যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
মিঠেকড়া মূলত শিশুকিশোরদের জন্যই সুকান্ত আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রচনা করেছেন ‘মিঠেকড়া’ ছড়া এবং ‘অভিযান’ নাটিকা। মিঠে কড়ায় বহুবর্ণের স্বাদ আছে। আছে বহুকিছুর স্পর্শ। আছে তাঁর কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের নিত্যদিনের অনুভূতি- অনুভবের ছাপ। যেমন ‘অতি কিশোরের ছড়া’য় সুকান্ত ছড়া বলতে পারেন। পাশের পড়া পড়েন না । পড়েন ফেলের পড়া। খাবারের দিকে রয়েছে লোভ এবং সখ । যেখানে ভিড় সেখানেই ছুটে যান তিনি। পড়তে বসে চেয়ে থাকেন পথের দিকে, পথিকের দিকে । এ সকল খেয়ালীপনার জন্য গুরুজনরা তাঁকে সরল সোজা চোখে দেখতেন না। ‘এক যে ছিল’ তেও সুকান্ত নিজের কথাই বলছেন। যেমন-
“এক যে ছিল আপন ভোলা কিশোর,
ইস্কুল তার ভাল লাগত না;
সহ্য হত না পড়াশুনার ঝামেলা
আমাদের চলতি লেখাপড়া সে শিখল না কোনোকালেই,
অথচ সে ছাড়িয়ে গেল সারাদেশের সবটুকু পাণ্ডিত্যকে।
কেমন করে? সে প্রশ্ন আমাকে ক’রো না।”
“পৃথিবীর দিকে তাকাও’, ‘মিঠেকড়া’র দীর্ঘতম একটি কবিতা । শ্রমিকদের খাটুনির ফলে অলস মালিক যে উদ্বৃত্ত মূল্য বা মুনাফা লাভ করে, পুঁজিবাদী সে সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন সুকান্ত । কার্ল মার্কসের সেই কঠিন তত্ত্বটিকে বড় সহজ করে সুকান্ত লিখেছেন, “মজুরেরা দ্রুত খেটেই চলেছে-খেটে খেটে হল হন্যে;/ধনদৌলত বাড়িয়ে তুলেছে মোটা প্রভুটির জন্যে।” মোল্লা-পুরুত, হাকিম মোড়ল, শিক্ষক-পণ্ডিত সবাই এখানে ধনিক-বণিকের কেনা গোলাম। এখানে, এ সমাজ ব্যবস্থায় বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে নিভৃতে! আল্লাহ্র নামে, ভগবানের নামে, পরকালের ভয় দেখিয়ে মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে এ সমাজ। ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে করে দেয় ভণ্ডুল সংগ্রামীদের মধ্যে নানা কৌশলে আনে বিভক্তি।
ধর্মে যে সকল বক্তব্য গরিবের পক্ষে সেগুলো এ সমাজের পালিত মোল্লাপুরুতরা বলে না, প্রচার করে না, ধামাচাপা দিয়ে রাখে। এরা কেবলই শোষকের স্বার্থে কথা বলে। বোকা বানিয়ে রাখতে চায় কোটি জনতাকে। কিন্তু তা কী সম্ভব? ‘কিছু সংখ্যক লোককে কিছুদিনের জন্য বোকা বানিয়ে রাখলেও বেশি সংখ্যক লোককে বেশি দিনের জন্য বোকা জানিয়ে রাখা যায় কি’?
আরও পড়ুনঃ সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবনী | ১ম পর্ব | সম্পূর্ণ জীবন কাহিনী | Sukanta
১৯১৭ সালের রাশিয়ার বিপ্লব ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এ বিপ্লব বিশ্ব ইতিহাসে নিয়ে এসেছে এক নতুন যুগ; পুঁজিবাদের পতন এবং এক নতুন উচ্চতর সমাজ ব্যবস্থা বা সমাজতন্ত্রের সৃষ্টির যুগ। উচ্চতর সমাজ ব্যবস্থা এজন্য যে, ইতিহাসের গতিপথে মানুষ প্রকৃতির ওপর তার ক্ষমতা বিপুলভাবে বিস্তার করেছে। কিন্তু মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজ-ব্যবস্থায় শ্রমজীবী জনগণ বসবাস করেন প্রচলিত নিপীড়নমূলক সামাজিক সম্পর্কের অধীনে। প্রকৃতির ওপর মানুষের বর্ধমান ক্ষমতার ফলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, এই সম্পর্কগুলি তা উপভোগ করা থেকে পুঁজিবাদী দেশের জনসমষ্টির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকেই বঞ্চিত রাখছে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এবং অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে প্রগতির সমস্ত অধিকার জনগণের এবং প্রকৃতিকে আয়ত্তে আনার প্রতিটি পদক্ষেপই তাদের কল্যাণ সাধন করছে।
(মার্কসীয় অর্থনীতির মূলসূত্র, এল. লিয়ন তিয়েভ, পৃঃ ২৪)।
‘যে দেশে মানুষ বড়’ বইতে পল্লীকবি জসীমউদ্দীন লিখেছেন, “মাবব মনের যতগুলি প্রকাশের পথ আছে সোভিয়েত গভর্নমেন্ট তার সবগুলি দরজাই শুধু খুলিয়া দেন নাই, জনগণ যাহাতে সেই পথে আগাইতে পারে রাষ্ট্র সে জন্যও কম সতর্ক নয়।”
আরও পড়ুনঃ সুকান্ত সমগ্র | Sukanta Samagra PDF | সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা সমগ্র
‘সিপাহী বিদ্রোহ’ মিঠেকড়ার শেষ দিককার অন্যতম কবিতা। পাক-ভারত-বাংলা উপহমাদেশে সিপাহী বিদ্রোহ একটি স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিপ্লবীদের অভিজ্ঞতার এক মহান অধ্যায়। সুকান্ত এ ঘটনা ভুলে থাকতে পারে না। তাই সিপাহী বিদ্রোহ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন,
“আগুন হয়ে সারাটা দেশ ফেটে পড়ল রাগে
ছেলে বুড়ো জেগে উঠলো নব্বই সন আগে।
একশো বছর গোলামীতে সবাই তখন ক্ষিপ্ত
বিদেশীদের রক্ত পেলে তবেই হবে তৃপ্ত!”
সুকান্ত তার বয়সকে বহুযুগ ডিঙিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছিলেন। প্রগতিশীল কবিদের প্রথম কাতারের ব্যক্তিটি তিনি। নিজের ভুল নিজেই ধরতে পারেন তিনি। শুধরাতে ও পারেন নিজকে । সে কথাই ফুটে উঠেছে তার ‘আজব লড়াই’ এর শেষ পঙক্তিসমূহে-
“এইবারে আমি ভাই হেরে গেছি খেলাতে,
ফিরে গেছি দাদাদের বকুনির ঠেলাতে;
পরের বারেতে ভাই শুনব না কারো মানা
দেবই দেবই আমি নিজের জীবনখানা।”
আরও পড়ুনঃ ছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থ PDF রিভিউ | সুকান্ত ভট্টাচার্য | Charpotro | Sukanta