিন্তু তা এতই সামান্য যে তাতে কাছে পিঠের মানুষের অবয়ব বুঝতেই কষ্ট হচ্ছে আপনার। কথা বার্তায় শুধু ফিসফিসানি। এর সব যদিও আপনার ভালর জন্যই, কারন এখানে আপনাদের উপস্থিতি স্থানীয় প্রশাসন থেকে আড়াল করা, এলাকার প্রভাবশালী কাউকে টাকা দিয়ে আপনাদের এই ট্রানজিট পয়েন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জায়গাটা এখন একেবারে গিজগিজে অবস্থা, এত এত ডাংকির দল আসবে সেটা অচিন্তনীয় ঠেকবে আপনার কাছে!বসে নড়াচড়া করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে, একটু উঠে দাঁড়াতে মন চাইছে? ভেবে চিন্তে দাঁড়াবেন, একবার উঠে দাঁড়ালে ফের বসার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাটুকু পেতে কষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু!
আর কতক্ষণ? কখন মুক্তি পাব এই যন্ত্রনা থেকে? কখন রওয়ানা হব? -এসব চিন্তা ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা আপনার মাথায় আসবেনা সে সময়, সাথের বা আশেপাশের কেউও জানে না এসবের উত্তর। ইচ্ছা করবে চিৎকার করে কাউকে জিজ্ঞেস করতে – ‘আমরা কখন রওয়ানা হব’?? পরক্ষনেই ডংকারের জানোয়ার স্বভাবের কথা মনে করে নিজের মনকে শান্ত করবেন আপনি। অনেকটা বুকে হাত দিয়ে ‘অল ইজ ওয়েল.. অল ইজ ওয়েল’ বলার মত..
এখান থেকে মুক্তি পেয়ে শুধু যে পায়ে হাঁটা আর ক্ষুধার কষ্টই সর্বেসর্বা তা কিন্তু নয়! আপনার এই ভোগান্তি আবহাওয়া এবং জলবায়ুর দ্বারা বহুলাংশে প্রভাবিত। সময় ভেদে শীত-গ্রীষ্ম মিলিয়ে বছরে গড়ে ৬-২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা বিরাজ করে এই অঞ্চলে। মাঝে মাঝে কম-বেশী তো হয়ই, তুষারপাতও হয় বছরে তিন/চার মাস! স্কুলের ভুগোল বই-তে ভুমধ্যসাগরীয় জলবায়ু পড়েছিলেন সবাই। মনে নেই নিশ্চই, আজকের পরে অবশ্য মনে থাকবে বাকি জীবন। সেখানে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হয় না, হয় শীতকালে ! চিন্তা করতে পারছেন? কী ভোগান্তিতেই না পড়তে পারেন সামনের দিনগুলোতে ! দেশ থেকে গেমে চড়ার সময় এসব নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই গবেষণা করে আসেননি আপনি, আপনার কোমলমতি মন তাই অনাগত ভোগান্তিকে ভাগ্যের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ করবে একসময়, শীঘ্রই!
তীব্র অস্বস্তি, সীমাহীন দুর্ভোগ আর ডংকারের দেয়া প্রতি বেলায় দুই স্লাইস করে শুকনো রুটি খেয়ে দুদিন পরে ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন হলো। পরবর্তী পয়েন্ট থেকে সবুজ সংকেত এল, ডাংকির বিশাল দলটি কয়েকটি ছোট দলে ভাগ হয়ে রাতের আঁধারে ডংকার দলনেতার পিছু পিছু রওয়ানা হলো। আপনি এমনই কোনো এক দলের সওয়ারী। টহল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে যথাসম্ভব নি:শব্দে পথচলা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনারা রাতে হাঁটবেন, দিনে ঘন কোন ঝোপঝাড়-জঙ্গলে লুকিয়ে বিশ্রাম নেবেন, কখনো দিনেও হাঁটবেন। সবই নির্ভর করবে বর্ডার পেট্রোল/স্থানীয় পুলিশ এবং চলার পথে কোনো লোকালয়ের মানুষজনের চোখ ফাঁকি দেয়ার উপর। অনেকসময় মানব পাচার হচ্ছে, এই চিন্তা থেকে নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিয়ে দেয়! ফলাফল- ডংকার পলাতক এবং আপনি পাকড়াও!
এসকল সীমাবদ্ধতা যদি কিছুটা অনুকূলে থাকে তাহলে চলতি পথে দু’দল ডংকারের কাছে হাত বদল হয়ে আপনি ইউরোপের সীমানায় পৌঁছে যাবেন ৪/৫ দিনে। কিন্তু ভাগ্য প্রধানত এতটা সুপ্রসন্ন হয় না! কদাচিৎ ডাংকির দল এত দ্রুত বর্ডারে পৌঁছায়!
দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে আপনি যতই ক্রমশ অগ্রসর হবেন, এসকল সীমাবদ্ধতা ততই প্রকটতর রুপে দেখা দেবে! সেই যে যাত্রা শুরুর আগে যেমন আটকে ছিলেন, তেমনি বনে বাদাড়ে আটকা পড়ে থাকবেন। পকেটের জমানো খাবার শেষ হয়ে যাবে, ক্ষুধায় গাছের পাতা লতা কাঁচা খাবেন আপনি। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেবে বৃষ্টি কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে তুষারপাত! ভিজবেন আর শুকাবেন, এভাবেই জেগে থাকবেন, হাঁটবেন অথবা ঘুমাবেন। খবরদার! চলতি পথে আহত হবেন না যেন! পথের চড়াই উতরাইতে কোনো ভাবেই যেন পা মচকে বা ভেঙ্গে না যায়। যদি এমন কিছু হয়, ধরে নিতে পারেন আপনার মৃত্যু নিশ্চিত ! বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা সমীকরণটা আপনার হাতে তুলে দেই, আপনি ফলাফল বের করে বলেন দেখি! –
মচকানো বা ভাঙ্গা পা নিয়ে আপনি এই দলের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারবেন না, এক পয়েন্ট থেকে অন্য পয়েন্টে পৌঁছানোর টাইমিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুরো দলটির সফলতার জন্য। আপনার জন্য পুরো ডাংকির দল ফেসে যেতে পারে। তাহলে ডংকারের করনীয় কি? আপনাকে এই বনে বাদাড়ে ফেলে রেখে গেলে তো আপনি আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে লোকালয়ে চলে যাবেন, তারা জেনে যাবে এই পথে ডাংকি যাচ্ছে এবং তারা পুলিশে কল করে দেবে। পুরো ডাংকির দলের জন্য আপনি এখন একটা হুমকি! তাহলে বলুন দেখি ফলাফল কি পেলেন হাতে? গায়ে কাঁটা দিচ্ছে? দেবারই কথা ! ডংকার পুরো দলটাকে একটা নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যেতে বলবে, আপনার পা যেহেতু ভাঙ্গা আপনাকে পেছনে ফেরত পাঠানোর একটা ব্যবস্থা করে আসছে- এই বলে আপনাকে নির্জনে নিয়ে আসবে কোথাও… ঘন্টা খানেক পরে সেই ডংকার পায়ে হাঁটা দলে এসে যোগ হবে, সাথে নেই সেই পা ভাঙ্গা ছেলেটা! শুনে থাকবেন হয়তো- ডাংকির পথে অনেকে হাড়-গোড় পড়ে থাকতে দেখেন!
এ যেন এক সীমাহীন পথচলা.. হাঁটছেন আর হাঁটছেন.. ক্ষুধা, ক্লান্তি, রোদ, বৃষ্টি, বরফ, ভেজা স্যাঁতসেঁতে জুতা, শরীরের দুর্গন্ধ সব ছাপিয়ে কেবল হাঁটা.. হঠাৎ খেয়াল করলেন একটা ফলের বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন কিংবা কোনো ফলের ক্ষেত পেরিয়ে যাচ্ছেন! আহ! তীব্র ক্ষুধায় এ যেন অমৃতের সন্ধান লাভের মত.. কিন্তু না, একটি ফলও খাওয়া হবে না আপনার! বলেন দেখি কেন? ঠিক ধরেছেন কাল সকালে বাগান/ক্ষেতের মালিক এসে টের পেয়ে যাবে কে বা কারা তার ফল খেয়ে সাবার করে গিয়েছে! তার মানে এই পথে ডাংকি গিয়েছে.. নগদ পুলিশে ফোন! না এবার নৈতিকতার খাতিরে নয়, তিনি ফোন করবেন তার ফল খাওয়ার প্রতিশোধ নিতে…
ভাগ্যিস খাল বিল সাঁতরাতে আমাদের ছেলেদের তেমন কোন সমস্যা হয় না, নদীমাতৃক দেশের সন্তান আমরা। তবে সাইপ্রাস পড়তে যাওয়া ঢাকার ছেলেপুলে যখন ডাংকিতে খাল পারাপারের সম্মুখীন হয়, তখন সেটা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণই বটে! ডংকারের এগিয়ে দেয়া বাতাসভর্তি পলিব্যাগ একমাত্র ভরসা তার জীবন এবং মৃত্যুর পার্থক্যের জন্য!
এরকম আরও অনেক অনেক অনেক সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলছে আপনার ডাংকি, আপনার স্বপ্ন, আপনার ইউরোপ যাত্রা… চলছে না শুধু পা টা আর! আর যেন চলছেই না… অবশেষে একদিন শেষ ধাপের ডংকার বলে উঠলেন- ‘এই সোজা পথে চলে যাও.. ওই যে ২/৩ মাইল দুরে হালকা আলোর আভা দেখতে পাচ্ছ সেটা আর্মি ক্যাম্প, ওটাই বর্ডার, গিয়ে সারেন্ডার কর’।এই বলে ডংকার আপনাদের ছেড়ে সেখান থেকে চলে যাবে। অবশেষে আপনি শেষপথটুকু মাড়িয়ে আর্মির কাছে ধরা দেবেন। তারা আপনাকে নিয়ে যাবে রিফিউজি ক্যাম্প নামক এক স্থানে, সেখানে মিলবে প্রয়োজনীয় খাবার, অসুধ এবং চিকিৎসা।
ততদিনে হয়ত কারো পায়ের আঙ্গুলে পচন ধরেছে, কারো প্যান্টের ঘষায় পা ছুলে ঘাঁ হয়ে গিয়েছে, কারো ময়লা মাখা শরীরে ঘর বেঁধেছে ফাঙ্গাল ইনফেকশন ! সুস্থ হবার পর দশ আঙ্গুলের ছাপ রেখে একখানি গোলাপি রংঙের রিফিউজি কার্ড ধরিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে আপনাকে, যাতে লেখা আছে আপনি এই মর্মে প্রত্যয়ন করছেন যে আগামী তিন মাসের মধ্যে টাকা পয়সা জমিয়ে আপনি এই দেশ ত্যাগ করে নিজ দেশে চলে যাবেন! যদিও কেউ তিন মাস পর নিজ দেশে আসে না, টাকার বিনিময়ে উকিল সাহেবেরা বাকি জীবন থাকার বন্দোবস্তটুকু করে দেন।
তবে বর্ডারে এই জামাই আদর এখন আর নেই, তারা ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে তুলে ফেলেছে বড় বড় দেয়াল। বর্ডারে পৌঁছালেও দিচ্ছে না ভেতরে যাবার কোনো সুযোগ! তাই সেই ডাংকি কালের বিবর্তনে এখন ‘ডাংকি ফ্লাইট’ নামে সাগর মহাসাগরে ট্রলারে কিংবা স্থলপথে নতুন নতুন পন্থা খুঁজে নিয়েছে।
আপনাদের ডাংকি ইউরোপ পৌঁছে গিয়েছে, চলে যাচ্ছেন? একটা প্রশ্ন যে রেখেছিলাম আপনাদের কাছে.. গল্প শোনানোর বিনিময়ে এই প্রশ্নের উত্তরটা আমি আপনাদের কাছে দাবি করতেই পারি। আমি আমার উত্তরটা লিখে দিচ্ছি-
‘আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গল্প বলার ধরনে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তারা প্রতিবারই মৌলিক গল্প নিয়ে এসেছে বলে আমাদের যে বানী শোনায়, সেই মৌলিক গল্পগুলো বরাবরই একই ছাঁচে তৈরি হয়, এক দেশে ছিল এক রাজা, এক রানী আর এক দৈত্য – এই হলো আমাদের কমার্শিয়াল ফিল্মের কাঠামো। এই কাঠামো থেকে বের হয়ে এসে একজন ভাল স্টোরি টেলার আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে বড়ই প্রয়োজন। একটা ফিল্ম যদি তার উপাদান-উপস্থাপন দিয়ে দর্শক টানতে না পারে, তাহলে হলে যান হলে যান, নিজ দেশের সিনেমা বাঁচান অনেকটা অচেনা মুমূর্ষু রোগীকে সাহায্যের আবেদনের মত শোনায়! যাতে বেশিরভাগ লোক সাঁয় দেয় না! এটাই বাস্তবতা।
অবৈধভাবে বিদেশ যাবার গল্প কমবেশি সবাই জানি আমরা এই যুগে! তবুও আমার এই তিন পর্বের লেখায় কিছু মানুষ কেন আগ্রহ ভরে অপেক্ষায় থেকেছে? একজন সাধারণ মানুষ/দর্শক হিসেবে আমি যদি এই জেনারেশনের হাজার খানেক মানুষকে আকৃষ্ট করে রাখতে পারি, তাহলে দিন রাত যারা ফিল্ম নিয়ে পড়ে থাকেন তারা কেন বড় পরিসরে একটা ভেলকি দেখাতে পারছেন না?
হিরানীর মুভির মতই বলতে হচ্ছে- ‘এক্সিলেন্স, এক্সিলেন্স কে পিছে ভাগো’.. দর্শকের পিছে ভাগার প্রয়োজন নেই। দর্শক তো শা*লা দরজা ভেঙ্গে হলে ভীড় করবে!
পাদটীকা:
[* লেখা বড় হয়ে যাবার কারনে আমি ডাংকি জার্নির অনেক ছোট ছোট ডিটেইলস স্কিপ করে গিয়েছি। তবে সামগ্রিক একটি ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি ]
[* যাদের মনে প্রশ্ন এসেছে, স্বাধীন চিন্তার কথা বলে আপনি এই পর্বে নিজেই ডিরেক্টর হিরানীর সিনেমার ডায়লগ ব্যবহার করেছেন কয়েকবার, কেন? উত্তর- হিরানী তথা উপমাদেশীয় সিনেমার প্রভাব আমার এক কথায় উবে যাবার কোনো বিষয় না, বরং একটা ভাল সিনেমার জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল মেসেজ কে প্যারালাল রেখে নিজের মনের কথা বলার চেষ্টা করেছি। যাতে সেই মেসেজগুলোর মধ্যে আমার আক্ষেপটুকু আপনাদের স্মৃতিপটে গেঁথে থাকে]
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন
বাংলাদেশী সিনেমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনায় শেষ করছি আমার লেখা “ডাংকি”
লেখক: তুষার শুভ্র