যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও আলোচনাঃ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সােনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের “সােনার তরী” নামক কবিতার রচনাস্থান কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সময়কাল- ফাল্গুন ১২৯৮, ইংরেজি ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ ১৮৯২। কবিতাটির নামকরণ সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ‘সােনার তরী’ সােনায় তৈরি তরী অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। এটি ব্যঞ্জনাগর্ভ। জীবনের সাধনায় যে স্বর্ণসম্ভার, তাই তাে ফসল, সেই ফসল বহ করে যে তরী তা-ই সােনার তরী।
কবিতার এই নামকরণটি আক্ষরিক-অর্থ-অতিরিক্ত অন্যতর অর্থে সমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ। সংসার-তরণীতে কবি তাঁর সৃষ্টির সমস্ত সম্পদ তুলে দিলেও, সংসার কবিকে গ্রহণ করল না। মহাকালরূপী নেয়ে ইতিহাসরূপ সােনারতরী নিয়ে সােনার ধান রূপ জীবনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে তুলে নিলেও, স্রষ্টাকে গ্রহণ করে না।
ইতিহাসের পৃষ্ঠায় মানুষের শিল্প, তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সঞ্চিত থাকে। জগৎ স্রষ্টাকে চায় না, তার শিল্পকে সৃষ্টিকে চায়, এটাই চিরন্তন সত্য। মানবজীবনের এই চিরন্তন সত্যটি আলােচ্য কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে বলে কবি কবিতাটির নামকরণ করেছেন ‘সােনার তরী’। সােনার তরী মানব সংসারের তরী যাতে কবি বিশ্বমানবের উদ্দেশ্যে নিজের সৃষ্টি সম্ভারকে তুলে দিলেও “ঠাই নাই, ঠাই নাই—ছােট সে তরী”—তাই কবি স্বয়ং নির্জনতায় নির্বাসিতা। এ সব বিচারে কবিতার নামকরণ তাই সার্থক ও সুন্দর।
এ পর্বে কবি আত্মস্থ, তাঁর প্রতিভার পূর্ণ প্রকাশ—রবি-রশ্মির মধ্যাহ্নদীপ্তি বিচ্ছুরিত। প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে কবির দৃষ্টি কল্পলােকের আলােকচ্ছটা থেকে বাস্তব জগতের উদার আকাশ-বাতাসে স্থাপিত। এ সময় কবির সৌন্দর্যানুভূতি ও বিশ্বানুভূতি প্রবলভাবে প্রকাশিত। কবি-কল্পনায় কবিত্বে প্রকাশ-ভঙ্গির চমৎকারিত্বে, ভাষার ঐশ্বর্যে ও ছন্দের বৈচিত্র্যে কবিতাগুলির দীপ্যমান। সােনার তরী তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে যুক্ত হয়েছে, একটি তত্ত্ব যার ব্যাখ্যা নানা কবিতায় রূপে ভিন্ন, স্বরূপে এক।
আরও পড়ুনঃ মহেশ গল্প শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় PDF | রিভিউ Mahesh Story in Bengali
কবিতাটি রচনার সময় কবি জমিদারি দেখাশােনার কাজে কখনাে শিলাইদহ, সাজাদপুর, কালিগ্রাম, পতিসরে বাস করেছেন। বাংলার পল্লীপ্রকৃতি সমস্ত সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাঁর অনুভবে, রঙে, রূপে কল্পনায়, নিত্য নতুন হয়ে প্রতিভাত হচ্ছে। পল্লীর নরনারীর সুখ-দুঃখ, হাসিকান্নার সঙ্গে পরিচয় নিবিড় থেকে নিবিড়তর হচ্ছে। এই পরিচয় সূত্রেই ‘সােনার তরী’ কাব্য।‘সােনার তরী’ কবিতা এই অনুভবের সৃষ্টি। এখানেও প্রকৃতি ও মানুষ, কবির অন্তদৃষ্টিতে বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবলােকের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। একে বলা যেতে পারে বিশ্বানুভূতি—এটি সম্ভব কবির সৃষ্টিপ্রেরণা বা অন্তর্দেৰ্বতার অন্তঃপ্রেরণায়, সম্ভবত কবির এই অন্তর্দেৰ্বতাই সােনারতরী কবিতার ‘নেয়ে।
অন্তর্দেৰ্বতা কোনাে অলৌকিক শক্তিধর নন, কবির প্রকাশপ্রেরণা, যিনি কবির মনের মধ্যে বসে সমগ্র জগৎকে সাহিত্যে রূপদান করছেন। প্রকৃতি—সােনার তরী কবিতার উৎস, চলমান নদীস্রোত, যার মধ্যে কবি জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক উপলব্ধি করেছেন, তাকে এখানে দেখেছেন সাংকেতিকতায়, রহস্যময়, রূপকের ব্যবহারে ব্যঞ্জনাশ্রয়ী রূপে।
‘সােনার তরী’ কাব্যে কবি নদীমাতৃক বাংলাদেশের রূপ, পদ্মার প্রবহমানতা, বিচিত্র খণ্ড খণ্ড রূপকল্প ও চিত্রকল্পের ভিতর দিয়ে, কখনও সাঙ্কেতিক রহস্যময়তায়, কখনাে বর্ষা প্রকৃতির বিষাদ উজ্জ্বলতায় প্রকাশিত হয়েছে। সােনার তরী’ কবিতাটিও এরকমই এক ঘন বর্ষায় আবৃত নদীচরের নিসর্গচিত্র। কবির ভাষায় পল্লীপ্রকৃতির সঙ্গে তাঁর একটি মানসিক ঘরকন্নার সম্পর্ক, সেটি এ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ হৈমন্তী গল্পের বিষয়বস্তু | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Hoimonti Summary PDF
সংক্ষিপ্ত সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা :
ভরা নদী ক্ষুরধারা – বর্ষায় নদীজল ক্ষুরের মতাে ধারালাে অর্থাৎ খরস্রোতা বােঝানাে হয়েছে।
তরু ছায়া মসীমাখা (কালিমাখা) – আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় গাছের ছায়ায় ঘেরা গ্রাম অন্ধকারাচ্ছন্ন বলে মনে হচ্ছে।
বাঁকা জল করিছে খেলা – বাঁকা শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহার করা যায়। একটি অর্থে নদী বেঁকে বেষ্টন করে আছে, অপর ব্যঞ্জনগর্ভ অর্থ ‘কুটিল বা প্রতিকূল’।
কে আসে পারে – ‘কে’ এই শব্দটি ব্যবহার করে অনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বােঝান হয়েছে।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে – বর্ষা সমাগমে কাটা ফসল নিয়ে তরীর অপেক্ষায় যখন আছেন এমনি সময় দূর থেকে দেখে কোন চেনা চেনা নেয়েকে যেন দেখা যাচ্ছে – এমনি সাধারণ অর্থ হলেও উদ্ধৃতিটি ব্যঞ্জনা সমৃদ্ধ। যাকে দেখে মনে হয় চিনি উহারে’ সে যে কবির হৃদয়গত অন্তর্যামী। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যভাবনায় ব্যক্তি আমির অতিরিক্ত পৃথক এক অন্তঃপ্রেরণা বা অন্তৰ্শক্তি যাকে অনেকে অন্তর্দেৰ্বতা বা জীবনদেবতা বলেন তার কল্পনা করেছেন। সােনার তরী’ কবিতায় এরা আভাস, চিত্রা’য় তার পরিণতি। ইনিই কবির প্রেরণা, তাঁর কাব্যাধিষ্ঠাত্রী দেবী। কোন বিদেশে — এখানে বলতে কোনাে অজানা জগতে।
আরও পড়ুনঃ ছুটি গল্প PDF | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প | Chuti | বিষয়বস্তু | চরিত্র
শুধু তুমি নিয়ে যাও— সৃষ্টির যে শ্রেষ্ঠ সম্ভার, মহাকালের তরণীতে তুলে দেওয়ার মধ্যেই স্রষ্টার সার্থকতা। কিন্তু কালের মাঝি কোনােদিকে দৃকপাত না করে নিতান্ত নিরাসক্ত চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে স্রষ্টার একান্ত অনুরােধ সে জীবনের যা কিছু অর্জিত ফল তাকে যেন নিয়ে যায়।
এখন আমারে লহাে করুণা করে – একলা জনবেষ্টিত ছােটো খেতে বসে আছি। করুণা করে তােমার তরীতে তুলে নাও। এর আধ্যাত্মিক অর্থ হতে পারে, আমাকে সকল কর্মবন্দি থেকে মুক্ত করাে। অথবা আমার শিল্পের সঙ্গে আমারও অস্তিত্বকে যুক্ত করাে।
যাহা ছিল নিয়ে গেল সােনার তরী –আজীবন সতি সােনার ফসল, সংসার তরণীতে তুলে নিয়েছেন অর্থাৎ কবির সৃষ্টি সমাদৃত হওয়ায় তিনি আনন্দিত। কিন্তু সেখানে তাঁর স্থান না হওয়ায় — শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি – তিনি একাকিত্বের বেদনায় বিষন্ন।
নিচের পিডিএফটিতে সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা দেয়া আছে। আরও বিস্তারিত জানার জন্য অনুগ্রহ করে পিডিএফটি ফলো করুন। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ গল্পগুচ্ছ Read Online | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Golpo Guccho PDF
আরও পড়ুনঃ বিদ্রোহী কবিতা ব্যাখ্যা PDF | Bidrohi Kobita Bekkha Summary HSC