যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বইঃ বরফ গলা নদী
লেখকঃ জহির রায়হান
উপন্যাসটা পড়ার পর থেকে আজিমপুর এলাকাটায় আমি যেতে পারিনা। যতবারই যাই আমার কল্পনায় চলে আসে এই বরফ গলা নদী উপন্যাস। গল্পের অনেকটা জুড়ে রয়েছে আজিমপুর এবং এর আশেপাশের এলাকা। জহির রায়হান লেখাটা এমনভাবে চিত্রায়িত করেছেন যে, আমি এই উপন্যাসটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো মাহমুদের সাথে আমি নিজেও হাঁটছি। আজিমপুরের পথগুলো কল্পনায় ভেসে উঠছিলো।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা বলে বর্তমানের আজিমপুর চিত্র সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা আছে। কিন্তু লেখকের সময়ের আজিমপুর ভিন্ন ছিলো এবং বইটি পড়ার সময় আমি সেইসময়ের আজিমপুরের রাস্তাই কল্পনা করেছিলাম। মাথায় একবারও বর্তমানের চিত্র আসেনি। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। এবং আমি এখনো আজিমপুরের রাস্তায় হাঁটলে আমার অবচেতন মন বরফ গলা উপন্যাসের চিত্র তুলে ধরে আমাকে কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। যার কারণে আজিমপুর গেলেই আমার মনে সেই মাহমুদ চরিত্রটি জেগে উঠে এবং স্মৃতিকাতর হই। বুঝতেই পারছেন উপন্যাসটা আমাকে কতটা প্রভাবিত করেছে।
যাইহোক, ঠিক রিভিউ দিচ্ছিনা। উপন্যাসটা সম্পর্কে আমার কিছু অনুভুতি এবং এলোমেলো কিছু কথা শেয়ার করতে যাচ্ছি। আমি রিভিউ লিখতে এতোটা অভ্যস্ত না। তাই প্রত্যাশা পূরণ না হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।
আরও পড়ুনঃ শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাস রিভিউ PDF | জহির রায়হান
কাহিনী সংক্ষেপঃ
এটা আমাদের প্রত্যেকের সুখ-দুঃখের গল্প। লেখক জহির রায়হান উপন্যাসটিতে একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের চিত্র তুলে ধরেছেন। একটি ভাঙা ছাদের জীর্ণ শীর্ণ বাড়িতে তাদের বসবাস যেখানে একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ গলিয়ে পানি পড়ে ভিজিয়ে দেয় বিছানা ও বইপত্র।
পরিবারের কর্তা হাসমত আলী ও সালেহা বিবি এবং তাদের পাঁচ সন্তানের আনন্দ বেদনা সাংসারিক টানাপোড়েনের ভিতর দিয়ে গল্প এগিয়ে চলে। পরিবারের বড় সন্তান মাহমুদ, যে কিনা বড়লোকদের প্রতি রুষ্ট, এবং সৎ উপায়ে চাকরি করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টায়।
মাহমুদ একটি পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করে। তার বেতনে মোটামুটি সংসার চলে। অন্যদিকে ছোটবোন মরিয়ম টিউশনি করে, কিন্তু পরিবারকে নিয়ে আরেকটু ভালো থাকার আশায় সে একটি স্কুলের চাকরির জন্যও দৌড়াদৌড়ি করছে।
সাত সদস্যের এই পরিবার থাকে একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে যার ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, পলেস্তারা খসে পড়ছে। বাড়িওয়ালাকে বারবার বলার পরও কোন কর্ণপাত করেনা। তাই এইভাবেই চলছিলো তাদের জীবন।
একসময় মরিয়মের বিয়ে হয়, মাহমুদও মোটামুটি একটা ভালো চাকরি পায় কিন্তু সে বাড়ি আর পরিবর্তন হয় না কিংবা পরিবর্তন করার মত সামর্থ্য হয়ে উঠেনা। মধ্যবিত্ত হবার কারণে একদিন এই বাড়ি পাল্টানোর সামর্থ্য না থাকাটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুনঃ হাজার বছর ধরে PDF | উপন্যাস বই রিভিউ | সারাংশ | জহির রায়হান
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
বইটি পড়ার পর আপনার প্রচুর মন খারাপ হবে, হয়তো মাহমুদের জন্য বা পুরো পরিবারটির জন্য। উপন্যাসটি শেষ করার পর আমার চোখের মধ্যে বরফ গলার মত পানি অনুভব করতে পেরেছিলাম। বুকের মধ্যে একটা হাহকার অনুভুতি হয়েছিলো। যে অনুভুতিটা এখনো থেকে গেছে এবং আজিমপুর গেলেই সেই শূন্যতা আবার জেগে উঠে।
বইটির লেখক জহির রায়হানের নামটি শুনলেই তো আমার বুকের মাঝে একটা হাহাকার সৃষ্টি হয় বা শূন্যতা কাজ করে। আর আফসোস এমন মূল্যবান রত্নকে আমরা এতো দ্রুত কেন হারিয়ে ফেললাম। ক্ষণজন্মা এই লেখক তাঁর স্বল্প জীবনে যা দিয়ে গেছেন আশা করি বাংলার মানুষ তাকে হাজার বছর ধরে মনে রাখবে।
স্কুল জীবনে “সময়ের প্রয়োজনে” নামে একটা গল্পের মাধ্যে তাঁর সাথে পরিচয় এবং নবম শ্রেণিতে উঠে তাঁর লেখা “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসটি পড়ার সুযোগ পাই। কলেজে এসে পড়ি “একুশের গল্প”। কালজয়ী সব লেখা দিয়ে জহির রায়হান আমার হৃদয় জয় করে নিয়েছে। সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস এই “হাজার বছর ধরে” এবং তারপরেই আছে “বরফ গলা নদী”।
আরও পড়ুনঃ আরেক ফাল্গুন PDF | রিভিউ | জহির রায়হান | Arek Falgun Book Review