যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
উপন্যাস: আমি পদ্মজা
লেখিকা: ইলমা বেহরোজ
“আমি পদ্মজা” একটি বড় উপন্যাস।
বই হিসেবে দুটো খণ্ডে ভাগ করে প্রকাশ করা হয়েছে।
১-৬২ পর্ব নিয়ে “পদ্মজা” নামে প্রথম খণ্ড সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
বাকি ৬৩ – ৯১ পর্ব “আমি পদ্মজা” নামে প্রকাশিত হবে ।
পাঠক পাঠিকার চাহিদা অনুযায়ী প্রথম খণ্ডের ব্ল্যাক এডিশন আনা হয়েছে।
“এই দুনিয়ায় বাঁচার দুটি পথ- চুপ থাকো, নয় প্রতিবাদ করো।
কিন্তু আমার নিয়ম বলে, সামনে চুপ থেকে আড়ালে আবর্জনাটাকে ছুঁড়ে ফেলে দাও। যাতে এই আবর্জনার প্রভাবে আর কিছু না পঁচে।” (হেমলতা)
“আমি পদ্মজা” মূলত ইলমা বেহরোজের একটা রহস্যময় উপন্যাস।
উপন্যাসে পদ্মজা, হেমলতা, মোর্শেদ মোড়ল, পূর্ণা, প্রেমা, লিখন শাহ, আমির, রিদওয়ান, মজিদ, খলিল, আলমগীর, ফরিনা, লতিফা, মৃদুল সব চরিত্রই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ।
এই উপন্যাসের সবাই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ একেকটি চরিত্র। সব চরিত্রকে বাদ দেওয়া যাবে না। মূলত লেখিকা গল্পে থাকা প্রতিটি চরিত্রকে সমানভাবে কোনো না কোনো কাজে জড়িত রেখেছেন।
যাই হোক গল্পের শুরুতে পদ্মজা জেলে থাকা অবস্থায় নিজের জীবনের কাহিনী তুষার নামক এক অফিসারকে বলে। একসাথে ৫ জনকে নির্মমভাবে হ*ত্যা করার জন্য তাকে (পদ্মজা) জেলে রাখা হয়েছিলো।
গল্পের পদ্মজা খুবই নরম, ভদ্র, লাজুক ও ধর্মানুগত ছিলো। একদিন পদ্মজার বাড়িতে হানিফের আগমন ঘটে। হানিফ ছিলো সম্পর্কে পদ্মজা সৎ মামা। হানিফকে পদ্মজা ভয় পায়। আর হেমলতা পদ্মজার কাছ থেকে সেই ভয়ের কারণ জেনে নেন। আর তার পরেরদিন পদ্মজার হানিফ মামার খু*ন হয়ে যায়।
অভিনেতা লিখন শাহ পদ্মজার গ্রামে শুটিং করতে এসে পদ্মজার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগেই এক ঝড়ে পদ্মজার জীবন পালটে যায়।
আটপাড়া গ্রামের মাতব্বর মজিদ হাওলাদারের ছেলে আমির হাওলাদার নামক ব্যক্তির সঙ্গে জুড়ে যায় পদ্মজার নাম। বিয়ের পরেই হাওলাদার বাড়িতে এসে পদ্মজা অদ্ভুত কিছু অনুভব করে। এই বাড়ির প্রতিটা মানুষকে রহস্যময় মনে হয় তার। পদ্মজার ভাবী রুম্পাকে বন্দি করে রাখা হয় এক কক্ষে। সেই রহস্য উদঘাটন করতে বেরিয়ে আসে অনেক বড় তথ্য। যেটা পদ্মজার জীবন পালটে দেয় সাথে হারিয়ে যায় অনেক মানুষ তার জীবন থেকে।
আরও পড়ুনঃ ইহুদি জাতির ইতিহাস PDF Download | আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ
কি হয়েছিলো পদ্মজার? হানিফ কিভাবে খু*ন হয়? কিভাবে আমিরের সঙ্গে বিয়ে হলো পদ্মজার? হাওলাদার বাড়ির প্রতিটা মানুষ রহস্যময় কেন? রূম্পা কি আসলেই পাগল নাকি অন্যকিছু? পূর্ণা কিভাবে মা*রা গেলো? পদ্মজা জেলে কিভাবে গেলো? কিভাবে খু*ন করেছিলো পদ্মজা? গল্পের শেষ পরিণতি কি হয়েছিলো?
কাহিনীগুলো এতো রিয়েলিস্ট লেগেছে যে আমার মনে হয়ে বাস্তবেই বোধহয় ঘটনাটি আমার চোখের সামনে ঘটেছে।
এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো হেমলতা। এই উপন্যাসের প্রাণ ছিলো এই চরিত্রটি। হেমলতা চরিত্রটাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। উনার আদর্শ, নীতি, রাগ, প্রতিশোধ, মায়া, স্বাধীনচেতনা সব মিলিয়ে একজন আদর্শ মা।
অপরদিকে পদ্মজা প্রথমে একটু লাজুক থাকলেও পরবর্তীতে তাকে অনেক কঠোর হতে হয়। কিন্তু কেন তা গল্প পড়লে বুঝতে পারবেন।
বাকি চরিত্রগুলোও ছিলো অনেক শক্ত ধরণের।
আমির হাওলাদার ছিলো এই গল্পের তৃতীয় স্থানে। সে এমন একজন প্রেমিক পুরুষ যে পদ্মজাকে ভীষণ ভালোবাসে। তার চরিত্রটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। দারুন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একটি চরিত্র ছিলো।
আরও পড়ুনঃ সুইসাইড নোট – সহিদুল ইসলাম রাজন
গল্পের কয়েকটা লাইন আমার অনেক ভালো লেগেছিলো,
১. “সারা অঙ্গ কলঙ্কে ঝলসে যাক।
তুই বন্ধু শুধু আমার থাক।”
২. “শুনো পদ্ম! কেউ আঘাত করলে কাঁদতে নেই ।কারণ মানুষ আঘাত করে কাঁদানোর জন্যই। আর যখন উদ্দেশ্য সফল হয় তখন তারা শান্তি পায়। যে আঘাত করল তাকে কেন শান্তি দিবি?”(হেমলতা)
৩. “যেদিন আপনার মনে হবে, আপনার দ্বারা আর কারো ক্ষতি হবেনা। পাপ হবেনা। সেদিন আমাকে পদ্মাবতী ডেকে জড়িয়ে ধরবেন।”(পদ্মাবতী)
৪. “আমার পাপের রাজত্বে তোমার আগমন ছিল ভূমিকম্পের মতো। যখনই দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো, আমার হৃদপিন্ড থমকে যায়।
আমাকে শেষ করার জন্য কী দ্বিতীয় কোন অ*স্ত্র ছিল না।”(আমির)
৫.”গত চারদিনের য*ন্ত্র*নার একাংশ তুমি যদি অনুভব করতে পারতে তাহলে আমার শা*স্তি মৃ*ত্যু হতো না। আমার শা*স্তি হতো আমার বেঁচে থাকা”(আমির)
৬. “আম্মা ম*রা মানুষকে বিয়া করা যায় না? আমারে বিয়া দাও আম্মা। তারপর একলগে কবর দেও আম্মা। আমি ওরে ছাড়া কেমনে থাকুম”(মৃদুল)
৭. “আমি নিষ্ঠুর,তুমি মায়াবতী। আমি ধ্বংস,তুমি সৃষ্টি। আমি পাপ, তুমি পবিত্র। এত অমিলে কেন হলো মিলন, কেন কালো অন্তরে ছড়িয়ে ছিলে ফুলের সুবাস? আমাকে ধ্বংস করার জন্য কি অন্য কোন অ*স্ত্র ছিল না।”(আমির)
৮. “তোমাকে দেখার তৃষ্ণা আমার কখনোই মিটবেনা পদ্মবতী।”(আমির)
৯. “আমি কবুল কইছি না? অর্ধেক বিয়াতো হইয়া গেছে। হইছে না? আমারেও কবর দেন, পূর্ণার লগে আমারেও কবর দেন!”(মৃদুল)
১০. ” যখন তোমার কথা ভাবি, তখন আমার শরীরের সমস্ত শিরা-উপশিরা বাজতে থাকে। আমাদের পথটা কি আর একটু দীর্ঘ হতে পারতো না।?” (আমির)
গল্পে অনেক রহস্য রয়েছে। প্রতিটা পর্বে নতুন কিছুর সন্ধানে পাওয়া যায়। বলবো না এটা সেরা উপন্যাস। তবে এটা ভিন্ন রকম। আমি কয়েকটা পর্বে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। কেঁদেছিলাম কয়েকটা লাইন পড়ে। মনোমুগ্ধকর ছিলো এক কথায়।
রিভিউ করেছেনঃ আফসানা আক্তার মিমি