যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
পদ্মাবতীর কাহিনী
শেখ মালিক মহম্মদ জায়সীর হিন্দিকাব্য পদুমাবতের রচনাকাল ৯২৭ মতান্তরে ৯৪৭ হিজরি। পদ্মবর্তী অনূদিত কাব্য হলেও স্থান বিশেষে নিজস্ব চিন্তাভাবনাও প্রকাশ করেছেন সৈয়দ আলাওল। দু’একটি অভিনব বিষয় সংযোজনের মধ্যে আছে কাকনুছ পক্ষীর বর্ণনা। মূল বক্তব্যের পাশে দু-চার চরণে যুক্ত হয়েছে কবির মনের কথা— এই পক্ষীবর্ণন অংশে। ।
সমৃদ্ধ সিংহল দ্বীপের রাজা গন্ধর্ব সেন। তাঁর প্রিয়তমা মহিষী চম্পাবতী। পদ্মাবতী তাঁদের একমাত্র কন্যা। সে বত্রিশ লক্ষণযুক্তা সুন্দরী কুমারী। সুরম্য প্রাসাদে সখীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে রঙ্গরসে ও বিলাস-ব্যসনে পদ্মাবতীর দিন কাটে তার পিতৃগৃহে। রাজকুমারী পদ্মাবতী ও হীরামণি ‘নানা রঙ্গে শুক সঙ্গে পড়ে শাস্ত্রবেদ। ক্রমে পদ্মাবতী হয়ে উঠলেন সুন্দরী যুবতী। হীরামণির সাথে এ ব্যাপারে পদ্মাবতীর রসালাপ হত। রাজা গন্ধর্ব সেনের কাছে শুক ও পদ্মাবতীর সৌহার্দ্য একেবারেই পছন্দ হল না।
হীরামণি এক ‘মহান পণ্ডিত’ শুকপাখি। পদ্মাবতীর নিত্য সহচর সে। এদিকে সিংহল—’নৃপতির আজ্ঞা হল শুক মারিবারে। পদ্মাবতীর চেষ্টায় শুকের প্রাণ বাঁচল কিন্তু রাজার অন্তঃপুরে নিরাপত্তা না থাকায় শুক সুযোগ বুঝে পিঞ্জর থেকে পালিয়ে গেল দূর বনে। পদ্মাবতী শুকপাখির বিচ্ছেদে দুঃখ পেলেন। শুক ধরা পড়ল ব্যাধের জ্বালে। এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বণিকের কাছে ব্যাধ তাকে বেচে দিল ।
বণিক চিতোরের লোক। চিতোরের রাজা চিত্রসেনের মৃত্যুর পর রাজসিংহাসনে বসলেন পুত্র র-সেন। লোকমুখে শুকপাখির মাহাত্ম্যের কথা শুনে শুকের পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ র-সেন; তাকে কিনে নিলেন এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রায়। র-সেনের রানি নাগমতী শুককে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সংসারে কি আছে রূপ মোহর সমান? শুক পদ্মাবতীর রূপের প্রশংসা করায় রূপগর্বিনী রানি নাগমতী হলেন ক্ষিপ্ত। আশঙ্কিত নাগমতী ভাবলেন পদ্মাবতীর রূপের কথা শুনে দেশত্যাগী হবেন তার স্বামী র-সেন। এজন্য তিনি “ধাঞি দামিনীরে ডাকি কহিল সত্বর।/ তুরিতে মারহ গিয়া দুষ্ট শুকবর।।” বুদ্ধিমতী ধাত্রী হীরামণিকে না মেরে, তাকে লুকিয়ে রাখল। ধাত্রীর সাহায্যে শুককে ফিরে পেলেন র-সেন।
রাজা শুককে বললেন, ‘পদ্মাবতী বিবরণ কহ শুনি সার। শুকের বর্ণনায় ফুটে উঠল পদ্মাবতীর অতুল রূপৈশ্বর্য ও যৌবনপ্রাচুর্যের বিবরণ। রাজা পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা শুনে প্রেমবিশ্ব। ‘ভূমিতে পড়িল নৃপ চেতন রহিত’। রাজবৈদ্য জানালেন রাজা সুস্থ—’কোন রোগ নহে এই বিরহ বিকার। র-সেন রাজ্য ত্যাগ করে যোগী বেশে শুকের সঙ্গে যাত্রা করলেন সিংহলের দিকে। নাগমতী তখন পতিবিচ্ছেদে বিরহবিধুর। ষোলোশত রাজকুমার র-সেনের যাত্রাপথের সঙ্গী। সাত সমুদ্রের নানা বিপত্তি অতিক্রম করে উড়িষ্যা হয়ে রাজা পঞ্চমাসে হৈল গিয়া সিংহল নিকট। রাজার চিত্ত তখন আনন্দে ভরপুর।
মাঘমাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে পদ্মাবতী এলেন মন্দিরে পুজো দিতে। শুক অন্দরমহলে গিয়ে পদ্মাবতীর কাছে র-সেনের পরিচয় ও সিংহল আগমনের উদ্দেশ্য জানিয়ে গেল গোপনে। ঐ শ্রীপঞ্চমীর দিনই যোগীবেশী র-সেন পদ্মাবতীকে দেখেই মূর্ছিত—সুগন্ধি জ্বলে পদ্মাবতী সেবা করলেন র-সেনকে। চন্দন দিয়ে রাজার অঙ্গে লিখলেন—’তোমা দরশনে আইলু পূজা করি হল। নিজ অঙ্গের চন্দন লিখন পড়ে শত শিখায় জ্বলে উঠল রাজার প্রেমার্ত হৃদয়।
আরও পড়ুনঃ কবি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় PDF | Kobi Tarashankar Bandopadhyay
প্রেমের দহনে দগ্ধ র-সেন অগ্নিতে প্রাণ বিসর্জন দিতে যাওয়ার সময়, শিবপার্বতী তাঁকে নিরস্ত করে জানালেন রাজার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। র-সেন সঙ্গীদের সঙ্গে সিংহল-রাজের সাক্ষাৎপ্রার্থী—ইতিমধ্যে সিংহলরাজ গন্ধর্বসেন জানতে পারলেন যোগীর এই প্রেমাকাঙ্ক্ষার কথা। র-সেন দূতকে জানালেন ‘পদ্মাবতী দান, মাগি নৃপস্থান পাইলে যাইব দেশ। গন্ধর্ব সেন ক্ষিপ্ত, তিনি বললেন, ‘শীঘ্র মার দুষ্ট যোগী না কর। মন্ত্রীর পরামর্শে যুদ্ধ ত্যাগ করে সিংহলের দুর্গদ্বার রুদ্ধ করা হল। দুর্গের বাইরে থেকে র-সেন চিঠি লিখলেন পদ্মাবতীকে।
হীরামণি (শুক) সেই প্রেমপত্র নিয়ে এল পদ্মাবতীর কাছে। প্রেমবাসনায় ব্যাকুল পদ্মাবতী লিখলেন, ‘দুয়ার না পাও যবে, সিন্ধ দিয়া আইস তবে, ব্যর্থ না হইব হর বর? রাজা পত্র পেয়ে নিশ্চিন্ত মনে রাতে সিঁধ কেটে সঙ্গীসহ প্রবেশ করলেন সিংহলের দুর্গে। প্রভাতে ধরা পড়লেন প্রেমিকযুগল পদ্মাবতী ও র-সেন। গর্ব সেনের আদেশে যুদ্ধ করতে এল রাজসৈন্য। র-সেন যুদ্ধ না করে ধ্যানস্থ অবস্থায় বন্দি হলেন।
সিংহলরাজ্যের সামনে বন্দি র-সেন বললেন তিনি যোগীমাত্র, তাঁর গুরু পদ্মাবতী। গুরুকে পাওয়ার জন্যই তিনি এসেছেন সিংহলে। ক্রুদ্ধ রাজা তাঁকে শূলে চড়াবার নির্দেশ দেওয়াতে পদ্মাবতী কাতর হলেন। ঘাতকরা তাঁকে নিয়ে চলেছে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য। এ দৃশ্য পদ্মাবতীর কাছে অসহনীয়, তিনি হতজ্ঞান হলেন তাঁর প্রেমিক রাজা র-সেনের জন্য। মহাদেব ভাটের ছদ্মবেশে এসে সিংহলরাজকে যোগীর পরিচয় দিলেন। হীরামণিকে জিজ্ঞাসা করে সিংহলে রাজা গন্ধবসেনের বিশ্বাস হল যে যোগী প্রকৃতপক্ষে চিতোরের রাজা র-সেন। র-সেনের সঙ্গীসাথিরাও মুক্তি পেলেন বন্দিদশা থেকে। ক্ষমাপ্রার্থী হলেন গবসেন র-সেনের কাছে।
র-সেন অশ্বচালনা, চৌগান (এক ধরনের পোলো খেলা) খেলা দেখিয়ে পুরবাসীদের প্রশংসা অর্জন করলেন। রাজা র-সেন কাব্যতত্ত্ব, রসতত্ত্ব, রাগতত্ত্ব, পিঙ্গলশাস্ত্র ও অষ্টনায়িকার ভেদতত্ত্ব ব্যাখ্যা করলেন সর্বসমক্ষে। গন্ধর্ব সেন সুপাত্রের হাতে কন্যা সমর্পণের আয়োজন করলেন। সামাজিক আচার অনুষ্ঠান মেনে র-সেন ও পদ্মাবতীর বিবাহ হল রাজকীয় কায়দায়। স্বজন পরিজন তাঁদের গ্রহণ করলেন রঙ্গকৌতূকে। বাসরসজ্জায় রতিরসে সম্পন্ন হল তাদের গোপন মিলন। সিংহল ভেসে গেল আনন্দোৎসবে। র-সেন ভুলে গেলেন চিতোরের কথা। অপরিমিত আনন্দে নবদম্পতি উপভোগ করলেন ছটি ঋতু। হীরামণি শুক বিদায় নিলেন। সাধুনেত্রে র-সেন-পদ্মাবতী, রাজা রানি ও সহচরীরা বিদায় জানালেন তাঁকে। এটিই হল কাহিনির প্রথমাংশ।
আরও পড়ুনঃ মেঘনাদবধ কাব্য PDF | Meghnath Vadh Kabbo Summary in Bengali
চিতোরে ফেরার পথে র-সেনকে পরীক্ষা করবার জন্য সমুদ্রকন্যা পদ্মাবতীকে লুকিয়ে রাখলেন। বহু প্রচেষ্টার পর রাজা ফিরে পেলেন পদ্মাবতীকে। এর আগেই রাজার কাছে পৌঁছেছে প্রথম পত্নী নাগমতীর বিরহবেদনার কথা। দুই প-ীসহ র-সেনের দিন সুখেই কাটছিল কিন্তু রাঘবচেতন রাজপণ্ডিত হলেও রাজা তাঁকে বহিষ্কৃত করায় তিনি দিল্লিশ্বর আলাউদ্দিনকে জানালেন পদ্মাবতীর অপরূপ বৃত্তান্ত।
আলাউদ্দিন দূত পাঠালেন পদ্মাবতীকে বাদশাহর হারেমে আনার জন্য। র-সেন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন সে প্রস্তাব। র-সেন বন্দি হয়ে দিল্লিতে নীত হন। রাজার দুই সহচর গোরা ও বাদল কৌশলে তাকে মুক্ত করেন। দেবপাল রাজার অনুপস্থিতিতে চেষ্টা করেন পদ্মাবতীকে করতলগত করার। র-সেন তাঁর রাজ্য আক্রমণ করে তাঁকে হত্যা করেন। নিজ ফিরে এলেন রাজ্যে গুরুতর আহত হয়ে। সাতদিন পর রাজার মৃত্যু হল। সহমরণে গেলেন পদ্মাবতী ও প্রথমা পত্নী নাগমতী। আলাউদ্দিন সসৈন্যে পুনর্বার চিতোরে এসে চিতাভস্ম দেখলেন—পদ্মাবতীকে পাননি। চিতোর দখল করে আলাউদ্দিন বিমর্যহৃদয়ে ফিলে এলেন দিল্লিতে। এইখানেই গল্পের প্রায় শেষ। তবে কিছু অসাম্প্রদায়িক অভিনব ভাবনা ছিল লেখকের। তাই সুলতান আলাউদ্দিন মুসলমান হয়েও হিন্দু রাজা র-সেনের দুই অনাথ পুত্রের লালন পালনের ভার গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুনঃ মেঘদূত কালিদাস PDF | Meghdoot Kalidas Bengali English Sanskrit