যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ বিসর্জন
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রিভিউ করেছেনঃ Zinnatuzzohora Bithy
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যনাট্য হলো বিসর্জন। এই নাটকটি যে শুধু জীবপ্রেম বা মানবপ্রেমের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন তা নয়, বরং ধর্মীয় কুসংস্কার ও গোঁড়ামির ফলে মানবপ্রেমের মধ্যে যে সংকটময় মুহূর্ত সৃষ্টি হয় কবিগুরু সেটাকে কুযুক্তির সঙ্গে যুক্তিবাদিতার চিরন্তন দ্বন্দ্বের মাধ্যমে চিত্রায়িত করেছেন।
কাহিনী-সংক্ষেপ
ত্রিপুরার রাজ পরিবারকে কেন্দ্র করে এই নাটকের আখ্যান। সন্তানহীন রাজমহিষীর সন্তান আকাঙ্খা, দেবীর কাছে সন্তান প্রার্থনা, পুরোহিতের ষড়যন্ত্র উদ্ভাবন এবং তাতে রাজার কনিষ্ঠ ভ্রাতার যোগদান এসবই কাহিনীর দৃশ্যপট। শেষে অন্ধ ধর্মবিশ্বাস ও কুসংস্কারের রক্তপিপাসার প্রতি জয়সিংহের আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে নাটকের সমাপ্তি। নাটকটির কাহিনীর উপাদান রাজর্ষি উপন্যাসেরই। ভিখারিণী অপর্ণা নাটকের নতুন আবিষ্কার।
ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমানিক্য। তাঁর রানী গুণবতী। গুণবতীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব নেই। তবে সব থেকেও তাঁর যা নেই তা হলো সন্তান। রানী গুণবতীর তাই শোকের অন্ত নেই।
গুণবতী ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে সন্তান কামনায় পূজা করে। এই মন্দিরে পশু বলিদানের চিরাচরিত প্রথা। মন্দিরের পুরোহিত রঘুপতি দীর্ঘদিন ধরে এই প্রথার ধারক ও বাহক হয়ে আছে। রঘুপতি জানায় রানী গুণবতীর জঠরে নতুন প্রাণ জাগাতে হলে মায়ের পায়ে বলি দিতে হবে পশুর রক্ত। গুণবতীর আদেশে তার ব্যবস্থা করা হয়।
পশু বলিদানের এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ উচ্চারিত হয় অপর্ণা নাম্নী ওক ভিখারিণীর কণ্ঠ থেকে। তার প্রিয় ছাগশিশুকে বলি দেবার জন্য মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হলে সে রাজার কাছে এর বিরুদ্ধে নালিশ জানায়। রাজা বালিকার মানবিক আবেদন প্রত্যাখান করতে পারেন না। বন্ধ হয় অদ্ভুত বলি প্রথা।
রাজার এহেন আদেশে রঘুপতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে চক্রান্ত করে দেবীর মূর্তিকে ঘুরিয়ে দিয়ে জনগণের কাছে দেবীর ক্রোধের কথা তুলে ধরে। প্রজারা রাজার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়। অপরদিকে রাজভ্রাতা নক্ষত্র রায়কেও প্ররোচিত করা হয় রাজার বিরুদ্ধে যেতে।
রঘুপতি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে তার পোষ্যপুত্র জয়সিংহকে। জয়সিংহ এক দ্বিধান্বিত মানবসত্তা। একদিকে নিরীহ অপর্ণার ছাগশিশুর জন্য কাতরোক্তি ও প্রেম, অন্যদিকে পিতৃসম রঘুপতির প্রতি ভক্তি- দুইয়ের টানাপোড়েনে উভয় সংকটে পড়ে যায় জয়সিংহ। শেষমেষ উপসংহার টানার দায় তারই উপর বর্তায়।
আরও পড়ুনঃ সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূলভাব | সংক্ষিপ্ত আলোচনা | নোট | বিষয়বস্তু
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
এটি রবিঠাকুরের লেখা সেরা কয়েকটি নাটকের মধ্যে একটি। জানা যায় নাটকটির কাহিনি তাঁর লেখা উপন্যাস রাজর্ষির প্রথমাংশ থেকে নেয়া। খুব ক্ষুদ্র কলেবরে লেখা এই নাট্যকাব্যটির মধ্য দিয়ে লেখক অনেক বড় একটা বার্তা পাঠককে দেবার চেষ্টা করেছেন। বস্তুত এর মাধ্যমে চিরাচরিত ধর্মীয় আচারসর্বস্বতাকে ছাপিয়ে মানবতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
চরিত্রায়নে নাট্যকার বেশ মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন। রাজা গোবিন্দ্যমানিক্য চরিত্রটিকে লেখক একজন যথার্থ শাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন। রানী গুণবতী সংশয়াপন্ন এবং প্রভাবিত- নিজের দেহের প্রাণের সঞ্চার করতে গিয়ে হাজার হাজার প্রাণকে বলি দিতে সে কুণ্ঠিত হয়নি।
রঘুপতি চিরাচরিত প্রথার আজ্ঞাবহ দাস। প্রথা পালন করতে গিয়ে নিষ্ঠুর হতে বিবেকে বাধেনি তার। জয়সিংহ দ্বিধান্বিত। তার মন একেক সময় একেকজনের দর্শনের দিকে ধাবিত হয়েছে।
নাটকের সবচেয়ে স্থির ও স্বচ্ছ চরিত্র অপর্ণা নামের বালিকাটি। তার নিষ্কলঙ্ক, শুভ্র মনে কখনও কাদা লাগেনি। তার হাত ধরেই ঘোষিত হয়েছে মানবতার জয়গান। রঘুপতির মত একজন কঠিনহৃদয়ের মানুষও অবশেষে নতিস্বীকার করেছে তার কাছে।
বস্তুত গোমতীর জলে প্রতিমা বিসর্জনের চেয়েও বড় বিসর্জন এখানে হয়েছে রঘুপতির। এ বিসর্জন রঘুপতির দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রথার বিসর্জন, অহমিকার বিসর্জন- সর্বোপরি সন্তানসম জয়সিংহের বিসর্জন।
‘বিসর্জন’ নাট্যকটি কাব্যরীতিতে লেখা হলেও সংলাপীয় ধরণে লেখার কারণে বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয়নি আমার। তাই যারা পড়েননি তারা অচিরেই পড়ে ফেলতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ নবান্ন নাটকের বিষয়বস্তু চরিত্র প্রেক্ষাপট | বিজন ভট্টাচার্য নাটক PDF
আরও পড়ুনঃ গল্পগুচ্ছ Read Online | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Golpo Guccho PDF