যেকোন বইয়ের ফ্রি পিডিএফ পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের PDF Download সেকশনটি ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বইয়ে সাজানো হচ্ছে আমাদের এই অনলাইন পাঠশালা। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বই : পদ্মানদীর মাঝি
লেখক : মানিক বন্দোপাধ্যায়
রিভিউ করেছেনঃ Fatema Tuz Zohora
পদ্মা তীরবর্তী কর্মজীবী মানুষ যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পদ্মানদী তাদের জীবন যাত্রাকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে উপন্যাস পদ্মানদীর মাঝি।
সময়ের সাথে সাথে পদ্মা কখনো থাকে ধীর-স্থির, শান্ত; আবার কখনো কখনো হয়ে ওঠে সর্বগ্রাসী। পদ্মাকে কেন্দ্র করে জীবনধারণ করা মানুষকে পদ্মা যেমন সন্তানের মত দুহাত ভরে বিলিয়ে দেয় নিজেকে, আবার সেই পদ্মাই কখনো কখনো প্রবল আক্রোশে কেড়ে নেয় সবটুকু। এই বহুরূপী পদ্মার সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর জীবনের চাহিদা খুব অল্প, আর প্রাপ্তি তার চেয়েও কম। এই রহস্যময়ী প্রমত্তা পদ্মাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে কিছু গ্রাম, যেখানের অধিকাংশ বাসিন্দাই হতদরিদ্র জেলে কিংবা মাঝি।
গভীর রাতে পুরো পৃথিবী যখন থাকে নিদ্রামগ্ন তখন এই পদ্মার বুকে ভেসে বেড়ানো জেলেনৌকার আলোতে মীনসন্তানরা হয়ে ওঠে সচকিত। তাতে অবশ্য খুব একটা লাভ হয় না। ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের ধরা দিতে হয় দক্ষ জেলেদের জালে। ইলিশের এই রূপালি ঝলকে দরিদ্র জেলে কিংবা মাঝিদের চোখ ঝলসায় না। তাদের দিন গুজরানের পয়সার যোগান দিতে মাছ ওঠে হাটে।
এই রহস্যময়ী পদ্মার তীরে মানুষের জীবনে ঘটে যায় কত কাহিনী। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত মাঝি, জেলে নিয়ে গড়ে ওঠা এরকমই এক জনপদের এক সাধারণ মাঝি কুবের। যার জীবন গ্রামের অন্যসব বাসিন্দাদের চেয়ে কিছুমাত্র ব্যতিক্রম নয়। অন্যের নৌকা বেয়ে সারারাত অমানুষিক পরিশ্রম করার পর সেও বঞ্চিত হয় তার ন্যূনতম অধিকার থেকে।
এই কুবের মাঝি উপন্যাসের মূল চরিত্র। তার অভাবক্লিষ্ট জীবন, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব, স্বাভাবিক কামনা-বাসনা প্রতিনিধিত্ব করেছে পদ্মাপাড়ের অবহেলিত কর্মজীবী মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার।
আরও পড়ুনঃ তিতাস একটি নদীর নাম PDF | বুক রিভিউ | অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচনাসমগ্র
পঙ্গু স্ত্রী মালা, সন্তানাদি আর এক পিসিকে নিয়ে কুবেরের সংসার। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হল তার উপর নির্ভর করে থাকা এই মানুষগুলোর খাদ্যের যোগান করা।
ঘরের ভাঙা চাল বা স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে বিহীন একটা ঘরই তাদের কাছে বিলাসিতাস্বরূপ। এই শুধু জৈবিক চাহিদা নির্ভর কুবেরের সাদাকালো জীবনে একসময় রঙিন প্রজাপতি হয়ে আসে তার স্ত্রী মালার বোন কপিলা।
নিজের স্ত্রীর পঙ্গুত্বই কুবেরকে টেনে নিয়ে যায় দুরন্ত কপিলার দিকে। অন্যদিকে ভালো ঘরে বিয়ে হয়েও স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত কপিলাও কুবেরের অনৈতিক অনুভূতিকে প্রশ্রয় দেয়। তবে এই আদিম আকর্ষন কোনো অস্বীকার্য সম্পর্কে রূপ নেয়ার আগেই কপিলার স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
এই কুবের-কপিলা ছাড়াও উপন্যাসের এক রহস্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হোসেন মিঞা। গ্রামের প্রভাবশালী হোসেন মিঞা সবাইকে সাহায্য করলেও তার পেছনে থাকে প্রচ্ছন্ন স্বার্থপরতা।
তার এই স্বার্থপরতার কারণ এক অদ্ভুত স্বপ্ন। এই স্বপ্ন তার মালিকানাধীন এক দ্বীপ নিয়ে- ময়নাদ্বীপ। এই দ্বীপে সে বানাতে চায় নিজের সাম্রাজ্য।
আরও পড়ুনঃ হাজার বছর ধরে PDF | উপন্যাস বই রিভিউ | সারাংশ | জহির রায়হান
এরা ছাড়াও পদ্মাপাড়ের এই বসতিতে আছে বিভিন্ন চরিত্রের মানুষ। তারা কেউ বা কুবেরের সঙ্গী গনেশের মত সহজ সরল, কেউ বা ঝড়ে সবকিছু হারানো আমিনুদ্দির মত অসহায়, কেউ বা হোসেন মিঞার ময়নাদ্বীপ থেকে পালিয়ে আসা রাসুর মত ধুরন্ধর। কারো ভেতর আছে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার প্রবল ইচ্ছা, আবার কেউ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানোর সুযোগ খোঁজে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু মানুষের জীবন কি সব সময় একই গতিতে চলে?
জীবনের চাহিদা, অনুভূতি, সম্পর্কের পরিবর্তন হয় প্রতিনিয়ত। এই পরিবর্তনের জোয়ারে কারো জীবনে আসে উন্নতির ছোঁয়া, কেউ এগিয়ে যায় স্বপ্ন পূরণের দিকে, আবার কেউ হয় সর্বহারা।
কিন্তু কুবেরের জীবনে শেষ পর্যন্ত কি হয়?
কপিলার সেই প্রেম কি শুধুই ছলনা ছিল নাকি কুবেরের অনিশ্চিত হতদরিদ্র জীবনের সঙ্গী সে সত্যিই হতে চেয়েছিল?
শেষ পর্যন্ত “আমারে নিবা মাঝি লগে?” এর উত্তরে কি কুবেরের “বাড়িত যা কপিলা” এর বদলে সম্মতিসূচক কোনো উত্তর পেয়েছিল কপিলা?
হোসেন মিঞা নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে কতদূর এগিয়েছিলো?
পাঠ প্রতিক্রিয়া
পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাস এক সময় পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় প্রথম পড়েছিলাম উপন্যাসটি। যদিও উপন্যাসের গভীরতা অনুভব করার মত বয়স তখন ছিল না।
অনেক বছর পর যখন আবার এই উপন্যাস পড়া শুরু করলাম এর প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি শব্দের মাঝে নিহিত গভীর জীবনবোধ ছুঁয়ে গিয়েছে মনকে।
“ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্রপল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না” – এই জাদুকরী এক লাইনেই লেখক বুঝিয়ে দিয়েছেন আমাদের বিশাল সমাজব্যবস্থার অসামঞ্জস্যতা, যেখানে নিম্নশ্রেণীর মানুষরা বছরের পর বছর হয়ে আসছে অবহেলিত, শোষিত।
যে নিপুন দক্ষতার সাথে লেখক পদ্মাপাড়ের অধিকার বঞ্চিত মাঝিদের জীবনযাত্রা তুলে ধরেছেন তা মূলত যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশের সকল খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষদেরই প্রতিনিধিত্ব করে।
কুবেরের সংগ্রাম, কপিলার প্রতি নিষিদ্ধ আকর্ষণ, হোসেন মিয়ার স্বপ্ন, গ্রামীন মানুষের সরলতা, জটিলতা, মনের পাপ-পঙ্কিলতা সবকিছু যা কিনা একটি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, লেখক এই প্রতিটি বিষয় এত আকর্ষণীয় এবং সাবলীল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন যা যেকোনো পাঠকের আগ্রহ শেষ অবধি ধরে রাখতে সক্ষম। উপন্যাসের সংলাপ বর্ণনায় আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ পুরো কাহিনী কে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।
আরও পড়ুনঃ পুতুল নাচের ইতিকথা রিভিউ PDF | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস সমালোচনা
বইঃ পদ্মানদীর মাঝি
লেখকঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশনাঃসূর্যোদয়
প্রথম প্রকাশকালঃ১৯৩৬ সাল
পৃষ্ঠাঃ১৫৯ টি
মুদ্রিত মূল্যঃ২০০৳
রিভিউ করেছেনঃ Rezaul Karim
~সারসংক্ষেপ~
বর্ষা এলেই ইলিশ ধরার ঢল পড়ে যায় পদ্মার বুকে। পদ্মা নদীতে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের মুখ হাসিতে ভরে ওঠে সারি সারি ইলিশ দেখে। সারারাত মাছ ধরে ভোরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে জেলেপাড়ার মানুষ।সেরকম-ই একজন কুবের।পেশাটা তার বংশনানুক্রমে পাওয়া,কুবের অবশ্য সেটা জেলেপাড়ার সবার। ধনঞ্জয়ের হয়ে কাজ করে সে আর গণেশ।নাও-টা ধনঞ্জয়ের; কুবের আর গণেশ সারারাত মাছ ধরে। বেশি খাটতে হয় তাদেরই, কিন্তু তার বদলে রোজগার খুবই সামান্য।
কুবেরের সংসারে মোটে লোক ছ’জন। তার স্ত্রী মালা পঙ্গু, এক পিসি, বড় মেয়ে গোপী আর তিন ছেলে নিয়ে তার সংসার জেলে পাড়ায়। ইলিশ মৌসুমটাই কাজের সময় জেলে পাড়ার। এসময় ঝড়-জল-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সবাই নেমে পড়ে মাছ ধরতে। একদিন সহসাই রাসু ফিরে আসে। বহু দিন আগে যাকে ময়নাদ্বীপে নিয়ে গিয়েছিল হোসেন মিয়া। তবে সে আসে একা, পালিয়ে। জানা যায় তার পরিবারের সবাই মরে গেছে। কী হয়েছিল তার সাথে?কেন সে পালিয়ে এসেছে ময়নাদ্বীপ থেকে? কীভাবেই বা তার পরিবারের সবাই মারা যায়? কী এমন আছে সেই ময়নাদ্বীপে?
অভাব যখন মাথা চাড়া দিতে শুরু করেছে তখনই কপিলার আগমন ঘটে কুবেরের জীবনে নতুন করে।কপিলা মালার বোন। কপিলার প্রতি কুবেরের আগে থেকে ভালোলাগা থাকলেও ওখানে যাওয়ার পর তা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। তা নিয়ে মালার মনে অজানা আশঙ্কার সৃষ্টি হয়। কপিলাকে বাড়ি ফিরে নিয়ে যেতে কেউ এলে নানা ছলনা করে। কপিলার বাড়ি ফিরে যেতে তীব্র অনিচ্ছা।
একদিন পদ্মার বুকে আছড়ে পড়ে কালবৈশাখী। সবকিছু তছনছ করে দেয়।জেলেপাড়ায় হাহাকার নেমে আসে।পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা জলের উপর সামান্য নাও-য়ে পদ্মার বুক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের আগমনের পথ চেয়ে সবাই পালা করে ঘাটে ভিড় করে; সবার চোখমুখে উৎকন্ঠা। চারপাশ থমথমে। সব যে ধ্বংস করে দিয়েছে কালবৈশাখী। এখন শুধু পদ্মার বুকে থাকা ব্যক্তিরাই তাদের শেষ সম্বল। আস্তে আস্তে জেলেদের আগমন ঘটে, কুবেরও ফিরে আসে।কালবৈশাখীর তান্ডবে কুবেরের ঘর এখন ধ্বংসস্তুপ। গ্রামে এত মানুষ থাকতে হোসেন মিয়া তার ঘর মেরামত করে দেয়।কুবের বুঝতে পারে না হোসেন মিয়াকে। কেন সে তার উপর এত দয়া দেখায়?
ইলিশের মৌসুম শেষ হয়।জেলে পাড়ার মানুষের ব্যস্ততা কমে,অন্য কাজের জন্য হন্যে হয়ে একেকজন একেক জায়গায় পাড়ি জমায়।কাজ না করলে, কাজের সন্ধান না পেলে খাবে কী? কুবের কোথায় কাজ না পেলে বাধ্য হয়ে হোসেন মিয়ার সাথে কাজ শুরু করে।
আরও পড়ুনঃ পিডিএফ বলতে কি বুঝায় ? এর কাজ কি ? বাংলা পিডিএফ বই ফ্রি ডাউনলোড
ময়নাদ্বীপ, হোসেন মিয়ার সাম্রাজ্য। সেখানে সে অসহায় মানুষদের নিয়ে যায় লোভ দেখিয়ে। জেলে পাড়ায় ময়নাদ্বীপকে নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। হোসেন মিয়ার ষড়যন্ত্রে কুবের চুরির দায়ে ধরা পড়ে। হোসেন মিয়া পরামর্শ দেয় ময়নাদ্বীপে যাওয়ার; যেই দ্বীপে সর্বস্ব খুইয়েছে রাসু। কুবের কী করবে ভেবে পায় না। সত্যিই কী সে সবকিছু ছেড়ে ময়নাদ্বীপে যাবে? কপিলাও কী শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে যাবে সেই অজানা দ্বীপে? কী লেখা আছে তার ভাগ্যে?
সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আপনাকে পড়তে হবে “পদ্মানদীর মাঝি”; মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস। যা আপনাকে পরিচয় করাবে জেলেদের জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-কষ্টের সাথে। মানব মনের অবাধ্য ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার সাথে।পরিচয় করাবে এমন একজন মানুষের সাথে যার প্রতিটা কাজ আপনাকে বিমূঢ় করবে। তার অসম্ভব ধূর্ততার সাথে নিজ কাজ হাসিল করার ক্ষমতা আপনাকে চুপ করতে বাধ্য করবে। মানুষ স্বার্থের জন্য কী কী করতে পারে তা উপলব্ধি করাবে।
~নামকরণ~
গল্প, কবিতা, উপন্যাস যাই হোক না কেন মূখ্য ভূমিকা পালন করে এর নাম।নামের মাধ্যমে যেমন উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু প্রকাশ পায় তেমনি পাঠকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে এই দুটোর একটির খামতি আছে বলে আমার মনে হয়নি।নামটাই বলে দেয় ভিতরের কাহিনীর খন্ডভাগ।
~পাঠপ্রতিক্রিয়া~
‘পদ্মানদীর মাঝি’ পদ্মার উপকূলে বসবাসকারী জেলেদের নিয়ে লেখা। ‘কুবের’কে কেন্দ্র করে তাদের জীবন বর্ণনা করেছেন লেখক সুনিপুণভাবে। কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া গ্রামের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা তুলে ধরা হয়েছে।
একজন পঙ্গু নারীর অসহায়ত্ব যেমন দেখানো হয়েছে তেমনি সুস্থ-সবল নারী শ্বশুরবাড়িতে কুন্ঠিত হয়ে দাসীর ন্যায় জীবনযাপনও দেখানো হয়েছে।
এক কথায় অসাধারণ একটি উপন্যাস ছিল এটি। কিন্তু আঞ্চলিকতার কারণে বহু স্থানে পড়তে অসুবিধা হয়েছে, বোঝা যেত না। এই সমস্যাটা ছাড়া পুরো উপন্যাসটা খুব তৃপ্তির সাথে পড়েছি। সত্যি অসম্ভব ভালো একটি উপন্যাস।
আরও পড়ুনঃ আমার দেখা নয়াচীন রিভিউ পিডিএফ | শেখ মুজিবুর রহমান PDF
বইঃ পদ্মানদীর মাঝি
লেখকঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
পৃষ্ঠাঃ ১১০
রেটিংঃ৫/৫
রিভিউ করেছেনঃ Rakibul Hasan
পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসের কথা বলতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে আসে কুবের, কপিলা, হোসেন মিয়া, রাসু, ধনঞ্জয়, পীতম মাঝি, মালা, গণেষ, আমিনুদ্দিদের মুখের ছবি গুলো। যেন সব কিছু জীবন্ত কারুকাজ। মানিক সাহেব এমন ভাবে শিল্পর তুলিতে এঁকেছেন এখনও ভাবলে মনে হয় যেন আমিও পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের হলেও, হোসেন মিয়া নামে চরিত্রটি কম রহস্যময় নয়। চরিত্রটি পাঠকমহলে গভীর চিন্তার খোরাগ জোগাতে সাহায্য করবে। তার চিন্তা চেতনার আধুনিকা পাঠক মহলের বর্তমান আধুনিকতাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। হোসেন মিয়ার ময়না দ্বীপের ধ্যান ধারণাও অনেক পাঠকের চিন্তার জগৎকে আঘাত করতে পারে। কুবের, কপিলার দন্দ জটিল সম্পর্ক পাঠকে নিয়ে যাবে ফ্রয়েডিয়ান ভালোবাসার জগতে। এছাড়াও কুবের স্ত্রী মালার চরিত্রটি যেন অনেকটাই নির্জীব।
কুবের কপিলার প্রতি যেমন আকর্ষণ অনুভব করেন মালা স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তার প্রতি তেমন আকর্ষণ অনুভব করে না। পাঠক মহলকে বিষয়টি বিব্রত করতে পারে। তাই তো একদিন এক অসংস্কৃত, আদিম ও নিষিদ্ধ ভালোবাসার প্রতি আকৃষ্ট কুবের কপিলাকে নিয়ে চিরকালের জন্য চলে যায় হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপে। কেতুব শুধু রেখে যায় তার পুরনো অতীত এবং পঙ্গু , অসহায় মালা ও তার সন্তান সন্ততিদের।
আরও পড়ুনঃ যে বইগুলো জীবনে একবার হলেও পড়া উচিত | ৫০০ বইয়ের তালিকা
‘হোসেন মিয়ার ‘চরিত্রের দিকে আবার ফিরে না তাকালে মনে হয় অনেক কিছু না বলায় থেকে যাবে।যদি উপন্যাসে চরিত্রটির উপস্থিত অধিক নয়, তবুও হোসেন মিয়া উপন্যাসের প্রাণ। উপন্যাসটি পাঠের জ্বালানি শক্তি।পদ্মাপাড়ের একটুকরো পৃথিবীতে হোসেন মিয়া নিজেকে দেবতা স্বরূপ দাড় করিয়েছেন। মিঠেমিঠে বুলি এবং গুছিগুছি দাড়িবিশিষ্ট এই শান্ত শিষ্ট লোকটিক গভীরে লুকিয়ে মহাস্বাপ্নিকের সত্ত্বা। আর এই স্বাপ্নিক সত্ত্বাকে সফল করতে গিয়ে একে একে আর্ত সুপর্ণ করতে হয় কেতুব পুরের অনেক বাসিন্দাকে। পারি দিতে হয় দূর্গম, রহস্য ঘেরা পথ। সেই ময়না দ্বীপেই ঘটতে আদিম সত্ত্বার নবজাগরণ।
হোসেন মিয়া এই ময়নাদ্বীপের রাজা এবং আবিষ্কারক দুই-ই। যন্ত্রের মত নিখুঁত, দেবতার মতো পারঙ্গম এবং জীন-পরীর মতো রহস্যময় হোসেন মিয়ার কথায় সায় দিলে, তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলে যে একদিন অমঙ্গল এসে তাড়া করবে তারা বুঝতে পারে। কিন্তু তাদের নিয়তিই এমন যে তারা যেন হোসেনের কথায় সায় দিতে এবং তার নির্দেশ পালন করার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছে। এভাবেই চলতে থাকে উপন্যাসের কাহিনী।
কপিলা কুবেরকে ডাকিয়া কহিল, আমাকে নিবা মাঝি লগে? হ, কপিলা চলুক সঙ্গে। এতদূর কুবের একা পারি দিতে পারিবে না!! জীবন এমনই চলার পথে সঙ্গী লাগে।কখনও বাস্তবে বা অবাস্তবে। মানুষ অশ্রয় খোঁজে, এটা মানুষের আদিম সত্ত্বা।
আরও পড়ুনঃ পদ্মার পলিদ্বীপ আবু ইসহাক PDF | Poddar Poli Dip by Abu Ishak