যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বই : দুর্গেশনন্দিনী
লেখক : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশনী : ঝিনুক প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্য : ১২০ ৳
পৃষ্ঠা : ৯৬
প্রকাশ : ২০১২
রিভিউদাতা : সাইক
১৫৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই অক্টোবর ভারতের অমরকোটে জন্মগ্রহণ করেন মোগল সাম্রাজ্যের পঞ্চম অধীশ্বর জালাল-উদ-দীন মুহম্মদ আকবর। তাঁর স্মরণে আমি এমন একটি বইয়ের রিভিউ করতে চলেছি, যে বইতে স্বল্প পরিসরে হলেও সম্রাট আকবরের কথা এবং তাঁর শাসনামলের প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে। সেই বইটি হল সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম উপন্যাস তথা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস “দুর্গেশনন্দিনী”।
১৮৬৫ সালের মার্চ মাসে এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তখন বঙ্কিমচন্দ্রের বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যে এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। এই উপন্যাসটি সেই সময় এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যে, বঙ্কিমচন্দ্রের জীবদ্দশাতেই ১৩ বার পুনর্মুদ্রিত করতে হয় এই বইটি। বাংলাভাষী মানুষদের গণ্ডি পেরিয়ে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পরবর্তীতে এই উপন্যাসটি ইংরেজি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
উপন্যাসটির কাহিনী শুরু হয় অন্ধকার রাত্রে মোগল রাজপুত কুমার জগৎ সিংহের চিত্রক নামের একটি ঘোড়ার পিঠে চড়ে গড় মান্দারনের পথে যাত্রার মাধ্যমে। কিন্তু পথিমধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রবল ঝড়। ফলে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচতে কুমারকে আশ্রয় নিতে হয় কাছের একটি শৈলেশ্বর মন্দিরে। সেখানে ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচতে লুকিয়ে ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী দুজন নারী, যারা সম্পর্কে ছিল মা-মেয়ে। মেয়েটি হল গড় মান্দারনের রাজা বিরেন্দ্র সিংহের কন্যা তিলোত্তমা। ঠিক এখান থেকে কুমার জগৎ সিংহের চোখ পড়ে যায় সেই অপূর্ব সুন্দরী রাজকন্যা তিলোত্তমার চোখে। চোখের এ চাওয়াতে দুজনের হৃদয়ের অন্তস্তলে জেগো ওঠে শিহরণ। এখান থেকে শুরু হয় ভবিষ্যতের অনাগত দুর্ঘটনার এক অশনিসংকেত।
আরও পড়ুনঃ ইডিপাস নাটকের বিষয়বস্তু | Oedipus Rex Bangla Summary PDF
এই উপন্যাসে যে শুধু প্রেম বা বিরহ স্থান পেয়েছে, তা নয়। আরও রয়েছে যুদ্ধ, নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড, প্রতিশোধ, হিংসা-দ্বেষ সহ অনেক কিছু। সেই সাথে রয়েছে মোগল সেনাপতি রাজা মানসিংহ, পাঠান নবাব কতলু খাঁ, পাঠান সেনাপতি ওসমান, পাঠান শাহজাদি আয়েষা, গড় মান্দারনের রাজা বিরেন্দ্র সিংহ, বিমলা, যশোহর রাজ প্রতাপাদিত্য, গজপতি বিদ্যা দিগগজ, শশী-শেখর সহ আরও অসংখ্য চরিত্র। এছাড়া, সম্রাট আকবরের কথাও উঠে এসেছে এই উপন্যাসে।
এই উপন্যাসের ভাষা, কাহিনীর বর্ণনা সবকিছু সেই সময় বিদগ্ধসমাজে বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। তারই ফসল হল বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে এই উপন্যাসটির স্বীকৃতি। অন্যদিকে, এই উপন্যাসটি নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। মনের মাধুরী মিশিয়ে ইতিহাসের বিকৃতি সাধনের জন্য এক শ্রেণির পাঠককে এই উপন্যাসকে ধিক্কার জানাতে দেখা যায়। তারমধ্যে আছেন, বাংলা ভাষায় স্বপ্নাতুর কবি নামে পরিচিত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী। তিনি এই উপন্যাসটির কড়া সমালোচনা করেন এবং এই উপন্যাসের জন্য বঙ্কিমচন্দ্রকে নিচমতি বলে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীতে এই উপন্যাসের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য তিনি “রায়-নন্দিনী” নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। এটাও বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
কিন্তু “দুর্গেশনন্দিনী” উপন্যাসে ইতিহাস বিকৃতি কতটুকু হয়েছে জানি না। আর ইতিহাস বিকৃতি হলেও এই উপন্যাসটি পড়ে শেষ করার পর, এই উপন্যাসটিকে ঘিরে এত কড়া সমালোচনা বা বিষোদগার করার মত কোন উপন্যাস বলে মনে হয়নি। একটি ঐতিহাসিক কাহিনী হিসেবেই পড়ে শেষ করেছি উপন্যাসটি।
এখন আপনারা এই উপন্যাসটি পড়ে বিবেচনা করতে পারেন। হয়তবা আমার সাথে একমত হতে পারেন, অথবা দ্বিমতও তৈরি হতে পারে আপনাদের।
আরও পড়ুনঃ কপালকুণ্ডলা বাংলা বই রিভিউ উপন্যাসের সারাংশ | Kapalkundala PDF