যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ বউ ঠাকুরানীর হাট
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বইয়ের প্রেক্ষাপটঃ
বউ ঠাকুরানীর হাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত প্রথম উপন্যাস। ১৮৮৩ সালে উপন্যাসটি প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৯০৯ সালে এই উপন্যাসটিকে কেন্দ্র করেই রচনা করেছিলেন “প্রায়শ্চিত্ত” নাটকটি। তারপর ১৯২৯ সালে নাটকটি ভেঙ্গে পুনরায় রচনা করেন “পরিত্রাণ” নাটক। বউ ঠাকুরানীর হাট বইটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর দিদি সৌদামিনী দেবীকে উৎসর্গ করেন। উপন্যাসটি অবলম্বন করে ১৯৫৩ সালে পরিচালক নরেশ মিত্র একটি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যেখানে অভিনয় করেছিলেন রমা দেবী, পাহাড়ী সান্যাল ও উত্তম কুমার।
এটি মূলত ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে পরিচিত। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্য, তার পিতামহ রায়গড়ের রাজা বসন্ত রায়, পুত্র উদয়াদিত্য ও ভগ্নিপতি চন্দ্রদ্বীপের রাজা রামচন্দ্রের সমসাময়িক ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে।উপন্যাসটিতে একদিকে যেমন স্থান পেয়েছে রাজদরবারের জটিল জীবনধারা, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্বলের পীড়ন, যথাচ্ছাচারিতা, বংশ গৌরবের আভিজাত্য; পাশাপাশি স্থান পেয়েছে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার সম্পর্ক, ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কের অতুলনীয়তা।
আরও পড়ুনঃ পরিণীতা উপন্যাস রিভিউ PDF Download | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বইটির সারসংক্ষেপঃ
যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্য মোগল বংশের সমসাময়িক রাজা ছিলেন। প্রতাপাদিত্য ছিলেন নিষ্ঠুর,কর্কশ ও অত্যাচারী রাজা অন্যদিকে তারই উত্তরাধিকারী তার পুত্র উদয়াদিত্য ছিল কোমল হ্রদয়ের, প্রজাদের প্রতি অনুরক্ত ও দূর্বল প্রকৃতির; যার কারণে প্রতাপাদিত্য উদয়াদিত্যের প্রতি রুষ্ট ছিলেন। প্রতাপাদিত্যের পিতৃব্য রায়গড়ের রাজা বসন্ত রায় প্রজাবৎসলতার কারণে প্রতাপাদিত্য তার পিতৃব্যকে হত্যা করার জন্য লোক পাঠালে উদয়াদিত্য তার পিতামহকে রক্ষা করে যশোহরের রাজদরবারে নিয়ে আসে।
রাজদরবারে উদয়াদিত্য, তার প্রিয়তমা স্ত্রী সুরমা, স্নেহশীল বোন বিভা, আর অতি আদরের পিতামহ বসন্ত রায়ের একত্রতা দেখে রাজা প্রতাপাদিত্য ভীত ও ঈর্ষান্বিত হয়। স্নেহশীল বিভার মুখ পানে চেয়ে তার ভাই ও পিতামহ বিভার পতি চন্দ্রদ্বীপের রাজা রামচন্দ্রকে রাজদরবারের নিয়ে আসলে সামান্য এক অঘটনের কারণে রাজা প্রতাপাদিত্য রামচন্দ্রকে হত্যার আদেশ দিলে উদয়াদিত্য ও রাজদরবারের দুজন কর্মচারী ভাগবত ও সীতারামের সহায়তায় রামচন্দ্রকে পলায়ন করাতে সক্ষম হয়। রাজা ভাবে দূর্বল উদয়াদিত্য এতো সাহস হয়তো তার স্ত্রী সুরমার নিকট থেকে পেয়েছে তাই সুরমাকে বাপের বাড়ি প্রেরণের নির্দেশ দিলে সুরমা বিষ পানে আত্মহত্যা করে মারা যায়।
সুরমাকে হারানোর পর থেকে উদয়াদিত্য ও বিভা দুজনেই নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। রাজদরবারের পাশে বিধবা মঙ্গলা যার আসল নাম রুক্নিণী যে একবার রাজা উদয়াদিত্যকে বিপদগামী করেছিল এরই মধ্যে তার কুচক্রে উদয়াদিত্য ফেসে গেলে রাজা উদয়াদিত্যকে জেলে প্রেরণ করেন। জেলে থাকাকালীন তার সাথে দেখা করার একমাত্র মানুষ ছিল বিভা যে কিনা ভাইয়ের জন্য নিজের পতির পাঠানো লোককে ফিরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনঃ নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থের রুপাই চরিত্রের বাস্তব পরিচয় ও জীবনী
রাজা বসন্ত রায় সব কিছু শোনার পর যশোহরের রাজদরবারে এসে সীতারামের সহায়তায় উদয়াদিত্যকে উদ্ধার করে রায়গড়ে নিয়ে গেলে; রাজা বসন্তরায়ের মৃত্যুদন্ডের রায় দেয় তখন বসন্ত রায় দুঃখে ও কষ্টে নিজেই আত্নহুতি দেয়। উদয়াদিত্য প্রাসাদে এসে সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে কাশিতে জীবনযাপনের আকাক্ষা প্রকাশ করলে রাজা রাজি হয়।
অন্যদিকে সব ঝামেলা থেকে মুক্তহয়ে বিভা যখন চন্দ্রদ্বীপের রাজদরবারে নিকটে হাজির হয় তখন জানতে পারে রামচন্দ্র আবারও বিয়ে করছে তখন সে তার ভাইয়ের সাথে কাশীতে চলে গিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করে। চন্দ্রদ্বীপের যে হাটের সম্মুখে বিভার নৌকা লাগেছিলো, অদ্যাপি সেই হাটের নাম “বউ-ঠাকুরাণীর হাট”।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
ইতিহাসের চরম নিষ্ঠুরতা হলো ক্ষমতার লোভে নিজের পিতা বা পুত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। নিজের ক্ষমতাকে বজায় রাখতে প্রতাপাদিত্য নিজের পিতৃব্য, পুত্র ও কন্যার সাথে যে অন্যায় করেছিল তা সত্যিই ইতিহাসের কলঙ্কজনক ও নিষ্ঠুরতম অধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনচরিত | বাংলা সাহিত্যে অবদান | জীবনী
কবি পরিচিতিঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ – ১৯৪১ খ্রীঃ) ছিলেন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।
বইয়ের প্রিয় কথাঃ
*যে আমার অপকার করে সে আমার কাছে ঋণী; পরকালে যে ঋণ তাহাকে শোধ করিতে হইবে; যে আমার উপকার করে আমি তাহার কাছে ঋণী, কিন্তু কোনোকালে তাহার সে ঋণ শোধ করিতে পারিব না।
*রাত্রি বলে আমি কেহই নই, আমি যাহাকে মাথায় করিয়া রাখিয়াছি সেই চাঁদ, তাহারই সহিত আমি একত্রে হাসি, একত্রে ম্লান হইয়া যাই।
রিভিউ করেছেনঃ Munzeera Eshita
আরও পড়ুনঃ ৫টি সংক্ষিপ্ত বুক রিভিউ বাংলা | পিডিএফ বই ডাউনলোড ওয়েবসাইট