Skip to content
Home » মাতাল হাওয়া হুমায়ূন আহমেদ PDF| Matal Hawa Humayun Ahmed

মাতাল হাওয়া হুমায়ূন আহমেদ PDF| Matal Hawa Humayun Ahmed

মাতাল হাওয়া হুমায়ূন আহমেদ PDF রিভিউ

যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

বইঃ মাতাল হাওয়া 
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশকঃ অন্যপ্রকাশ
পৃষ্ঠাঃ ২৩২
মূল্যঃ ৫০০
রিভিউ করেছেনঃ Mohammad Yiasin Arafat

হুমায়ুন আহমেদ বরাবরের মতোই একজন তুমুল জনপ্রিয় লেখক। তার লেখা বহুসংখ্যক বইয়ের মধ্যে ‘বাদশাহ নামদার’ আমার পড়া বেস্ট একটা বই। তার কোনো কিছুতে অপূর্নতার আঁচ করা যায়না।

তাঁর লেখা আরেকটি জনপ্রিয় বই ‘মাতাল হাওয়া’ মাত্র পড়া শেষ করেছি। সাধারণত কোনো বইয়ের রিভিউ আমি কখনো লিখিনা। লিখার যোগ্যতা আছে বলেও মনে করিনা। তারপরেও এই বইটির সম্পর্কে কিছু লিখার চেষ্টা করব। বইটি অবশ্যই সুখপাঠ্য।

Download Now

মাতাল হাওয়া উপন্যাসটি মূলত ‘৬৯-কে উপজীব্য করে লিখা হলেও, এটি কোনো ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস নয়৷ এই ক্ষেত্রে ‘দেয়াল’ উপন্যাসটি সম্পুর্ণ তাঁর বিপরীত। এটি সম্পূর্ণ সত্য ইতিহাস অবলম্বনে রচিত তবে মতভেদ বিদ্যমান।

তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন মোনায়েম খান। তার বেশ কয়েকজন খাস লোকের মধ্যে হাবিব খান ছিলেন অন্যতম। যিনি ছিলেন একজন পাকিস্তান পন্থী সিনিয়র উকিল। গভর্নর এর নাম বেচে খেতো। মা এবং একমাত্র মেয়ে নাদিয়ার প্রতি ভালোবাসার কোনোরকম কমতি দেখা না গেলেও বিবেক এবং সচ্চরিত্রবান মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল ঘাটতি লক্ষণীয়। সোজা কথায়, ভালো মানুষের মুখোশ পরা একজন দাগি অপরাধী। তার অশালীন এবং অসামাজিক কার্যকলাপ তার চরিত্রকে কলুষিত করেছে।

বিচক্ষণ এবং বিজ্ঞানমনস্ক প্রফেসর বিদ্যুত কান্তি দে- এর ভূমিকাও কিছু ক্ষেত্রে সমাজের নানা কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী চীনের মহাপ্রাচীর এর মতো দন্ডয়মান থাকতে দেখা যায়।

Download Now

দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত সহায়-সম্বলহীন এক যুবক ফরিদ। একাডেমিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও বই পড়ার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। মালিকের সামান্য আশ্রয়ে কৃতজ্ঞতা স্বরুপ সব অন্যায়কে মাথা পেতে নেয়। অন্যের কল্যাণে নিজেকে সঁপে দেয়াতে তার আনন্দ। সমাজের বড় রাঘববোয়ালদের রোষানলে পড়ে তার জেলে পর্যন্ত পচতে হয়।

সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হাসান রাজা চৌধুরী। মূলত তাঁর নিকটাত্মীয় একজনকে খুন করার অপরাধ এবং তার পিতা কর্তৃক খুনের সুরাহার বিষয় নিয়ে উপন্যাসটির উপাখ্যান শুরু হয়। সে তিল পরিমাণ অন্যায় করেনি বলে তার বিশ্বাস। তার চরিত্রে সমাজের বিবেকবান মানুষের ছায়া স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়৷ তার কারণে অন্য একজন নিষ্পাপ ব্যক্তির জীবন শেষ হওয়ার উপক্রম হলে নিজের বিবেকের কাছে নিজে দংশিত হয় এবং অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে। ফলে তার ক্বলবের কাছে তার নিজের পরাজয় ঘটে।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের মধ্যে নাদিয়া (তোজল্লী/দিয়া) অন্যতম। উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমালেও ‘৬৯ এর দাঙ্গাহাঙ্গামায় পড়াশোনা পুরোপুরি শেষ করতে অপারগ হয়। নিজের সব ইচ্ছে মাটিচাপা দিয়ে তার কাছে বাবার প্রতি শ্রদ্ধার জায়গাটা প্রাধান্য পায়। সবকিছু জলাঞ্জলি দিলেও শেষ পর্যন্ত নিজের শেষ রক্ষাটা হয়নি।

তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নৈরাজ্যতা, ছাত্র ট্যাগ লাগিয়ে দুনিয়ার সব অশালীন কাজকর্ম এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব প্রতিপত্তিতে উত্তাল ক্যাম্পাস সহ, সারাদেশের বিশৃঙ্খলতার চিত্র সুস্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

Download Now

উপন্যাসটি কয়েক ঢংয়ে রচিত যেখানে স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের ‘৬৮-‘৬৯ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রথম লেখালেখির হাতছানি, বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে যোগদান, তার নানা অভিজ্ঞতা ও হরেকরকম স্মৃতিকথার সমাহার ঘটেছে এবং তৎকালীন সাম্প্রতিক নানান বিষয়বস্তু উঠে এসেছে।

তার পাশাপাশি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বজ্র কন্ঠ হঠাৎ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া, বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তাঁদের ভূমিকা কিঞ্চিৎ পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।

‘ভাদু’ চরিত্রটি প্রতিটি কালের সুযোগ সন্ধানীর প্রতিনিধি। বর্তমানেও সমাজে, রাষ্ট্রে অনেক ‘ভাদু’ দৃষ্টির অগোচরে আড়ালে লুকিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, প্রমাদ গুনতে থাকে কখন সে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে, আর কখন পুরো দেশকে গোগ্রাসে এক নিমিষে গিলে ফেলা যায়!

শুরুটা এরকম ‘হাজেরা বিবি সকাল থেকেই থেমে থেমে ডাকছেন, হাবু কইরে! ও হাবু! হাবু’ হাবিব খান ওরফে হাবু, পাগলের ভান ধরে থাকা এক বৃদ্ধা হাজেরা বিবির সন্তান। পাগলরা সত্য কথা নির্দ্ধিধায় বলে, তাদের সাহস আকাশসম।

Download Now

হাবিবখান একজন ল’য়ার। নিজের মামাকে খুন করার অপরাধে হাসন রাজা চৌধুরীর মামলা তিনি দেখাশোনা করেন। হাবিব খান মামলা শেষ করার পর এক পর্যায়ে তার সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। মেয়ে খুনিকে বিয়ে করবেনা বলে প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে তার প্রতি মনের সুষুপ্তি ভেঙ্গে হৃদয়ের ঝলকানি দেখা যায় এবং পরিণয় না হওয়ার একটা আফসোস তার তার মধ্যে প্রতীয়মান হয়। শেষেরদিকে তার একটা লাইন দেখলে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। ‘তোমার মতো একজন সাহসী ভালো মানুষের সঙ্গে আমি বাস করতে পারবনা এই দুঃখ আমি আজীবন পুষে রাখব’

লেখক এত সুন্দর করে বিভিন্ন চরিত্র ও ঘটনার পর ঘটনার সমাহার ঘটিয়েছেন যে, তা সত্যিই পাঠককে মুগ্ধ করতে বাধ্য। বাকিটা পাঠকরা নিজেরা পাঠোদ্ধার করবেন। শুভ কামনা।


হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের এক কলম জাদুকর। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। হুমায়ুন আহমেদের পদচারণা সর্বত্র ব্যাপীত। পরশ পাথরের মতো তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা পাওয়া গেছে। তিনি বাংলাদেশের ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকর ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। এছাড়াও নাটক চলচ্চিত্র হিসেবে সমাদৃত। শরৎচন্দ্রের পরে বাংলা কথাসাহিত্যিে এতো জনপ্রিয়তা কারো দেখা যায়নি।হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্যিক হিসেবে গড়ে ওঠে পারিবারিক বলয় থেকে। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয।

১৯৪৮ সালে ১৩ই নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) জন্মগ্রহন করেন হুমায়ূন আহমেদ।তিনি পেশায় ছিলেন অধ্যাপক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে)। তিনি ১৯৭৩ সালে পারিবারিক ভাবে গুলকেনির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৩২ বছর সংসার করার পর ২০০৫ সালে তাদের ডিভোর্স হয়। তাদের ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে (নুহাশ হুমায়ূন) আছে। ২০০৫ সালে শাওনের সাথে দ্বিতীয় বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। হুমায়ুন আহমেদের বেশির ভাগ সময় কেটেছে গাজীপুরের গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত বাগান বাড়ির নূহাশ পল্লীতে।
 
হুমায়ুন আহমেদ তিন শতাধিকেরও বেশি লিখা লিখে গেছেন, গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও গান। সাহিত্যে তার অবদান অপরিসীম। তার প্রথম রচনা নন্দিত নরকে, যা প্রথম দিকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়াও শঙ্খনীল কারাগার, রজনী, গৌরীপুর জাংশন, আমার আছে জল, অচিন পুর ইত্যাদি। হুমায়ুন আহমেদ অধ্যাপনা ছেড়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। তার প্রথম চলচ্চিত্র আগুনে পরশমণি, যা দেখতে মানুষের উপচে পড়া ভীর জমে। ওভাবে সর্বক্ষেত্রে নিজের পদচারণ রেখে গেছেন। এই বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ১৯শে জুলাই ২০১২ সালে দেশের বাহিরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি অনেক দিন ধরে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় উনাকে সমাহিত করা হয়।
 

আরও পড়ুনঃ মেঘ বলেছে যাব যাব হুমায়ূন আহমেদ PDF| Megh Boleche Jabo Jabo

Tags:
x
error: Content is protected !!