যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ রিক্তের বেদন
লেখকঃ কাজী নজরুল ইসলাম
গল্পগ্রন্থের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের “গল্পগুচ্ছ” সবচেয়ে প্রিয়। আর ছোটগল্পে তো রবীন্দ্রনাথের সাথে তুলনা হয়না। স্কুল জীবনেই রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ শেষ করে ফেলেছি। কাজী নজরুল ইসলামের যে কয়েকটি গল্পগ্রন্থ রয়েছে (রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, ব্যথার দান) তাদের মধ্যে একটি হলো “রিক্তের বেদন”। জাতীয় কবির গল্পগ্রন্থের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গল্পগুলো সাধারণ হলেও বাচনভঙ্গি অসাধারণ। আজ আমরা রিক্তের বেদন গল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করবো। তবে “শিউলিমালা” গল্পগ্রন্থটিও আমার খুব প্রিয়। সেটা নিয়ে না হয় অন্যদিন রিভিউ করি।
গ্রন্থটিতে মোট ৮টি ছোট গল্প রয়েছে। সেগুলো হলো, রিক্তের বেদন, বাউন্ডেলের আত্ম-কাহিনী (প্রথম প্রকাশিত রচনা), মেহের নেগার, সাঁঝের তারা, রাক্ষুসী, সালেক, স্বামী-হারা, এবং দুরন্ত পথিক। ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার ওরিয়েন্টাল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় এই গল্পগ্রন্থ।
রিক্তের বেদন গল্পের বিষয়বস্তু
পুরো বইটি এবং ছোটগল্পগুলোর নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে রিক্তের বেদন গল্পের বিষয়বস্তু হবে দুঃখ, শোক অথবা বেদনার হাহাকার। গল্পগুলো নিয়ে হালকা একটু বর্ণনা দিচ্ছি….
আরও পড়ুনঃ পরিণীতা উপন্যাস রিভিউ PDF Download | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
১) বাউন্ডেলের আত্মকাহিনীঃ
সবাই জানি নজরুলের প্রথম রচনা এটি। এই গল্প দিয়েই নজরুল সাহিত্য জীবনে প্রবেশ করে। করাচি সেনানিবাসে সৈনিক থাকাকালীন তিনি এটি রচনা করেন। ১৯১৯ সালের মে মাসে সওগাত পত্রিকায় এই লেখা প্রকাশিত হয়। সেখানে বসে আরও কিছু গল্প লিখেছিলেন। সেগুলো হলো হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে ইত্যাদি।
বাউন্ডুলের আত্মকাহিনীতে বাঙালি পল্টনের এক বখাটে যুবকের কথা বলা হয়েছে। পুরো বিরহ মাখা একটি গল্প। এক অভাগার জীবন কাহিনীকে কবি অপূর্ব শব্দ-খেলার জাদুতে বর্ণনা করেছেন। বখাাটে যুবকটি তার প্রয়াত বালিকা বধূর দরজার-ফাঁকে লুকিয়ে দেখা দৃষ্টি-বিনিময়কে বর্ণনা করেছেন এইভাবে-
“সে যে করুণা জাগায় সকরুণ নয়ানে,
কেন, কি বলিতে চায়, না বলিয়া যায় সে”।
উৎফুল্ল এক কিশোর কি করে তার জীবনের উৎফুল্লতা হারিয়ে বখাটের দলে নাম লেখায়, কেনই বা তার জীবন দুঃখের স্রোতে ভেসে গেলো সেসবের শব্দময় বর্ণনা করেছেন নজরুল। জাতীয় কবির প্রথম রচনা এমন ছিলো! ভাবতেই অবাক লাগে!
২) স্বামীহারাঃ
পরিবার হারানো এক নারীর দুঃখের বিদগ্ধ বর্ণনা। গল্পটি পড়ে অনেকেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেনা। এতোটা বেদনাদায়ক করুন কাহিনী, অসহায় আর্তনাদ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিদায়-গীত বেজে চলেছে তার হৃদয়ে। সব হারাবার পর থেকেই… স্বামীহীনার হৃদয়ের সে কি হাহাকার!
“দিবস যদি সাঙ্গ হ’ল, না যদি গাহে পাখি,
ক্লান্ত বায়ু না যদি আর চলে, _
এবার তবে গভীর করে’ ফেলগো মোরে ঢাকি
অতি নিবিড় ঘন তিমির তলে”!
আরও পড়ুনঃ পুতুল নাচের ইতিকথা রিভিউ PDF | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস সমালোচনা
৩) মে-হের -নে-গারঃ
বুক ফাটা কষ্টের আরেকটি গল্প মেহের নেগার। যুবক ইউসুফের স্বপ্নচারিণীকে পেতে কত বাঁধা। শেষ পর্যন্ত পারে তারা মিলিত হতে? আদৌ কি হবে তাদের মিলন? প্রশ্ন থেকেই যায়… এটা নিয়ে সিনামাও আছে। অনেকে হয়তো দেখেছেন।
“ফারাকেঁ জাঁনা মে হামনে সাকী লোহু পিয়া হেয় শরাব করকে
তপে আলম নে জিগর কো ভূনা উয়ো হামনে খায়া কবাব করকে!”
৪) রিক্তের বেদনঃ
প্রথমে যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা না থাকলেও বন্ধুর চাপাচাপিতে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হচ্ছে কিশোর। মায়ের স্নেহকে শক্তিতে রূপান্তর করে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছে সে। কিন্তু ফেলে আসা শাহিদা? আর কি হবে দেখা? জীবন দেয়ার আগ মুহূর্তে মনে পড়বেনা তাকে? প্রিয়মুখখানা ভেসে উঠলে কি করবে সে?
“ওগো কাঙাল, আমায় কাঙাল করেছ
আরো কি তোমার চাই?
ওগো ভিখারী, আমার ভিখারী,_
পলকে সকল সঁপিছে চরণে আর তো কিছুই নাই!
আরো কি তোমার চাই? “
আরও পড়ুনঃ আমার জীবন চার্লি চ্যাপলিন জীবনী PDF | Charlie Chaplin Bangla
৫) সালেকঃ
আজ বাদশা, কাল ফকির। এরকম বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন সালেক গল্পে। হঠাৎ এক দরবেশের আগমনে দিগ্বিদিক ছুটে চলে মানুষ। তাঁর সান্নিধ্য পেতে শহরের কাজীও ধরণা দেয়। কাজীকে দরবেশ এমন কিছু করতে বলে যা তার সকল ভৈবব, প্রাচূর্য্যকে ধূলায় মিশিয়ে দেয়। তারপর?
৬) দুরন্ত পথিকঃ
একসময় পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এখন আছে কি না বলতে পারছিনা। সকল বাঁধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দেয় এই গল্প।
“দেশ দেশ নন্দিত করি’ মন্দ্রিত তব ভেরী,
আসিল যক বীরবৃন্দ আসন কব ঘেরি!”
৭) সাঁঝের তারাঃ
হঠাৎ অচেনা এক পথিকের সাথে দেখা সাঁঝের তারার! কিন্তু পথিকের সাথে নিচে নেমে আসতে কোনোভাবেই রাজি নয় সেই তারা! একসময় পথিককে কাঁদিয়ে হাওয়া হয়ে যায় সাঁঝের তারা!
“বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে,
শূন্য ঘাটে একা আমি, পার করে’
নাও খেয়ার নেয়ে!”
আরও পড়ুনঃ এইসব দিনরাত্রি হুমায়ুন আহমেদ উপন্যাস রিভিউ | Eisob Dinratri Book PDF
৮) রাক্ষুসীঃ
অল্প কয়েকটি পৃষ্টায় যেন কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এক উপন্যাস। বেদনা বিধুর এক অসহায় আর্তনাদের সুর। গল্পের বর্ণনা এমনভাবে দেয়া হয়েছে মনে হবে সবকিছু পাঠকের সামনেই ঘটছে। সমাজের মতে এক রাক্ষুসী নারীর গল্পকথা এটি।
কবি নজরুলের এই ৮টি গল্প সত্যি অসাধারণ। সবচেয়ে বড় অসাধারণ বিষয়টি হলো তাঁর বর্ণনার ভঙ্গিমা। দুঃখের এতো সুন্দর বর্ণনা মনে হয় নজরুলই পারে। আর পারবেই বা না কেন? তাঁর নামটিই যে দুখু মিয়া। বইটি এখনো না পড়ে থাকলে দ্রুত পড়ে ফেলুন। আশা করছি নজরুল আপনাকে মুগ্ধ করবে। দুঃখের মত পরশ পাথরকে ছুঁয়ে দেখার অনুভুতি হবে। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ আরেক ফাল্গুন পিডিএফ জহির রায়হান উপন্যাস রিভিউ | PDF