Skip to content
Home » ডাংকি (DUNKI) ও অবৈধ অভিবাসন যাত্রা | প্রথম পর্ব | 2023 Movie

ডাংকি (DUNKI) ও অবৈধ অভিবাসন যাত্রা | প্রথম পর্ব | 2023 Movie

Dunki movie story poster download ডাংকি 2023 trailer অবৈধ পথে ইউরোপ

যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

ডাংকি (DUNKI) | শেষ পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | প্রথম পর্ব

ডাংকি শব্দটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২০০৪ সালে। না, বাংলাদেশে না, শব্দটি বাংলাদেশে প্রচলিত নয়। শব্দটি আমি শুনেছি প্রবাসীদের মুখে, স্পেসিফিক্যালি ইউরোপীয় প্রবাসীদের কাছ থেকে। আমেরিকা, কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসীরা এই শব্দ জানে বলে আমার মনে হয় না, যদিও আমি সেসব মহাদেশে যাইনি। তবে ইউরোপে থাকার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় আজকে ‘ডাংকি’ নিয়ে কিছু কথা বলব।

প্রসঙ্গত, শাহরুখ-হিরানী জুটির প্রজেক্ট DUNKI ! তাদের ঘোষনার যে ছোট্ট ক্লিপটি দেখে ফ্যানরা শিহরণ অনুভব করছেন, আমিও আপনাদের দলেরই একজন। তবে সেই ছোট্ট ক্লিপের শেষে ধু ধু প্রান্তরের বুক চিড়ে এক ছোট্ট কাফেলার মাথার উপর দিয়ে বিমান চলে যেতে যেতে পদতলে যখন DUNKI লেখাটি ভেসে উঠল, আমার শরীরে গুজবাম্পস হলো! আমি নস্টালজিক হয়ে ফিরে গেলাম ১৮ বছর আগে!

Download Now

কী এই ডাংকি? এটা জানলে হবে না শুধু, অনুভব করতে হবে। এজন্য আপনার সামান্য ভুগোল জানা আবশ্যক! বাংলাদেশ থেকে ভারত, ভারত থেকে পাকিস্তান, পাকিস্থান থেকে আফগানিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ইরান, ইরান থেকে তুরস্ক… বাংলাদেশ থেকে ক্রমাগত পশ্চিমে যদি যেতে থাকেন তাহলে ক্রমান্বয়ে এই দেশগুলো পড়বে। যদি কল্পনায় এই সাড়ে পাঁচ হাজার মাইলের বিশালতা আপনি অনুভব করতে না পারেন, ঝটপট গুগল ম্যাপটা একবার দেখে আসুন। অবশ্যই খেয়াল করে আসবেন, তুরস্কের ঠিক পরেই ইউরোপ (গ্রীসের সীমানা শুরু) ! আহ! ‘আমাদের’ স্বপ্নের ইউরোপ! কত সাধের! কত আকাঙ্ক্ষার !

২০০৪ সালে অলিম্পিক আয়োজন হয়েছিল অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রীসেই! সে অলিম্পিকের মোটোও (motto) ছিল – ওয়েলকাম হোম! অলিম্পিকের প্রতি আমার কোনো ফ্যাসিনেশন ছিল না, আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি বিমানে গ্রীস পাড়ি জমিয়েছিলাম অলিম্পিক শুরু হবার কয়েকমাস আগেই। (এয়ারলাইনসের নামটা উল্লেখ করার একটি বিশেষ কারন আছে, মনে রাখবেন)

প্রবাসে মূল শহরগুলোতে বাংলাদেশীদের একটি প্রাইম জোন থাকে। সেখানেই ৮০% বাংলাদেশী দোকান পাট রেস্তোরাঁ থাকে এবং গন-জমায়েত হয়। রাজধানী এথেন্সের এমন একটি জায়গা হলো – ওমোনিয়া (Omonia) এবং প্রথমবারের মত দেশী ভাইদের মিলনমেলা দেখতে একদিন সেখানে যাই।সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট Bengal Garden -এ বসে দেশীয় খাবার খাচ্ছিলাম, বেশ জনাকীর্ণ রেস্তোরাঁ। কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি নতুন এসেছি নাকি? আমি খেতে খেতে হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে জবাব দিচ্ছিলাম।তারা আমার পোষাক এবং অপরিচিত মুখ দেখে সহজেই আন্দাজ করতে পেরেছিল আমি নিউকামার। এই প্রশ্নকারীদের একজনকেই পাশের টেবিল থেকে বলতে শুনলাম- “সরকার লিগাল দিবো, পত্যেকদিন ‘ডাংকি’ আইতাছে, এই জন্য এত বাংগালী” ! এবং সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি সর্বপ্রথম পরিচিত হই নতুন শব্দ ‘ডাংকি’র সাথে !

Download Now

শুনতে বেশ মজার এই শব্দটির আড়ালে বাস্তবতা কতটা নির্মম-নিষ্ঠুর জানেন? ক্ষুধায় দিনের পর দিন মাইলের পর মাইল হাঁটা! এক পোষাকে মাসের পর মাস থেকে গায়ে চর্মরোগে ঘা হয়ে ইনফেকশন হয়ে যাওয়া! বরফের রাস্তায় সপ্তাহের পর সপ্তাহ হেটে ফ্রস্টবাইটে পায়ের আঙ্গুল পচে যাওয়া! ক্লান্ত/অসুস্থ হয়ে পড়া একজন জীবন্ত মানুষকে পাহাড় থেকে ফেলে হত্যা করা! ফলের বাগানে লুকিয়ে রাত কাটানো অথচ একটিও ফল খেতে না পারা! পকেটের শুকনো মুড়ি আর বিস্কুট অনেক আগেই শেষ, কিছু অখাদ্য পাতা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া! সাঁতার জান না? বাতাস ভর্তি পলিথিন ফুলিয়ে তা আঁকড়ে ধরে নদী/খাল পার হওয়া, এতকিছুর পরেও নির্বিকার বিধি নিস্তার দেয় না! সমকামী কারো কাছে ধর্ষিত হওয়া এখনও বাকি! মা-বাবার আদরের দুলাল তখনো তা জানেই না! একটা ডাংকিতে আপনাকে এর সবকিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হবে, কিন্তু মর্মান্তিক ব্যাপার হলো ডাংকির আগে এসবের কিছুই আপনি ঘুনাক্ষরেও টের পাবেন না !

এতক্ষণে সবাই আন্দাজ করে ফেলেছেন কী প্রসঙ্গে কথা বলছি আমি! হ্যাঁ, অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশী যারা বিভিন্ন দেশের গেমে (আমাদের দেশে এই অবৈধ অভিবাসন যাত্রা ‘গেম’ হিসেবে প্রচলিত) যাত্রা করেন, তাদের এই পুরো গেম যাত্রায় যে কটি আন্তর্জাতিক বর্ডার হেঁটে পাড়ি দিতে হয়, সেই বর্ডার পাড়ি দেয়াই হলো ডাংকি !

লেখার শুরুতে আপনাদের যে ভূগোল পড়িয়েছি, বাংলাদেশ থেকে অনেক আগেই এই সাড়ে পাঁচ হাজার মাইলের পথে অসংখ্য বেকার যুবক বহু আগে পাড়ি জমিয়ে ইউরোপ যাত্রা শুরু করেছিল। তাদের অনেকেই বর্তমান ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী প্রবাসীদের প্রথম সারির। তাদের পুরো যাত্রাটি মোটামুটি এরকম ছিল- তারা বাংলাদেশ পাড়ি দিয়ে প্রথমে কিছুদিন ভারতে অবস্থান করে, তারপর ভারত থেকে পাকিস্তান চলে যায়। সেখানে টুকটাক কাজকর্ম করে টাকা জমিয়ে আফগানিস্তানকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি ইরানে চলে যায়। উল্লেখ্য পাকিস্থানে অবস্থানকালে তারা সেলাই/দর্জি কাজ শিখে, এবং সেই কাজ করেই টাকা জমিয়ে ইরানে চলে আসে কারন ইরানে ছোট ছোট গার্মেন্টস টাইপ ফ্যাক্টরিটতে দর্জি কাজ পাওয়া যেত। এরপর ইরানে কয়েকবছর কাজ করে টাকা কামিয়ে সুযোগমতো বর্ডার পাড়ি দিয়ে তারা তুরস্কে চলে যেত। এরপরই চলতো ডাংকিতে চড়ে বসা!

এখানে একটা ব্যাপার লক্ষনীয়- ইন্ডিয়া/পাকিস্থান/ইরান/তুরস্কের বর্ডার পাড়ি দেয়াকে ‘ডাংকি’ হিসেবে অভিহিত করা হতো না, কেউ করে না সাধারণত। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তুর্কি-গ্রীস বর্ডার (এশিয়া-ইউরোপ বর্ডার) পাড়ি দেয়াকেই ‘ডাংকি’ ডাকা হয়! বাংলাদেশীদের ভাষায় ‘ডাংকি মারা’!

Download Now

তাদের এই দীর্ঘ যাত্রার গল্প অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? আমারও মনে হয়েছিল প্রথমবার যখন সরাসরি এমন একজনের মুখেই ইতিহাসটা শুনি, যিনি নিজে ঢাকা শহরে প্রথম এসেছিলেন এথেন্স এয়ারপোর্ট থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে! বাংলাদেশ ছাড়ার প্রায় ১৩/১৪ বছর পর!

কালের বিবর্তনে এই দীর্ঘ পথ ছোট হয়েছে, বিগত এক দশকের কিছু বেশি সময় ধরে সরাসরি তুরস্কের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশীরা সেখানে চলে যায়। সেখান থেকে সোজা ডাংকিতে চড়ে বসে! সেই ১৮ বছর আগে আমি সেখানে দেখেছি সাইপ্রাসে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে যাওয়া বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা ডাংকি মেরে গ্রীস চলে এসেছিল। যেহেতু দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া থেকে গ্রীসই প্রথম দেশ তাই সবাই এই ঐতিহাসিক দেশটি মাড়িয়েই পরবর্তীতে ইতালি, স্পেন, সুইডেন, ফ্রান্স সহ নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এবার আসুন আমরা তুরস্ক থেকে একটা কাল্পনিক ডাংকিতে চড়ে বসি! –

বাড়ী থেকে মায়ের/বোনের/স্ত্রীর সযত্নে গুছিয়ে দেয়া ব্যাগটি ফেলে রেখে একটা প্যান্ট, একজোড়া জুতা, একটা শীতের পোষাক/জ্যাকেট এবং পকেট গুজে নেয়ার মত শুকনো খাবার -এর বেশী একটা তোয়ালেও আপনাকে নিতে দেয়া হবে না! বুনো জংলি জানোয়ার টাইপ ৩/৪ জনের একটি দল এসে আপনাকে এভাবে রেডি হতে বলবে (liam Neeson এর Taken মুভি সিরিজে এরকম হিংস্র হিউম্যান ট্রাফিকার পোর্ট্রে করা হয়েছে)। তাদের প্রথম কথাই হবে- শুধু শুনতে এবং করতে হবে, কোন প্রশ্ন নয়।পালটা প্রশ্ন করলেই একজনকে এমন মারা হবে, সে মার দেখে বাকি সবাই পুরো ডাংকিতে বোবা হয়ে থাকবে!

Download Now

ওহ! ভাল কথা- বাংলাদেশের দালাল আপনার দেয়া টাকার ভাগ তুরস্কের এই দালাল চক্রকে ঠিক মত পরিশোধ করেছে তো? না করলে আপনাকে কিন্তু দেশ থেকে আবার টাকা এনে এই বুনো জানোয়ারের দলকে দিতে হবে! দেশে আর টাকার জোগান নেই অথবা আপনি টাকা দিয়েছেন অমুকের কাছে এসব কথা শোনার সময় নাই কারোর! টাকা লাগবেই ! টাকা নেই, আপনি ডাংকিতে যাবেন না, তা-ও হবে না! সবাইকে একটা রুমে নিয়ে আসা হবে এবং টাকা দিতে অপারগ দলের একজনকে সবার সামনে দু’জন জানোয়ার শক্ত করে ধরবে আর তৃতীয় এক জানোয়ার এসে একটা গরম ইস্ত্রি পিঠে চেপে ধরবে! এই দৃশ্য দেখার পর কাউকেই আর টাকার কথা দ্বিতীয়বার বলার প্রয়োজন পড়ে না, পিঠে পোড়া ঘাঁয়ের ছেলেটিও টাকা দেয়! তার জন্য বাড়তি কোনো সমবেদনা আশা করেছিলেন কি কেউ?

টাকা পরিশোধ ধরে নিয়ে আমরা আবার ডাংকিতে ফিরে যাব লেখার ২য় পর্বে… [দ্বিতীয় পর্ব]

লিখেছেনঃ তুষার শুভ্র

x
error: Content is protected !!