যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ছোটবেলায় পড়তে বসে টেবিলের উপরই ঘুমিয়ে যাবার স্মৃতি কার নেই? আর ক্লাসরুমে বসে ঘুমানোটাকে তো অনেকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যায়। আপনারাও নিশ্চয়ই এর বাহিরে নন, বই নিয়ে পড়তে বসছেন, একটু পরেই নিজেকে ঘুমে আবিষ্কার করলেন। কিন্তু কেন ?? আজকে আমরা জানবো পড়ার সময় বা পড়তে বসলে ঘুম আসে কেন ? চলুন শুরু করা যাক…
একটা বিষয়ে আপনারা নিশ্চয়ই একমত হবেন যে মূলত ইন্টেরেস্ট বা আগ্রহের অভাবের কারণে আমাদের কনসেন্ট্রেশান ব্রেক হয় বা মনযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। আর সেই মনযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণেই আমাদের ঘুম চলে আসে। খেয়াল করে দেখবেন মজার কোন গল্পের বই হলে কিন্তু ব্যাপারটা পুরো উল্টো হয়ে যায়। তখন ঘুম তো উড়ে যায়-ই সেই সাথে গল্পটা শেষ না করে ঘুমাতে যেতেও ইচ্ছে হয়না। তো সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান যেটা বলে, কোন কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে আমাদের শরীরে ডোপামিন ক্ষরন কমে যায়, তখন সেই কাজটির প্রতি আমাদের অনিচ্ছা জন্মে এবং মানসিক ক্লান্তি চলে আসে, ফলাফল মস্তিস্ক প্রশান্তির জন্য ঘুমে চলে যায়। চলুন একটু বুঝিয়ে বলি।
ডোপামিন (Dopamine) ও সেরাটোনিন (Serotonin) নামে দুটো হরমোন রয়েছে যেটা আমাদের শরীরে বিদ্যমান। আমরা যখন কোনো কাজ করি ব্রেনে এই ডোপামিন ক্ষরিত হয়। কাজটি যতটা পছন্দের সেই কাজের জন্য বেশি ডোপামিন এবং অপছন্দের কাজের জন্য অনেক কম ডোপামিন ক্ষরিত হয়। উদাহরণস্বরূপ- কেউ যদি মোবাইলে গেম খেলতে খুব পছন্দ করে তাহলে গেম খেলার সময় তার ডোপামিন ক্ষরণ বেশি হয় ফলে সে আরো আরো বেশি খেলতে চায়। কিন্তু একইভাবে যদি সে পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী বা পরীক্ষার সময় ভীত হয় সেক্ষেত্রে ডোপামিন ক্ষরণ অনেক কম হয় তাই সেই কাজটি করতে ইচ্ছাই করে না। তখন তার মানসিক ক্লান্তি ও ব্রেনের চাপের কারণে সব মিলিয়ে মস্তিস্ক একটা বিশ্রামের সময় পেতে চায় এবং ঘুম চলে আসে।
গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভার ঘুমিয়ে যায় কেন ?
শুধু পড়াশোনা ই নয়, যে কোন কাজেই একঘেয়েমি চলে এলে আমাদের ডোপামিন ক্ষরন কমে যায় এবং আমাদের ঘুম পায়। ঠিক এই কারণেই ড্রাইভিং করার সময় অনেক সময় ড্রাইভাররা ঘুমিয়ে পড়েন। কেননা একটানা গাড়ি চালাতে চালাতে একঘেয়েমি চলে আসে এবং তখন আর মনযোগ ধরে রাখা যায়না। আমি তো একটানা কম্পিউটারে কাজ করতে করতেও ঘুমিয়ে যাই।
আরও পড়ুনঃ বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা | বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ কিছু উপকারিতা
তবে সবার ক্ষেত্রে সব বই নিয়ে পড়তে বসলেই ঘুম পায়না। যার যেই বই প্রিয়, যেটা পড়তে সে ভালোবাসে সেরকম বইয়ের ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন। যেমন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা শরৎচন্দ্রের লেখা উপন্যাস/গল্প পড়তে বসলে আমার উল্টে ঘুম কেটে যায়।
আরেকটা বিষয় বলা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের সবারই বই পড়তে বসলে ঘুম পায় কারন ক্রমাগত চোখের মনি বাঁ দিক থেকে ডান দিকে যেতে থাকে বারবার (বা উল্টোটা), যা পড়ছে তার মানে বুঝতে হয় আর পড়ার বই হলে আবার ভবিষ্যতে মনে রাখার চাপ থাকে সব মিলিয়ে একঘেয়ে পরিশ্রম করতে করতে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্লান্ত মস্তিষ্কে বইয়ের সাদা কালো স্থির অক্ষর প্যাটার্ন মস্তিষ্ককে আরও অলস করে দেয়।
এছাড়া বই পড়ার সময় আমরা প্রথমে হয়তো সোজা হয়ে বসি, তারপর মস্তিষ্ক একটু ক্লান্ত হতেই আপনার থেকেই একটু আরামদায়ক পজিশনে চলে যাই। (যেমন গালে হাত দিয়ে বসি, কাছে বালিশ থাকলে কোলে টেনে নেই, খাটে বসে থাকলে উপুড় হয়ে শুয়ে যাই ইত্যাদি ইত্যাদি।) মানে শরীরকে বিশ্রাম ভঙ্গিতে নিয়ে গিয়ে মস্তিষ্ককে একঘেঁয়ে কাজ করতে বাধ্য করি। এতে মস্তিষ্ক আপসেই বিদ্রোহ করে এবং বিশ্রাম (ঘুম) নেওয়ার উপযুক্ত কাজ শুরু করে। ব্যাস আর আমরা যাবো কোথায়?? স্বয়ং মস্তিষ্ক যদি ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে বলে তাহলে জেগে থাকা যায় কি? বালিশটা আর একটু টেনে বা মাথাটা আর একটু ঝুঁকিয়ে বা চোখকে বিশ্রাম দেওয়ার অছিলায় বন্ধ করে আস্তে আস্তে ঘুমের কাছে আত্মসমর্পণ করে দেই আমরা।
আরও পড়ুনঃ ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হয় কেন? প্রেসক্রিপশন বোঝার উপায় কি
তবে ওই যে প্রথমেই বললাম কিছু কিছু বই পড়লে উল্টে ঘুম কেটে যায়। সেগুলো নেহাতই ব্যতিক্রমী কিছু হাতে গোনা বই যেগুলো আমাদের একান্তই প্রিয়। সবারই ২-৪ জন অমন প্রিয় লেখক থাকেন। যাদের লেখা পড়ার সময় আমরা ওই গল্পে একাত্ম হয়ে কোনো এক চরিত্রের সাথে সাথে ঘুরে বেড়াই বন-জঙ্গলে বা অচীন দ্বীপে অথবা সজাগ মস্তিষ্কে সমাধান করতে বসি রহস্যের অথবা নিজের প্রিয় কোনো কাজ করি মনের কল্পনায়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘুম পাওয়াটাই সত্য। আর যদি একাডেমিক বই হয়??? যেগুলো পড়তে বরাবরই অনিহা থাকে? তখন শতকরা ৯০জনের কাছেই জেগে থাকাটা অনেকটা পায়ে হেঁটে ২০কিলোমিটার ঘোরার মতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
মোটামোটি তো বুঝতে পারলাম পড়তে বসলে ঘুম আসে কেন । চলুন দেখি সেই ঘুম কমানোর উপায় কি বা কিভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া যাবে এবং অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুনঃ সিদ্ধান্তহীনতা দূর করার উপায় কি ? আমরা কেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি ?
ঘুম কমানোর উপায় কি?
পড়তে বসলে বা পড়ার সময় অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় হলো গাঢ় লিকার চা বড় এক কাপে নিয়ে বসা। এটা আমাকে হেল্প করে। চা খেলে ঘুম আসে না কারণ চা এর ভিতর থাকা ক্যাফেইন আমাদের স্নায়ুকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। অধিক সময় পড়ার ক্ষেত্রে এটা একটা ভালো উপায়, চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে। এছাড়া অন্যভাবে মস্তিস্ককে প্রেসার দেয়া ঠিক না। দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো সঠিকভাবে করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ঘুমেরও খুব দরকার।